শুক্রবার, ১৮ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

সংসদে বাজেট আলোচনা এক ধরনের নাটক

নিজস্ব প্রতিবেদক

সংসদে বাজেট আলোচনা এক ধরনের নাটক

রেহমান সোবহান

প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেছেন, জাতীয় সংসদে বাজেট আলোচনা এক ধরনের নাটক। এমপিরা নিজেদের এলাকার প্রকল্প নিয়ে কথা বলেন। প্লাকার্ড নিয়ে সংসদে কথা বলেন। বাজেট আলোচনায় একজন এমপির জন্য গড়ে ১০ মিনিট সময় দেওয়ার কোনো মানে নেই।

গতকাল অনলাইনে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও অক্সফাম আয়োজিত যৌথ সংলাপে তিনি এ কথা বলেন।

কভিডকালে এই বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থানের জন্য কী আছে- শীর্ষক সংলাপে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। বক্তব্য দেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি, জাতীয় সংসদের সাবেক ডেপুটি স্পিকার অধ্যাপক আলী আশরাফ এমপি, সিপিডির বিশেষ ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক লায়লা আশরাফুন, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি আশিকুর রহমান, সমাজতান্ত্রিক দলের বরিশাল শাখার নেত্রী মনীষা চক্রবর্তী প্রমুখ। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান। প্রবীণ এই অর্থনীতিবিদ বলেন, সামাজিক সুরক্ষার আওতায় অভীষ্ট মানুষেরা বাদ পড়ে যাচ্ছে, অন্যরা ঢুকে পড়েছে। আর কভিডকালে নতুন গরিব বেড়েছে। নতুন গরিব ও পুরনো গরিব এই দারিদ্র্যের পরিসংখ্যান এক ধরনের ধূম্রজাল সৃষ্টি করে। মানুষ কতটা ঝুঁকিতে আছে, সেটাই বড় বিবেচ্য বিষয়। গরিব মানুষ ও দরিদ্রপ্রবণ এলাকা বিবেচনায় গরিব মানুষের জন্য বীমা সুরক্ষা নিশ্চিত করার মত দিয়েছেন বর্ষীয়ান এই অর্থনীতিবিদ। সংলাপে রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘বাজেট নাটক কি না, জানি না। একটি স্টেজ থাকে, সেখানে গিয়ে আমরা হাজির হই। বাজেট নিয়ে সংসদে আলোচনা অর্থহীন। আলোচনা করতে হয় বলেই করি। ১০ মিনিট সময় বরাদ্দ থাকলে কী হয়, একটি পয়েন্ট আলোচনা করতেই ১০ মিনিট চলে যায়। প্রান্তিক মানুষের কথা বাজেটে না এলে বাজেট অর্থহীন।’ তিনি মনে করেন, বাজেট অনেকটা আমলানির্ভর হয়ে গেছে। সাবেক ডেপুটি স্পিকার অধ্যাপক আলী আশরাফ মনে করেন, তৃণমূলের সঙ্গে আলোচনা করেই বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা উচিত। তিনি বলেন, রাশেদ খান মেনন বললেন বাজেট আমলানির্ভর হয়ে গেছে। এটি যদি হয়, তাহলে তা ভালো লক্ষণ নয়। ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সম্পর্কে বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে শুভঙ্করের ফাঁকি আছে। এগুলো হলো বরাদ্দের চেয়ে বেশি দেখানো হয়; যত টাকা পাওয়ার কথা, তা দেওয়া হয় না এবং প্রকৃত সুবিধাভোগীরা পান না। ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ পরামর্শ দেন, করোনার সময় যেসব প্রতিষ্ঠান কোনো কর্মী ছাঁটাই করবে না, তারা আড়াই শতাংশ কর ছাড় পাবে। আর যারা ১০ শতাংশ নতুন কর্মী নিয়োগ দেবে, তারা আরও কর ছাড় পাবে। সেই ব্যবস্থা করা গেলে কর্মসংস্থানে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক লায়লা আশরাফুন বলেন, মানুষের চাহিদা অনুযায়ী সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি নিতে হবে। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি আশিকুর রহমান মনে করেন, এ দেশের সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোয় শহরের গরিবদের উপেক্ষা করা হয়। সিপিডির গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান মূল প্রবন্ধে বলেন, করোনার কারণে ৬২ শতাংশ মানুষ কাজ হারিয়েছেন। পরে তাদের অনেকেই কাজ পেয়েছেন। তবে আয় কমেছে। এর পরিমাণ গড়ে ১২ শতাংশ। করোনার কারণে সেবা খাতে চাকরি কমেছে। আর কৃষিতে কর্মসংস্থান বেড়েছে ১৮ শতাংশের বেশি। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আগে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ১৬ জেলার ২ হাজার ৬০০ খানার ওপর এই জরিপ চালানো হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর