শনিবার, ১০ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

ঢাকা মেডিকেল মর্গে লাশের সারি, চেনার উপায় নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

কেউ কাঁদছেন সন্তান হারিয়ে, কেউ আহাজারি করছেন মা-বাবা হারিয়ে। বেঁচে নেই নিশ্চিত হয়েও শুধু প্রিয়জনের দেহাবশেষ ছুঁয়ে দেখতে বুক চাপড়াচ্ছেন অনেকে। লাশ পাওয়ার অপেক্ষার প্রহর কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা-ও তাদের অজানা।

এমন হৃদয়বিদারক পরিস্থিতিতে কাঁদছে রূপগঞ্জ, কাঁদছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গ। সারি সারি লাশে যেন ঠাঁই নেই মর্গে। পুড়ে অঙ্গার হওয়া একটি লাশও চেনার উপায় নেই।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সেজান জুস কারখানায় অগ্নিকান্ডের পর স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা। কারখানা থেকে লাশ বের করার সঙ্গে সঙ্গে কান্নার রোল পড়ে যায়। ভয়াবহ এ অগ্নিকান্ডে এ পর্যন্ত ৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

গতকাল মায়ের খোঁজে এক মেয়েকে হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। রূপগঞ্জের সেই ফ্যাক্টরিতে কাজ করতেন মা-মেয়ে দুজনই। মা মিনা খাতুন (৩৫), মেয়ে চম্পা আক্তার। ঢামেক মর্গে আহাজারি করতে করতে চম্পা জানান, বৃহস্পতিবার রাত থেকে মাকে কোথাও না পেয়ে মর্গে এসেছেন খোঁজ করতে। চম্পা বলেন, ‘এখানে এসে লাশগুলো দেখতেও পারিনি। জীবিত না হোক মৃত হলেও মাকে চাই।’

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় তাদের গ্রামের বাড়ি। রূপগঞ্জের গাউছিয়া নতুন বাজার এলাকায় মায়ের সঙ্গে থাকতেন চম্পা। তার বাবা মনজিল ভুঁইয়া। ঘটনার সময় তিনি নিচ তলায় ছিলেন। মা ছিলেন ওপরে। মর্গে এসে মায়ের খোঁজ না পাওয়ায় সিআইডির ফরেনসিক টিমের কাছে ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের জন্য নমুনা দিয়েছেন। এখন শুধু অপেক্ষা, কখন পাবেন মাকে। সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবের সহকারী ডিএনএ অ্যানালিস্ট নুসরাত ইয়াসমিন জানান, তারা স্বজনদের ডিএনএ নমুনা নিচ্ছেন। আর লাশের নমুনা নেওয়ার পর নমুনার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে জানাতে পারবেন কত সময়ে ম্যাচিং হতে পারে ডিএনএ প্রোফাইল।

শ্রমিক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রূপগঞ্জের ভুলতা ইউনিয়নের কর্ণগোপ এলাকায় অবস্থিত সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান সেজান জুস কারখানা। সেখানে প্রায় ৭ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করেন। করোনার কারণে প্রতিষ্ঠানের কয়েকটি ইউনিট বন্ধ রয়েছে। বৃহস্পতিবার ওই কারখানায় আগুন লাগে বিকাল ৫টার দিকে। কারখানাটি ছয় তলা ভবনে।

আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর গতকাল বিকাল পর্যন্ত একে একে পাঁচটি অ্যাম্বুলেন্সে লাশ আনা হয় ঢামেক মর্গে। পুলিশি পাহারায় আনা লাশগুলোর সব কটিই ছিল পোড়া। ঢামেকসূত্র জানান, ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন নয়জন। এর মধ্যে মারা গেছেন মোরসালিন (২৮) নামে একজন। আর চিকিৎসা নিয়ে ফিরে গেছেন বারেক (৪৮), নাহিদ (২৪), মঞ্জুরুল (২৮), আহাদ (৩৮), লিটন (৪৪)। এ ছাড়া এখনো চিকিৎসাধীন তিনজন হলেন হালিমা (১৩), মাজেদা (২৮) ও আমেনা (৪০)।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর