বৃহস্পতিবার, ১৫ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

বন্ধ হচ্ছে ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বেতার সম্প্রচার

ব্যাপকভাবে আসছে অনলাইন ও ডিজিটাল মাধ্যম, শনিবারই বাংলায় শেষ সম্প্রচার

নিজস্ব প্রতিবেদক

দীর্ঘ ৬৩ বছরের পথচলা শেষে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ভয়েস অব আমেরিকার (ভিওএ) বাংলা বিভাগের বেতার সম্প্রচার কার্যক্রম। তবে ব্যাপকভাবে নতুন পরিসরে আসছে অনলাইন ও ডিজিটাল মাধ্যম। যাতে গুরুত্ব দেওয়া হবে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের খবরাখবর। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমান বিশ্ববাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে টেলিভিশন ও সামাজিক মাধ্যমেও ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগ জোরদারভাবে থাকবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর টেলিভিশন বাজারে এলেও তখন বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যম বলতে সবাই বেতারকেই চিনত, বেতারই শুনত। পাকিস্তান শাসনামলে ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারির পর তখনকার পরিস্থিতির আলোকে বাংলায় সংবাদ ও অনুষ্ঠান প্রচার শুরু করে ভয়েস অব আমেরিকা। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরা রাজ্যের বাংলাভাষীরাও এর শ্রোতা ছিলেন। ১৭ জুলাইয়ের পর আর বেতারে ভিওএর বাংলা সম্প্রচার শোনা যাবে না বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় এই আন্তর্জাতিক সম্প্রচার মাধ্যম। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ভয়েস অব আমেরিকার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বেতারে শ্রোতাগোষ্ঠীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় এবং টেলিভিশন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দর্শক-অনুসারীর সংখ্যা বাড়ায় তারা বাংলা এফএম ও শর্টওয়েভে বেতার সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সঙ্গে তারা টেলিভিশন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলা দর্শক-শ্রোতাগোষ্ঠীর জন্য নতুন অনুষ্ঠান প্রচার বাড়াবে। ভিওএর অনুষ্ঠান বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জন লিপম্যান বলেন, ‘১৯৫৮ সালে ভয়েস অব আমেরিকা যখন বাংলায় সম্প্রচার কার্যক্রম শুরু করে, তখন ‘পূর্ব পাকিস্তান’ হিসেবে পরিচিত ভূখন্ডটি সামরিক শাসনের অধীনে ছিল এবং কোনো বেসরকারি টেলিভিশন বা বেতার ছিল না সেখানে। ভিওএর স্বল্প তরঙ্গ বেতার সম্প্রচার সেখানকার বাংলাভাষী জনগণের জন্য স্বতন্ত্র উৎস থেকে সংবাদ ও তথ্য পাওয়ার একটি ‘লাইফলাইন’ হিসেবে কাজ করেছে।’ বর্তমানে ভিওএর শর্টওয়েভ সার্ভিসের শ্রোতা এক শতাংশেরও কম, অথচ ভিওএ বাংলা সোশ্যাল মিডিয়ার দর্শক-শ্রোতা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। গত বছর ভিওএর বাংলা টুইটার অ্যাকাউন্টে ব্যবহারকারীদের সংযোগ বেড়েছে ৫৪ শতাংশ, আর একই সময়ে ইনস্টাগ্রামে ভিডিওর দর্শক বেড়েছে ২৭৪ শতাংশ। লিপম্যান বলেন, ‘বাংলাদেশে টেলিভিশন এবং অনলাইনে সংবাদের জন্য দর্শক-শ্রোতার চাহিদা বাড়ায় ভিওএর বাংলা সার্ভিসের অনুষ্ঠানমালা ওইসব মঞ্চেই বেশি দরকার, যেখানে দর্শক-শ্রোতা সবচেয়ে বেশি সক্রিয়।’

জুনে বিভাগীয় কর্মীদের এক সভায় ভিওএ বাংলা সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শতরূপা বড়ুয়া বলেন, ‘যে সময় বেতারই ছিল সংবাদ পাওয়ার মুখ্য উৎস, সে সময় থেকেই ভিওএ বাংলা রেডিও সম্প্রচার বিশ্বের বিভিন্ন ঘটনা তার শ্রোতামন্ডলীর কাছে পৌঁছে দিয়েছে। আমাদের বেড়ে ওঠার সময় একটি বড় অংশজুড়ে ছিল এই বেতার সম্প্রচার, ঘরে ঘরে সুপরিচিত ছিল ভিওএ। এই পরিচিতির ধারাবাহিকতা ধরে রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এখনকার দিনে শর্টওয়েভ ও মিডিয়াম ওয়েভ রেডিওর তুলনায় যেসব মাধ্যমে দর্শক-শ্রোতা বেশি সক্রিয়, সেখানে উপস্থিতি আরও বাড়িয়ে তুলব আমরা।’ সম্প্রচারের শেষ দিনগুলোতে ভিওএর বাংলা সার্ভিস অতীতের জনপ্রিয় অনুষ্ঠানমালা পুনঃপ্রচার করবে এবং এর মধ্য দিয়ে ১৯৫৮ থেকে বর্তমান পর্যন্ত এই বেতার সম্প্রচার কীভাবে বিবর্তিত হয়েছে তা তুলে ধরা হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। তবে এই পরিবর্তনের কারণে ‘লাইফলাইন’ নামের বেতার অনুষ্ঠানের সম্প্রচার বন্ধ হচ্ছে না। বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য রোহিঙ্গা ভাষায় প্রচারিত ৩০ মিনিটের এই বেতার অনুষ্ঠান চালু থাকবে, যা শুরু হয়েছে ২০১৯ সালের জুলাই থেকে। ভয়েস অব আমেরিকা (ভিওএ) প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪২ সালে। যে সব দেশে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা নেই বা জনগণ সীমিত সংবাদ পায়, তাদের কাছে ভিওএ ৪০টিরও বেশি ভাষায় খবর প্রচার করে বলে এর ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর