সোমবার, ১৯ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা
বেতনের জন্য বিক্ষোভ সংঘর্ষ

পোশাককর্মীদের ওপর সাউন্ড গ্রেনেড গ্যাস

গাজীপুর প্রতিনিধি

গাজীপুরে বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে লাগাতার কর্মবিরতি, বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধের ১২তম দিনে গতকাল পুলিশ পোশাককর্মীদের ওপর ২০ রাউন্ড টিয়ার শেল ও ১৬ রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়েছে। এ সময় শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। এতে পুলিশসহ অন্তত ছয়জন আহত হয়েছেন। ঘটনা সম্পর্কে গাজীপুর শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর সমীর চন্দ্র সূত্রধর বলেন, গাজীপুর মহানগরীর বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) সামনে লক্ষ্মীপুরা  এলাকাস্থিত স্টাইল ক্র্যাফ্ট পোশাক কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বকেয়া বেতন ভাতাসহ গত তিন বছরের বকেয়া পাওনাদি পরিশোধের দাবিতে ৬ জুলাই থেকে লাগাতার কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করে আসছেন। এ ছাড়াও কয়েকদিন ধরে তারা প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কারখানার সামনে ঢাকা-গাজীপুর সড়ক অবরোধ করে আসছিলেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাওনাদি পরিশোধের একাধিক তারিখ ঘোষণা করলেও তা পরিশোধ করেননি কর্তৃপক্ষ। এতে ক্ষুব্ধ হয় কারখানার কর্মকর্তা কর্মচারীরা। গত কয়েকদিনের মতো গতকাল সকালে তারা কারখানার গেটে এসে জড়ো হয়ে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে সকাল পৌনে ৯টার দিকে তারা কারখানার সামনে ঢাকা-গাজীপুর সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এতে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং সড়কের উভয় দিকে অ্যাম্বুলেন্সসহ শতাধিক যানবাহন আটকা পড়ে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অবরোধকারীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও তারা অবরোধ প্রত্যাহার করেননি। বিকাল পর্যন্ত কারখানা কর্তৃপক্ষের সাড়া না পেয়ে আন্দোলনরতরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।

শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর ইসলাম হোসেন বলেন, প্রায় ৮ ঘণ্টা সড়ক অবরোধের পর বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে আন্দোলনরত গার্মেন্টকর্মীরা ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধের জন্য চান্দনা চৌরাস্তা মোড়ের উদ্দেশে মিছিল নিয়ে রওনা হয়। এ সময় পুলিশ তাদের বাধা দিলে আন্দোলনরত গার্মেন্টকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছুড়তে থাকেন। এতে পুলিশের কনস্টেবল সাদিকুলসহ কয়েকজন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ করলে আন্দোলনরতদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এতে আতংক ছড়িয়ে পড়লে লোকজন দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করে। একপর্যায়ে পুলিশ ২০ রাউন্ড টিয়ার শেল ও ১৬ রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। এরপর সাড়ে ৫টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। আন্দোলনরতরা জানান, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চলতি বছরের মার্চ, মে ও জুন মাসসহ গত সেপ্টেম্বর মাসের সব বেতন-ভাতাসহ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর, ২০২০ সালের মার্চ ও আগস্ট মাসের শতকরা ৫০ ভাগ, অক্টোবর মাসের ৩৫ ভাগ, নভেম্বর মাসের ১৫ ভাগ বেতন পাওনা রয়েছে। এ ছাড়াও কারখানার কর্মচারীরা ইনক্রিমেন্টসহ তাদের চার বছরের বাৎসরিক ছুটির ও ২ বছরের ঈদ বোনাসের টাকা পাওনা রয়েছে। তারা বেশ কিছুদিন ধরে এসব পাওনাদি পরিশোধের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কারখানা কর্তৃপক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাওনাদি পরিশোধের একাধিকবার তারিখ ঘোষণা করলেও পরিশোধ করেননি।

জিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার জাকির হাসান জানান, শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন পরিশোধের ব্যাপারে ঢাকায় বিজিএমইএ’র সঙ্গে কারখানা কর্তৃপক্ষ আলোচনা করছে। অল্প সময়ের মধ্যেই এ সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় কারখানায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর