মঙ্গলবার, ২০ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

ঝুঁকি নিয়েই বাড়ি ফেরা

রাজধানীসহ সড়ক-মহাসড়কে তীব্র যানজট, ট্রাক-পিকআপেও ঘরমুখো মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঝুঁকি নিয়েই বাড়ি ফেরা

বাড়িতে যেতেই হবে। ঝুঁকি নিয়ে গতকাল ট্রেনে উঠেন যাত্রীরা -জয়ীতা রায়

ঈদ সামনে রেখে লঞ্চে, ট্রেনে ও বাসে নাড়ির টানে ফিরছে ঘরমুখো মানুষ। কাক্সিক্ষত বাহন না পেয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খোলা ট্রাক, পিকআপ ভ্যান, পণ্যবাহী ট্রাকেও ঠাসাঠাসি করে বাড়িতে ফিরতে দেখা গেছে বহু মানুষকে, যাদের অধিকাংশই নিম্ন আয়ের। আবার নৌপথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফিটনেসবিহীন ও মালবাহী ট্রলারেও যাচ্ছে মানুষ। কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা দেখা যায়নি। অনেক বাসে দুই সিটে এক যাত্রী বহনের পরিবর্তে সব সিটেই ছিল যাত্রী। এর ওপর দাঁড়িয়ে থাকতেও দেখা যায়। ঘাটে ও টার্মিনালে অসংখ্য যাত্রী দেখা গেছে, যাদের মুখে মাস্ক ছিল না। আবার যাদের মুখে মাস্ক ছিল তাদেরও অর্ধেকের বেশি সংখ্যকের ছিল থুতনির নিচে সাঁটানো। এ অবস্থায় করোনার ভয়াবহ বিস্তারের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ঢাকা থেকে বের হওয়ার মুখে হোঁচট খাচ্ছে বাহনগুলো। আবদুল্লাহপুর, গাবতলীর আমিনবাজার, যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া, পুরান ঢাকার বাবুবাজার ও নারায়ণগঞ্জের শিমরাইল মোড়ে মারাত্মক যানজটের কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ঘরমুখো মানুষকে।

লঞ্চ : সকালের দিকে সদরঘাট টার্মিনালে উপচে পড়া ভিড় না থাকলেও বিকাল থেকে শুরু হয় জনস্রোত। ঢাকা নদীবন্দর থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ছোট-বড় ৪২টি লঞ্চ বোঝাই করে ছাড়া হয়। লঞ্চগুলোর ডেকে ও কেবিন পরিপূর্ণ হওয়ার পর ছাদেও ছিল যাত্রী।

সদরঘাট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা ও যাত্রীসেবার জন্য তৎপর স্বেচ্ছাসেবীরা। পুলিশ ও র‌্যাবের টিম নজরদারি করছে। মাইকিং করে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রীদের লঞ্চে তোলার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সকালে পুলিশের উপস্থিতি কম থাকায় দেখা যায়, লঞ্চঘাটে অপেক্ষমাণ অনেকেই মুখে মাস্ক না পরে লঞ্চে ওঠেন। বিকালের দিকে বরিশাল, বরগুনা, ভোলা, পিরোজপুর, ঝালকাঠিসহ দক্ষিণের লঞ্চগুলো ছাড়া শুরু হলে ঘাট থেকে যেন স্বাস্থ্যবিধি উধাও হয়ে যায়। বহু যাত্রী মাস্কও পরেননি। চাঁদপুরে ঈগল লঞ্চের যাত্রী শাহাদাতের কাছে মাস্ক না পরার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘মাস্ক পরলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। তাই খুলে পকেটে রেখেছি।’

ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম-পরিচালক জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আমরা ঘাটে মাস্ক ছাড়া প্রবেশ করতে দিইনি। লঞ্চেও যাতে সবাই মাস্ক পরে থাকে তা নজরদারি করছে মোবাইল কোর্ট। ছাদে যাত্রী নেওয়ায় কয়েকটি লঞ্চকে জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া মাস্ক না পরায় জরিমানা করা হয়েছে কয়েকজন যাত্রীকে।

ট্রেন : ‘দুই সিটে এক যাত্রী’ নিয়ে চলবে ট্রেন- এই নিয়ম মানার কথা থাকলেও ঈদ আসতেই যেন সব উধাও হয়ে গেছে। কমলাপুরে টিকিট হাতে মাস্ক ছাড়া যাত্রী প্রবেশ করতে দিচ্ছে না টার্মিনাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তেজগাঁও, বিমানবন্দর ও টঙ্গী স্টেশন থেকে এত যাত্রী ট্রেনে ওঠেন যে, দাঁড়ানোর জায়গা পর্যন্ত থাকে না। ট্রেনের গার্ডরা এসি বগিগুলোতে অতিরিক্ত যাত্রী উঠতে না দিলেও সাধারণ বগিগুলোর পরিস্থিতি ছিল নিয়ন্ত্রণের বাইরে। বিমানবন্দর স্টেশনে গতকাল সকাল থেকে হাজার হাজার যাত্রী কাক্সিক্ষত ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়।  ফলে সেখানে স্বাস্থ্যবিধি বলে কিছুই ছিল না। কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার মাসুদ সরোয়ার বলেন, ‘আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। কমলাপুরে অতিরিক্ত যাত্রী না থাকলেও মাঝপথে ওঠা যাত্রীদের নিয়ন্ত্রণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।’

বাস : বাস টার্মিনালগুলোতে সকাল থেকেই ভিড় লেগে ছিল। গাবতলী থেকে ছেড়ে যাওয়া দূরপাল্লার বাসগুলোর শিডিউল বিপর্যয় গতকালও কাটেনি। অনেক রুটের বাসই ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা পরে ছেড়েছে। কুড়িগ্রামের নাবিল পরিবহনের যাত্রী তামজিদ জানান, রবিবার রাত ১০টায় যে গাড়ি ছাড়ার কথা সেটি ছেড়েছে সোমবার (গতকাল) বেলা ১১টায়। তবে কাউন্টারে কর্তব্যরত ব্যক্তিরা জানান, বিকল্প গাড়ি দিয়ে তারা ট্রিপ দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

সায়েদাবাদ টার্মিনালেও গতকাল ছিল উপচে পড়া ভিড়। বাসগুলো টার্মিনাল থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ছেড়ে গেলেও মাঝপথে আবার যাত্রী তোলে। এ নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে বচসা হয়। চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন রুটের যাত্রীরা মাঝপথে যাত্রী তোলার অভিযোগ করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সায়েদাবাদ বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম বলেন, ‘আমরা টার্মিনালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাসে যাত্রী তুলছি। সোমবার যাত্রীর চাপ বেড়েছে। বিআরটিএ চেয়ারম্যান ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা টার্মিনাল পরিদর্শন করেছেন।’ মাঝপথে যাত্রী তোলা সম্পর্কে আবুল কালাম বলেন, ‘আমরা এ রকম দু-একটি অভিযোগ পেয়ে সংশ্লিষ্ট বাসচালক ও হেলপারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছি।’ সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ থাকলে মালিক সমিতিকে জানানোর অনুরোধ করেন তিনি। সায়েদাবাদের মতো মহাখালীতেও যাত্রীর উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। মহাখালীতে এনা পরিবহনের বাসচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বনানী থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত যেতে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা সময় লেগে যায়। বিমানবন্দর, আব্দুল্লাহপুর, টঙ্গী স্টেশন রোড, চেরাগ আলী প্রতিটি পয়েন্টে গাড়ি নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। এতে সারা দিনে দুটির বেশি ট্রিপ দেওয়া যাচ্ছে না।’

অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে আমিনবাজার ব্রিজ, বাবুবাজার, যাত্রাবাড়ী ও শিমরাইল মোড়েও ব্যাপক যানজট দেখা যায়। ঢাকার প্রবেশ ও বহির্গমনমুখে যানজটের কারণে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

কোম্পানীগঞ্জে দীর্ঘ যানজট : কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ বাজার এলাকায় কয়েক কিলোমিটার ধরে যানজট লেগেই থাকছে। সড়কের ওপর যেখানে-সেখানে সিএনজি অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও বাস পার্ক করা। রাস্তায় বসেছে হাট। সব মিলিয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে কোম্পানীগঞ্জ এলাকায়। মিরপুর হাইওয়ে পুলিশফাঁড়ির ইনচার্জ মৃদুল কান্তি কুরী বলেন, সড়কে এলোপাতাড়ি পরিবহন রাখায় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।

গাজীপুরে সব স্থবির : গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, ঘরমুখো মানুষের ভিড়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে চরম দুর্ভোগ দেখা যায়। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার এলাকায় যানবাহনের চাপ বেশি থাকায় ধীরগতিতে গাড়ি চলছে। সড়ক উন্নয়নে বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলমান এবং বিভিন্ন জায়গায় ভাঙাচোরা থাকার কারণে দুর্ভোগে রয়েছেন যাত্রী ও পরিবহন চালকরা। চান্দনা চৌরাস্তা থেকে ঢাকা বাইপাস মোড়, টঙ্গী স্টেশন রোড থেকে টঙ্গী বাজার পর্যন্ত এবং গাজীপুরা, বোর্ডবাজার, চেরাগ আলী মার্কেট, বড়বাড়ী, কুনিয়া, কলেজ গেটসহ বিভিন্ন স্থানে যানবাহন চলছে থেমে থেমে। এসব এলাকায় মাঝেমধ্যেই যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। মহাসড়কে অন্যান্য যানবাহনের পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক গরুবোঝাই ট্রাক এবং নির্মাণকাজ চলমান থাকায় যানজট বাড়ছে। দুপুরের পর বেশ কিছু কারখানা ছুটি হওয়ার কারণে শ্রমিক-কর্মচারীরা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ছুটে চলেছেন গ্রামের উদ্দেশে। রাস্তার দুই পাশে ঘরমুখো মানুষের ভিড় বাড়ছে। জিএমপি ট্রাফিক বিভাগের ডিসি আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, দুপুরের পর বেশ কিছু পোশাক কারখানা ছুটি হওয়ার পর থেকে মহাসড়কে ঘরমুখো মানুষ ও যানবাহনের ভিড় বেড়েছে। দীর্ঘ যানজট না হলেও যানবাহন চলছে ধীরগতিতে। সব শিল্পপ্রতিষ্ঠান ছুটি হলে যাত্রীদের চাপ আরও বাড়বে।

পাটুরিয়ায় প্রাইভেটকারের চাপ বেশি : পাটুরিয়া ঘাটে যাত্রীবাহী বাসের চাপ কম থাকলেও প্রাইভেটকারের চাপ বেশি। এ ছাড়া ফেরি ও লঞ্চগুলোতে খুব কমই স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা গেছে।

মুন্সীগঞ্জে ফেরিতে পার হচ্ছে মানুষ : মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, মাওয়া-শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ঘাটে যাত্রীর চাপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। প্রতিটি ফেরিতে হাজার হাজার মানুষ পার হচ্ছে। তীব্র স্রোতের কারণে ফেরিগুলো সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না। লঞ্চগুলোও অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে পার হচ্ছে। যাত্রীদের অনেককে মাস্ক না পরে ফেরি পার হতে দেখা গেছে।

শেষ কর্মদিবসে রাজধানী ছিল ভয়াবহ যানজটে বেসামাল : পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটির শেষ কর্মদিবসে গতকাল রাজধানী ঢাকায় ছিল ভয়াবহ যানজট। ফলে নগরবাসীসহ ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে ঈদের ঘরমুখী মানুষকে। অফিসগামী মানুষেরও ভোগান্তি ছিল চরমে। অনেকে যানজটের ভোগান্তি সহ্য করতে না পেরে হেঁটে বা অলি-গলি দিয়ে রিকশায় অফিসে গেছেন এবং ফিরেছেন। অল্প সময়ের পথ পাড়ি দিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লেগেছে।

ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-মানিকগঞ্জ, ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট রুটে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোর থেকে চলা এ যানজট রাত অবধি পর্যন্ত ছিল। ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডের ভয়াবহ যানজট এতটাই প্রকট ছিল যে, অনেকে গন্তব্যে যেতে না পেরে বাসায় ফিরে গেছেন। তবে ঢাকা-মাওয়া রোডের চিত্র ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াতকারী ঘরমুখী মানুষ খুব সহজেই এই রাস্তা দিয়ে বাড়িতে ফিরেছেন।

আজগর নামে এক যাত্রী জানান, তিনি উত্তরার রাজলক্ষী যাওয়ার জন্য সকাল ১০টায় যাত্রাবাড়ীর ধোলাইরপাড় থেকে রাইদা পরিবহনে উঠেন। পথে পথে ছোট যানজট থাকলেও নতুনবাজার পার হওয়ার পর দীর্ঘ যানজটে পড়তে হয়। বেলা ২টায় তিনি কুড়িল বিশ্বরোডে আসেন। গন্তব্যে যেতে একপর্যায়ে তিনি গাড়ি থেকে নেমে হাঁটতে শুরু করেন।

রাশেদ নামে এক যাত্রী বলেন, উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টর থেকে ভাটারা এলাকার অফিসে আসার জন্য নিয়মিত সময়ই বাসা থেকে বের হই। বেলা ২টায় বের হয়ে গাড়ি পাইনি। একদিকে প্রচন্ড যানজট, অন্যদিকে হাজার হাজার যাত্রীর চাপ। পরে বিমানবন্দর পর্যন্ত হেঁটে আসি। অন্য সময়ের তুলনায় প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় বেশি লেগেছে।

ঢাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে যানজটের চেহারা ছিল প্রায় একই। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে সে চিত্র ওঠে আসে। আমাদের টঙ্গী (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানান, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে তীব্র যানজটের কারণে চরম ভোগান্তি দেখা দিয়েছে জনমনে। উত্তরার অবদুল্লাহপুর থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ২০-২৫ মিনিটের রাস্তা পার হতে সময় লাগে কয়েক ঘন্টা। বৃষ্টির পানিতে বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে থেমে থেমে চলছে দূরপাল্লার গাড়ি। এতে করে মহাসড়কে দেখা দেয় তীব্র যানজট।

গাজীপুরের যানজট ঢাকায় গিয়ে অবস্থান নেয়। ঈদকে সামনে রেখে সড়কে গাড়ির চাপও বাড়ে। ঘরমুখো মানুষ গাড়ির জন্য বিভিন্ন স্থানে অপেক্ষা করেছেন। বাস-ট্রাক বিভিন্ন উপায়ে বাড়ি ফেরার উদ্যোগ নেন। সড়ক ও মহাসড়কে গাড়ির চাপ, বৃষ্টির পানিতে খানাখন্দ এবং বিভিন্ন স্থানে গাড়ি থেমে যাত্রী উঠানোর ফলে যানজট দেখা দিয়েছে।

কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানান, কালিয়াকৈরের চন্দ্রা এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহনের ধীরগতি ছিল। চন্দ্রা এলাকাকে ঘিরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক কালিয়াকৈর-নবীনগর সড়কে যানবাহনে ধীরগতি থাকায় যাত্রীদের ভোগান্তি ছিল বেশি। গার্মেন্টে ছুটি হওয়ার পর যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় ছিল লক্ষণীয়। ঘরমুখী মানুষ গণপরিবহন ছাড়াও বিভিন্ন যানবাহনে বাড়ি ফিরছেন।

সালনা হাইওয়ে পুলিশের ওসি মীর গোলাম ফারুক জানান, এডিশনাল ডিআইজি মিজানুর রহমান ও হাইওয়ে পুলিশ সুপার আলী আহমদের নির্দেশনায় আমরা গতকাল সকাল থেকেই যানজট নিরসনে কাজ করেছি। যাতে ঘরমুখী মানুষ নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারে।

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে যাত্রীর চাপ বেড়েছে। তবে যানবাহনের তেমন কোনো চাপ নেই। দূরপাল্লার বাসের যাত্রীরা সহজেই ফেরিতে পার হয়ে যাচ্ছেন। তবে লোকাল সাধারণ যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। গতকাল সকালের দিকে যানবাহন ও যাত্রীর চাপ ছিল না। বেলা বাড়ার সঙ্গে যাত্রীদের চাপ বাড়তে থাকে। বৃষ্টির কারণে যাত্রীরা চরম ভোগান্তির শিকার হন।

কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, শত মাইল পাড়ি দিয়ে বাড়ির খুব কাছে এসে পড়তে হচ্ছে যানজটে। ভোর থেকে দফায় দফায় সৃষ্টি হয় যানজট। প্রতিদিনের এই যানজটের কারণে দুর্ভোগে পড়ছেন সর্বসাধারণ। কেউ সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারছে না। কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ বাজার। এই এলাকায় প্রতিদিন সৃষ্টি হচ্ছে কয়েক কিলোমিটার যানজট।

গতকাল কোম্পানীগঞ্জ বাজারে দেখা গেছে, স্ট্যান্ড ছেড়ে রোডের ওপর যেখানে সেখানে সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও বাস পার্কিং করা হয়েছে। রোডের ওপর জনতা, ফারজানা ও সুগন্ধা বাসের জায়গা দখল নিয়ে চলছে ষাঁড়ের লড়াই। এ ছাড়া রয়েছে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশার এলোমেলো বিচরণ ও কর্দমাক্ত রাস্তা। এখানে  বাসস্ট্যান্ড আছে, তবে এর ব্যবহার নেই।

গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ঈদে ঘরমুখী মানুষের ভিড় ছিল। কয়েক দিনের চেয়ে গতকাল ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার এলাকায় যানবাহনের চাপ বেশি থাকায় ধীরগতিতে গাড়ি চলেছে। সড়ক উন্নয়নে বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলমান এবং বিভিন্ন জায়গায় ভাঙাচোরা থাকার কারণে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রী ও পরিবহন চালকরা।

চান্দনা চৌরাস্তা থেকে ঢাকা বাইপাস মোড়, টঙ্গী স্টেশন রোড থেকে টঙ্গী বাজার পর্যন্ত এবং গাজীপুরা, বোর্ডবাজার, চেরাগআলি মার্কেট, বড়বাড়ি, কুনিয়া, কলেজ গেটসহ বিভিন্ন স্থানে থেমে থেমে যানবাহন চলায় যানজটের সৃষ্টি হয়। মহাসড়কে অন্যান্য যানবাহনের পাশাপাশি গরু বোঝাই ট্রাক এবং নির্মাণকাজ চলমান থাকায় যানজট বেড়েছে। দুপুরের পর বেশ কিছু কারখানা ছুটি হওয়ার কারণে কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গ্রামের উদ্দেশে ছুটে চলায় যানজট তীব্র হয়।

অপরদিকে উত্তরবঙ্গের প্রবেশমুখ কালিয়াকৈরর চন্দ্রা এলাকায় সকাল থেকে ভিড় দেখা গেছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড় ঘিরেও ছিল যানবাহনের বেশি চাপ। যানবাহনে বেশি ভাড়া আদায় ও পর্যাপ্ত যানবাহনের অভাবে লোকজনদের দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। অনেকেই ট্রাক-পিকআপ ভ্যানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করেছেন। চলাচলকারী লোকজনের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মানার লক্ষণ ছিল না বললেই চলে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর