দেশের চাষাভুষা, কৃষান-কৃষানি, গরিব, দরিদ্র ও বিত্তহীন মানুষের কল্যাণই ইতিহাসের প্রবাদপুরুষ, স্বাধীনতার মহানায়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অর্থনৈতিক দর্শন-এমনটাই মনে করেন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। বঙ্গবন্ধুর প্রাক্তন এই একান্ত সচিব বলেন, বঙ্গবন্ধু মনে করতেন, মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। তাই বঙ্গবন্ধু শিল্পায়নের জন্য কুটির শিল্প ও পল্লী বিদ্যুতায়নে জোর দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু কখনোই রাজনীতিকে অর্থনীতি থেকে আলাদা করেননি। তিনি সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব দিয়েছিলেন কৃষি খাতকে। বর্তমান প্রজন্ম হয়তো জানেই না যে, বঙ্গবন্ধু কৃষিঋণের ১০ লাখ সার্টিফিকেট মামলা প্রত্যাহার করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে দেশে কোনো দুর্নীতি ছিল না। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। তিনি বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শন হলো, তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের নিয়ে। বঙ্গবন্ধু আমাকে বলেছিলেন, এ দেশের গরিব মানুষ আমার বন্ধু। আমি গরিব দেশের প্রধানমন্ত্রী। আমার দরজা সবার জন্য খোলা। সব রকমের লোক আমার কাছে আসবে। যারা বড়লোক কিংবা মধ্যবিত্ত তাদের তুই ঠেকাস বা না ঠেকাস, তাদের কাজ তারা করিয়ে নেবে। কিন্তু আমার কাছে যারা গাঁও-গেরামের কৃষান-কৃষানি, শ্রমজীবী, গরিব-দুঃখী ও অশিক্ষিত মানুষ আসবে, তাদের ঠেকাস না। এসব মানুষের যাওয়ার জায়গা শুধু শেখ মুজিবের কাছে। তাদের আমার কাছে আসতে দিবি। এমনকি যদি তোর শক্তিতে কুলায়, তাদের কাজ করে দিবি। বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শন ওখানেই। এর মানে বঙ্গবন্ধুর দর্শন ছিল, সব মানুষের বিশেষত গরিব ও বঞ্চিত মানুষের সমস্যার সমাধান করা, তাদের রুটি-রুজি, শিক্ষা, বাসস্থান ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। অন্য কথায়, এসব মানুষের দারিদ্র্য, বঞ্চনা, শোষণ, অশিক্ষা-কুশিক্ষা, গৃহহীনতাসহ নানা প্রতিকূলতা লাঘব করে একটি সোনার বাংলা গড়ে তোলা। বঙ্গবন্ধুর এই দর্শন আমার মর্মমূলে গেঁথে যায়। আজও তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করার চেষ্টা করেছি। মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের উপহার দিয়েছিলেন স্বাধীন দেশ ও অর্থনৈতিক মুক্তি। ছয় দফার অন্তর্নিহিত অর্থ যদি কেউ অনুধাবন করতে পারেন, তাহলে বুঝতে পারবেন-এর মধ্যেই নিহিত ছিল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি। পাকিস্তানি বাহিনী পরাজয় নিশ্চিত জেনে সম্ভাব্য সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু এই ধ্বংসস্তূপ থেকে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার সুকঠিন ব্রত নিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু জানতেন, যে কোনো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে কালোবাজারি বড় সংকট হয়ে দাঁড়ায়। সে জন্য প্রথমেই গঠন করেছিলেন ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবি। এর মাধ্যমে চাল থেকে কেরোসিন পর্যন্ত আমদানি করা হতো। কালোবাজারির সুযোগ যাতে না থাকে। উপরন্তু তিনি গঠন করেছিলেন ‘কসকো’ বা কনজুমার সারপ্লাস করপোরেশন। টিসিবি আমদানি করত আর কসকো সারা বাংলাদেশে ঘরে ঘরে ন্যায্য দামে বিক্রির ব্যবস্থা করত। কেবল সাধারণ রেশনিং নয়, মডিফায়েড রেশনিংও চালু করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সাবেক একান্ত সচিব বলেন, বাংলাদেশ যখন স্বাধীনতা পায়, তখন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। অর্থনৈতিক মন্দা চলছিল। এর মধ্যেই অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর ব্রত নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাতেই বঙ্গবন্ধু এক নম্ব^র লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন ‘দারিদ্র্য বিমোচন’। তিনি সমবায়ে খুব জোর দিতেন। ইউরোপের দেশগুলো উন্নত হয়েছে সমবায় আন্দোলনের মাধ্যমে। বাংলাদেশকেও পারতে হবে। যে কারণে আমাদের সংবিধানে তিনি সমবায়ের কথা সন্নিবেশ করেছিলেন। সংবিধান মতে- বাংলাদেশে সম্পত্তি তিন ধরনের- রাষ্ট্রায়ত্ত, ব্যক্তিমালিকানাধীন ও সমবায়ের আওতাধীন। বিশ্বে তখন দুই ধরনের অর্থনীতি ছিল। সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে সবই রাষ্ট্রায়ত্ত। আর পুঁজিবাদী দেশগুলোতে সবই ব্যক্তিমালিকানাধীন। বঙ্গবন্ধু এই দুইয়ের মিশ্রণ কেবল ঘটাননি, সমবায়ের মাধ্যমে তৃতীয় একটি ধারাও চালু করতে চেয়েছিলেন। তিনি কুটির শিল্প ও পল্লী বিদ্যুতায়নে খুব জোর দিতেন। বাংলার মানুষের ঘরে ঘরে কর্মসংস্থান হবে। বঙ্গবন্ধু বুঝেছিলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার উন্নয়নের অন্তরায়। তাই তখনই পরিবার পরিকল্পনায় জোর দিয়েছিলেন। দেশের ১২টি থানায় জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির পাইলটিং শুরু করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু বলতেন, বাংলাদেশ চিরদিন অনুন্নত থাকতে পারে না। অচিরেই উন্নত দেশের কাতারে যাবে। অর্থনীতি এগিয়ে নিতে বঙ্গবন্ধুর চিন্তাভাবনা মূল্যায়ন করতে গিয়ে ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, বঙ্গবন্ধু শিল্পায়নে নজর দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন তেজগাঁও শিল্প এলাকা, চট্টগ্রাম শিল্পনগরী এবং জেলায় জেলায় বিসিক শিল্পনগরী। তিনি জানতেন, বিদ্যুৎ ছাড়া শিল্প হবে না। বিদ্যুতের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিলেন। যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশ সরকারকে যে খাদ্য সহায়তা দিত, তা হ্রাসকৃত মূল্যে বাজারে বিক্রি করে কাউন্টারপার্ট তহবিল গঠন করা হয়। এই তহবিলের একটি অংশ দিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ এবং আরেকটি অংশ দিয়ে পোলট্রি চাষে উৎসাহ দিতে খরচ করা হতো। তখন থেকেই দেশে হাঁস-মুরগি চাষের বিপ্লব শুরু হলো এবং যা এখনো অব্যাহত আছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই গভর্নর আরও বলেন, সমাজতন্ত্র সংবিধানের প্রধান অঙ্গ হওয়ায় কৃষি ছাড়া বাকি প্রায় সবকিছুই সরকারি মালিকানায় এনেছিলেন বঙ্গবন্ধু। কৃষিতেও ভর্তুকির মাধ্যমে বেশির ভাগ বিনিয়োগ ছিল সরকারের। ব্যক্তি খাতের শিল্প শুরু করার জন্য তিনি তখন ডাকলেন জহুরুল ইসলামকে (প্রয়াত শিল্পপতি, ইসলাম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা)। তার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আগে থেকে পরিচয় ছিল। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১০টি করপোরেশন করলেন। সুইডেন ছিল বাংলাদেশের খুবই মিত্র রাষ্ট্র। সুইডেন ‘স্টেট বার্টার’ শুরু করল। তবে তার ব্যবস্থাপনায় ছিল ব্যক্তি খাত। বঙ্গবন্ধু তখনকার বাণিজ্য সচিবকে বলে দিলেন, ব্যক্তি খাতে এই ব্যবসা করবে বেক্সিমকো। কে কোন দলের লোক তা বিবেচনায় না নিয়ে, কে কোন কাজ করতে পারবে, এমন চিন্তা থেকে তিনি ব্যক্তি খাতকে সহযোগিতা করতে থাকলেন। এভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম শুরু হয়ে গেল।
শিরোনাম
- তারেক রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বুড়িচংয়ে দোয়া মাহফিল
- ধর্মের দোহাই দিয়ে টিকেট বিক্রি করে কাজ হবে না: তানিয়া রব
- জবিতেও ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে রবিবার
- সোনারগাঁয়ে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মান্নানের সম্প্রীতি সমাবেশ
- ভূমিকম্প: ঢাবিতে রবিবারের ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত
- নোয়াখালীতে প্রয়াত ১০৯ বিএনপি নেতাকর্মীর পরিবারকে ক্রেস্ট ও সংবর্ধনা
- তারেক রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিনির্মাণে ধানের শীষের বিকল্প নেই: দুলু
- ভূমিকম্পে নিহত শিশুর শেষ বিদায়ে পাশে থাকতে পারেননি বাবা-মা
- বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে নারীরা সুরক্ষিত থাকে: শামা ওবায়েদ
- নরসিংদীর মাধবদী কীভাবে শক্তিশালী ভূমিকম্পের কেন্দ্রে পরিণত হলো?
- 'তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী হলে প্রতিটি পরিবারের হাতে ফ্যামিলি কার্ড দেওয়া হবে'
- মুস্তাফিজকে আবারও দলে নিলো ক্যাপিটালস
- বাগেরহাটে কবি হিমেল বরকতের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত
- ঢাকায় ভূমিকম্পে নিহত বগুড়ার রাফিউলের দাফন সম্পন্ন
- ‘নির্বাচনকে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা চলছে’
- বিমান বাহিনীর খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা
- বিক্রি হয়ে গেল দ্য টেলিগ্রাফ
- নারায়ণগঞ্জে বিএনপি প্রার্থীর উদ্যোগে ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত
- মিরসরাইয়ে বিজিবির অভিযানে ভারতীয় ৩১ গরু আটক
- শততম টেস্টে মুশফিকের বিরল রেকর্ড
বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শন বিত্তহীন মানুষের কল্যাণ জোর দেন কৃষি ও শিল্পে
-ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন
রুহুল আমিন রাসেল
প্রিন্ট ভার্সন
এই বিভাগের আরও খবর
সর্বশেষ খবর