বুধবার, ১১ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা
শিশু অপহরণ হত্যা ও প্রতিবেশীর বাসায় রেখে ব্ল্যাকমেলিং

স্ত্রীর চিকিৎসায় ভয়ংকর পথে

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর খিলগাঁওয়ে অপহরণের পর শিশু হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। হত্যার তিনদিন পর মধ্য নন্দীপাড়া নূর মসজিদ গলির একটি ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে পাঁচ বছরের শিশু জিসানুল ইসলাম আকাইদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই রাতেই গোড়ান থেকে আসামি মো. সেলিমকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় অপহরণের কাজে ব্যবহৃত রিকশা, টি-শার্ট ও লুঙ্গি, হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ক্ষুর জব্দ করা হয়। পুলিশ বলছে, সিসিটিভির ফুটেজ দেখে সেলিমকে শনাক্ত করা হয়। সে পেশায় একজন রিকশাচালক। তার বাড়ি ঝালকাঠি সদর থানার লেসপ্রতাপ বয়াতিবাড়ি গ্রামে। তিনি স্ত্রীসহ রাজধানীর সবুজবাগ থানার শান্তিপাড়া এলাকায় থাকেন। মূলত অসুস্থ স্ত্রী নূপুর আক্তারের চিকিৎসার খরচ জোগাড়ের জন্য বাড়িওয়ালাকে ফাঁসিয়ে মোটার অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতে শিশুটিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেন। ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. আব্দুল আহাদ জানান, শিশু জিসানুলের বাবার নাম আব্দুল মালেক। খিলগাঁও থানার নন্দীপাড়া এলাকার নূর মসজিদ এলাকায় তাদের বাসা। গত ৬ আগস্ট দুপুরে জিসানুল বাসার সামনে ৫/৬ শিশুর সঙ্গে খেলা করছিল। অন্য শিশুরা খেলা শেষে তাদের বাসায় ফিরে গেলেও জিসানুল বাসায় ফিরেনি।

পরে বিকালে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও কোনো সন্ধান পায়নি পরিবার। ওইদিন রাতেই খিলগাঁও থানায় একটি জিডি করেন জিসানুলের বাবা। এরই মধ্যে স্থানীয় এবং আশপাশের লোকজনের মাধ্যমে আব্দুল মালেক জানতে পারেন, তার ছেলেকে এক রিকশাচালক রিকশায় করে নূর মসজিদের দিকে নিয়ে যায়। ঘটনাস্থলের আশপাশের এলাকার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়।

ভিডিও পর্যালোচনা করে দেখা যায়, অজ্ঞাতনামা রিকশাচালক শিশুটিকে রিকশায় নিয়ে যায়। গত সোমবার নূর মসজিদ গলি এলাকার পাঁচতলা ভবনের দোতলা থেকে শিশু জিসানুলের লাশ উদ্ধার করা হয়। এরপর ওই রাতেই অভিযুক্ত সেলিমকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। সেলিমের তথ্যের ভিত্তিতে ডিসি আব্দুল আহাদ জানান, সেলিমের স্ত্রী নূপুর দীর্ঘদিন ধরে কিডনি রোগে আক্রান্ত। এছাড়াও তার পেটের ভিতরে টিউমারের অস্তিত্ব রয়েছে। কিন্তু ওই রোগের পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা করার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন হবে। তাই সে বাড়ির মালিক বাবুলের স্ত্রীর কাছে টাকা চাইলেও মোটা অংকের টাকা সে পায়নি। এতে সে কোনো অবৈধ জিনিস ওই বাড়িতে রেখে চাপ দিয়ে বেশি টাকা নেওয়ার পরিকল্পনা করে। সে চিন্তা থেকেই একটি ক্ষুর কিনে নিজের কাছে রেখে দেয় সেলিম। ঘটনার দিন বিকাল ৪টার দিকে রিকশা নিয়ে মধ্য নন্দীপাড়া ২ নম্বর রোডে যায়। সেখানে জিসানুলকে তার রিকশায় করে নূর মসজিদের দিকে নিয়ে যায় এবং পরে তাকে বাবুলের বাড়ির দ্বিতীয় তলায় নিয়ে যায়। সেখানে থাকা রশি দিয়ে জিসানুলের দুই হাত বেঁধে ক্ষুর দিয়ে তার গলাকেটে হত্যা করে।

তার পরিকল্পনা ছিল বাড়িওয়ালা বাবুল তাকে বাসা পরিষ্কার করার জন্য ডাকবে। বাড়ি পরিষ্কার করার সময় এই লাশ দেখতে পেলে পুলিশি ঝামেলা এড়াতে মরদেহটি সরানোর চিন্তা করবে। এক্ষেত্রে বাবুল তাকে দিয়ে মরদেহটি সরানোর উদ্যোগ নিলে সে কাজের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করবে। কিন্তু তিন দিন পার হলেও বাবুল তাকে বাড়ি পরিষ্কার করার কাজের জন্য না ডাকায় এবং মরদেহের কোনো প্রকার খোঁজ না পাওয়ায় তার এই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর