শুক্রবার, ১৩ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

গণটিকায় ব্যাপক সাড়া আছে ভোগান্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক

গণটিকায় ব্যাপক সাড়া আছে ভোগান্তি

রাজধানীর একটি কেন্দ্রে টিকার জন্য মানুষের ধাক্কাধাক্কি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

করোনার গণটিকা ক্যাম্পেইনের শেষ দিনে কেন্দ্রগুলোতে ছিল উপচে পড়া ভিড়। ক্যাম্পেইনের ছয় দিনে দেশব্যাপী ৫০ লাখের বেশি মানুষকে দেওয়া হয়েছে টিকা। মাঝরাত থেকে কেন্দ্রের বাইরে লাইন দিয়ে টিকার জন্য অপেক্ষা করেছেন অনেকে। ভিড় বেড়ে গেলে কিছু কেন্দ্রে দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা।

গতকাল মডার্নার টিকার প্রথম ডোজ বন্ধ ঘোষণা করায় রাজধানীর টিকা কেন্দ্রগুলোতে প্রচ- ভিড় ছিল। অনেকে এসএমএস না পেলেও টিকার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ফলে নির্ধারিত দিনে টিকার এসএমএস থাকলেও টিকা দিতে পারেননি অনেকে। ১২টা পার হতেই অধিকাংশ কেন্দ্রে ঘোষণা দেওয়া হয় টিকা শেষ। এতে দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা। দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে টিকা না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন অপেক্ষমাণ মানুষ।

পরীবাগের টিকা কেন্দ্রে দুপুর হতেই টিকা শেষ হওয়ার ঘোষণা দিলে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করেন অপেক্ষমাণ মানুষ। টিকা কেন্দ্রের ভিতরে দুই যুবকের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। লাইন ভেঙে টিকা দেওয়া ঘিরে শুরু হয় কথা কাটাকাটি। এক পর্যায়ে হাতাহাতিতে শুরু হলে টিকা কেন্দ্রের কর্মীরা ঠেকাতে এলে তারাও লাঞ্ছিত হন। মিরপুর ১০ নম্বর কমিউনিটি সেন্টার কেন্দ্রে রাত দেড়টার সময় দেখা যায় টিকার জন্য লাইন দিয়ে অপেক্ষা করছে ২০-২৫ জন মানুষ। হালকা বৃষ্টি হচ্ছে ছাতা মাথায় টুল নিয়ে বসে আছেন অনেকে। এর মধ্যে আটজন পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সী নারী। অপেক্ষমাণ খাদিজা বেগম বলেন, ‘দুই দিন টিকার জন্য এসে লাইনে দাঁড়িয়ে ফিরে গেছি। ভোরে এসে লাইনে দাঁড়িয়েও ৬০০ জনের পরে সিরিয়াল। ৩৫০ জনকে টিকা দেওয়ার পর বলা হয় টিকা শেষ। এ জন্য রাত থেকে অপেক্ষা করছি, যেন আজ টিকা নিয়ে ফিরতে পারি।’ টিকা ক্যাম্পেইনের শেষ দিন হওয়ায় ওয়ার্ডের কেন্দ্রগুলোতে ভিড় ছিল। হাসপাতালও নিয়মিত টিকা কেন্দ্রগুলোতে মডার্নার টিকার প্রথম ডোজ  নেওয়ার জন্য ভিড় করেছিলেন মানুষ। এর আগে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে মডার্নার টিকার প্রথম ডোজ বৃহস্পতিবারের পর আর দেওয়া হবে না। শনিবার থেকে মডার্নার দ্বিতীয় ডোজ শুরু হবে। সারা দেশের সব টিকা কেন্দ্রে আবশ্যিকভাবে সিনোফার্মের প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে। এ খবরে রাজধানীর টিকা কেন্দ্রগুলোতে ভোর থেকে ভিড় বাড়তে থাকে। এসএমএস না এলেও নির্ধারিত টিকা কেন্দ্রে টিকার জন্য ভিড় করতে থাকেন মানুষ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের টিকা কেন্দ্রের বাইরে প্রায় ২ হাজার মানুষকে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। ভিড় ঠেলে টিকা কেন্দ্রে ঢুকতে গলদঘর্ম অবস্থা। ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্মীরা। ভিড় এবং দীর্ঘ লাইনের কারণে নির্ধারিত দিনের এসএমএস থাকলেও টিকা দিতে পারেননি অনেকে। শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের টিকা কেন্দ্রে হাজারখানেক মানুষকে টিকার জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়। লাইন ভেঙে সামনে কেউ যেতে চাইলেই শুরু হয় হট্টগোল। লাইনে দাঁড়ানো ইব্রাহিম অভিযোগ করেন, টিকা কেন্দ্রের দায়িত্বরত দুজন আনসার সদস্য ১ হাজার টাকা দিয়ে তাৎক্ষণিক এসএমএস দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। টিকা নিবন্ধন কাগজ নিয়ে ২০৫ নম্বর রুমে গিয়ে আজকের তারিখে এসএমএস পাঠানোর ব্যবস্থা করছে। এদের কারণে আমরা নির্ধারিত তারিখে এসেও টিকা নিতে পারছি না। সরকারের দেওয়া বিনামূল্যের টিকা দিতে এসে মানুষ এদের ঘুষ দিচ্ছে। মহাখালী শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, টিকার জন্য প্রায় দেড় হাজার মানুষ অপেক্ষা করছে। প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার মানুষকে টিকা দেওয়া হয়। এসএমএস দেখে তবে টিকা দিচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। অনেকের নির্ধারিত তারিখ পার হয়ে গেছে। সকাল ৯টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে সিরিয়াল পেতে বেজে যাচ্ছে দেড়টা। অনেকে বুথ পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই টিকা শেষের ঘোষণা পাচ্ছেন। দেশব্যাপী টিকা দান ক্যাম্পেইনে মিলেছে ব্যাপক সাড়া। টিকা নিতে কেন্দ্রগুলোতে ছিল মানুষের ভিড়। সরকারের প্রচার এবং মানুষের সচেতনতায় ছয় দিনে দেশে ৫০ লাখেরও বেশি মানুষকে দেওয়া হয়েছে করোনা টিকার প্রথম ডোজ। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমরা একবারে সবাইকে টিকা দিতে পারব না। ধৈর্য ধরতে হবে। আস্তে আস্তে সবাইকে আমরা টিকা দিচ্ছি। কোটি কোটি লোক রেজিস্ট্রেশন করেছে। আমাদের যারা বিরোধী আছেন, টিকা যখন কম থাকে তখন বলে টিকা কোথায়? যখন বেশি লোক আসে, তখন বলে বেশি কেন এলো? না এলেও অসুবিধা, এলেও তাদের কাছে অসুবিধা। তাদের আমি অন্য কোনো কাজে দেখিনি। করোনার সময় মানুষের পাশে তাদের কখনো দেখিনি। মাঝে মাঝে টেলিভিশনের পর্দায় শুধু সমালোচনায় দেখেছি। সমালোচনা করা খুব সহজ।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর