সোমবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ফের বাজবে ক্লাসের ঘণ্টা

১২ সেপ্টেম্বর সশরীরে ক্লাস প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে । পিইসি এসএসসি এইচএসসির ক্লাস প্রতিদিন অন্যদের সপ্তাহে এক দিন । মাস্ক ছাড়া প্রবেশ নিষেধ ১৯ । দফা নির্দেশনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফের বাজবে ক্লাসের ঘণ্টা

ক্লাসরুম পরিচ্ছন্নতা চলছে। রাজধানীর দিলু রোডে প্রভাতী উচ্চ বিদ্যা নিকেতন থেকে তোলা ছবি -রোহেত রাজীব

দিন সপ্তাহ বা মাস নয়, করোনা মহামারীর কারণে প্রায় দেড় বছর ধরে বন্ধ দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সেই বন্ধ থাকা স্কুল-কলেজের দুয়ার খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল-কলেজে সশরীরে ক্লাস শুরু হচ্ছে। এর মাধ্যমে দীর্ঘ দেড় বছর পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবারও ঘণ্টা বাজবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কোলাহলে আবারও জমে উঠবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর আঙিনা। উৎসবমুখর পরিবেশে প্রাণ ফিরে পাবেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। দেড় বছরের বন্ধ্যত্ব কাটিয়ে আবারও সরব হয়ে উঠবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। তবে শুরুতেই সব শ্রেণির ক্লাস প্রতিদিন অনুষ্ঠিত হবে না। ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শুধু এ বছরের এবং আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের এবং পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন ক্লাস হবে। বাকিদের সপ্তাহে একদিন করে ক্লাস হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেউ মাস্ক ছাড়া ঢুকতে পারবে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন, করোনা মহামারী এখনো শেষ না হওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি পালনে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। ইতিমধ্যে স্কুল-কলেজগুলো খোলার প্রস্তুতি নিতে ১৯ দফা নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে এক আন্তমন্ত্রণালয় সভায় কৃষিমন্ত্রী ডা. আবদুর রাজ্জাক, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ  আহসান রাসেল অংশ নেন। এ ছাড়া ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আলমীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম, আইডিসিআরের প্রতিনিধিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা। বৈঠকে ১২ সেপ্টেম্বর থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সাংবাদিকদের বলেন, ১২ সেপ্টেম্বর থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হবে। দেশে করোনার সংক্রমণ দ্রুত কমে যাচ্ছে। জুলাই মাসের তুলনায় সংক্রমণ ৭০ শতাংশ কমেছে। শ্রেণিকক্ষে পাঠদানকালে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকসহ সবাইকে মাস্ক পরিধান করতে হবে। শুরুর দিকে ২০২১ সালে যারা এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী তাদের প্রতিদিন স্কুলে আসতে হবে। এ ছাড়াও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন ক্লাসে আসবে। শুরুর দিন চার-পাঁচ ঘণ্টা ক্লাস হবে। পর্যায়ক্রমে ক্লাসের সংখ্যা বাড়বে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে চেকলিস্ট পূরণ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সহায়তায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস চলাকালে কী কী সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে সে সম্পর্কে প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। অভিভাবকরা যখন তাদের সন্তানদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাবেন তখন তার পরিবারের কেউ কিংবা শিক্ষার্থীর করোনার উপসর্গ নেই তা নিশ্চিত করবেন। তার সন্তানের মাধ্যমে যেন অন্য কোনো শিক্ষার্থী সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা না থাকে সে ব্যাপারে সচেতন থাকবেন।

মাস্ক ছাড়া প্রবেশ নয়, হবে না অ্যাসেম্বলি : স্কুল-কলেজ খোলার পর মাস্ক ছাড়া কেউ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকতে পারবে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তিনি বলেন, শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে স্কুল-কলেজে প্রাত্যহিক সমাবেশ বা অ্যাসেম্বলি আপাতত বন্ধ থাকবে। কিন্তু শরীর চর্চা বা খেলাধুলা স্বল্প পরিসরে কম সংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে চালু রাখা হবে। শিক্ষার্থীরা যেন মাস্কটি বাসা থেকেই পরে স্কুলে আসে। খুব ছোট শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে শিক্ষকরা খেয়াল রাখবেন, কারও অসুবিধা হয় কি না। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা তো সমস্যা হলে নিজেই বলতে পারবে।

১২ বছরের ঊর্ধ্বে শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া হবে : সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডা. দীপু মনি বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী আগে বলেছেন ১৮ বছরের অধিক যারা তাদের সবাইকে টিকা দিয়ে দিই। ১২ বছরের অধিক যারা তাদেরও ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসি, সেটির ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদফতর কাজ করছে। ১২ বছরের অধিক বয়সীদের সব ধরনের টিকা দেওয়া যায় না। যে টিকাগুলো দেওয়া যায় সেগুলো নিয়ে আসা এবং কিছু নিয়ে আসা হয়েছে, আরও নিয়ে আসা হবে।

সংক্রমণ বাড়লে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ : স্কুল-কলেজ খোলার রোডম্যাপ ঘোষণাকালে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সংক্রমণ বেড়ে গেলে স্থানীয় পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকার কারণে কোথাও যদি আমরা কখনো মনে করি, সংক্রমণ বাড়ার কোনো সম্ভাবনা আছে, সেখানে আমরা সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

পরিস্থিতি বিবেচনায় বাড়বে ক্লাসের সংখ্যা : পরিস্থিতি বিবেচনা করে ক্লাসের সংখ্যা বাড়বে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন, ১৭ মাস যেহেতু শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ছিল না, তাই চার ঘণ্টা, পাঁচ ঘণ্টা করে ক্লাস নেওয়া হবে। তারপর ধীরে ধীরে ক্লাসের সময়সূচি স্বাভাবিক করা হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, শিক্ষা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, জাতীয় পরামর্শক কমিটি আমরা সবাই পর্যবেক্ষণ কাজের মধ্যে থাকব।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সিন্ডিকেট : বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ব্যাপারে সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত নেবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সিদ্ধান্ত তাদের সিন্ডিকেট ও একাডেমিকভাবে হয়ে থাকে তাই এ সিদ্ধান্ত তারাই নেবেন। কিন্তু আমরা তাদের সঙ্গে আবারও একটি বৈঠক করব।

১৯ দফা নির্দেশনা : স্কুল-কলেজ খোলার বিষয়ে বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। এগুলো হলো- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রবেশমুখসহ অন্যান্য স্থানে কডিড-১৯ সম্পর্কিত স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে করণীয় বিষয়গুলো ব্যানার হিসেবে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রবেশপথে সব শিক্ষক-কর্মচারী শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের নিয়মিত তাপমাত্রা মাপা ও তা পর্যবেক্ষণ করার ব্যবস্থা করতে হবে। ভিড় এড়াতে প্রতিষ্ঠানের সব প্রবেশমুখ ব্যবহার করার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের আনন্দঘন পরিবেশে শ্রেণি কার্যক্রমে স্বাগত জানানোর ব্যবস্থা করতে হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের দেওয়া ভিডিও প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের একটি কক্ষ প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ আইসোলেশন কক্ষ হিসেবে প্রস্তুত রাখতে হবে। প্রতিষ্ঠানের সব ভবনের কক্ষ, বারান্দা, সিঁড়ি, ছাদ এবং আঙিনা যথাযথভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। প্রতিষ্ঠানের সব ওয়াশরুম নিয়মিত সঠিকভাবে পরিষ্কার রাখা এবং পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা করতে হবে।

প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন স্থানে সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ দ্বারা হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ঢোকার আগে সবাই সাবান দিয়ে হাত ধুতে পারে। শ্রেণিকক্ষে বসার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে পারস্পরিক ৩ (তিন) ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে প্রতিপালন হচ্ছে কি না তা পর্যবেক্ষণ ও বাস্তবায়নের জন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকবৃন্দের সমন্বয়ে কমিটি করতে হবে। প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে আনন্দঘন শিখন কার্যক্রমের মাধ্যমে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালিত করতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর