শুক্রবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

আশ্রয়ণের ঘর ভাঙা হয়েছে হাতুড়ি শাবল দিয়ে : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কিছু লোক মুজিববর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে তৈরি করা উপহারের ঘর হাতুড়ি-শাবল দিয়ে ভেঙে তা মিডিয়ায় প্রচার করেছে। যারা ঘর ভেঙেছে তাদের নামের তালিকাসহ তদন্ত প্রতিবেদন হাতে রয়েছে।

গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দীর্ঘ প্রায় এক বছর পর আওয়ামী লীগের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে শুরুতে দলীয় সভানেত্রী উদ্বোধনী বক্তৃতা করেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য রেকর্ড করে এবং এর একটা ক্লিপ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রচারের জন্য দেওয়া হয়। বৈঠকে দলীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ অর্ধশতাধিক নেতা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সূচনা বক্তব্যের পর শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন দলের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। এরপর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের সাংগঠনিক রিপোর্ট উপস্থাপনসহ দলকে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে সাংগঠনিক সফরসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সব থেকে দুর্ভাগ্য হলো, আমি সিদ্ধান্ত নিলাম প্রত্যেকটা মানুষকে আমরা ঘর দেব। দেশের কিছু লোক এত জঘন্য চরিত্রের যে আমি কয়েকটা জায়গায় দেখলাম কীভাবে ঘর ভেঙে পড়ছে, কোন জায়গার ভাঙা ছবি এগুলো। দেখার পরে পুরোপুরি সার্ভে করালাম কোথায় কী হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা প্রায় দেড় লাখের মতো ঘর তৈরি করে দিয়েছি। ৩০০টা ঘর বিভিন্ন এলাকায় কিছু লোক নিজে থেকে গিয়ে হাতুড়ি-শাবল দিয়ে ভেঙে ভেঙে তারপর ছবি তুলে মিডিয়ায় দিয়েছে। তাদের নাম-ধাম এগুলো একদম এনকোয়ারি করে সবগুলো বের করা হয়েছে। আমার কাছে যে পুরো রিপোর্টটা আছে, গরিবের জন্য ঘর করে দিয়েছি, কারা এভাবে ভাঙতে পারে, সেই ছবি দেখলে বোঝা যায়। ঘর ভেঙে পড়ার পেছনের কারণ মিডিয়া অনুসন্ধান করেনি অভিযোগ করে সরকারপ্রধান বলেন, মিডিয়া এগুলো ধারণ করে প্রচার করে, তারা কিন্তু এটা কীভাবে হয়েছে সেটা বলেনি। তদন্তে নয়টি জায়গায় দুর্নীতি পাওয়া গেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কয়েকটি জায়গায় হয়েছে, যেমন এক জায়গায় ৬০০ ঘর, সেখানে হয়তো তিন-চারটা ভেঙেছে। ওই জায়গায় অতিবৃষ্টি হয়েছিল, তখন মাটি নরম হয়ে দেবে কয়েকটি ঘর ভেঙে গেছে। আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে ঘর নির্মাণে সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি দেখেছি যে প্রত্যেকেই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছেন। যাদের ওপর দায়িত্ব দিয়েছিলাম, আমাদের ইউএনও-ডিসিসহ কর্মচারীরা ছিলেন, তারা কিন্তু অনেকেই নিজ থেকে এগিয়ে এসেছেন, এ ঘর তৈরিতে সহযোগিতা করার জন্য। তিনি বলেন, ‘যারা ইট তৈরি করে তারাও এগিয়ে এসেছেন, অল্প পয়সায় তারা ইট দিয়ে দিয়েছেন। এভাবে সবার সহযোগিতা ও আন্তরিকতাটাই বেশি। কিন্তু এর মধ্যে দুষ্ট বুদ্ধির কিছু লোক আছে, এটাই হচ্ছে সবচেয়ে কষ্টকর। যখন জানল এটা গরিবের ঘর, তাহলে সেখানে হাত দেয় কীভাবে এরা? আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, নির্বাচন আসছে, কাজেই দলকে আরও শক্তিশালী করে তোলার বিষয়ে আমাদের অধিক মনোযোগী হতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকারে আছে বলেই দেশের উন্নতি হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারে আছে বলেই এ করোনা মোকাবিলা সম্ভব হয়েছে। আর আওয়ামী লীগ আছে বলেই মানুষ অন্তত সেবা পাচ্ছে, জীবনমানের উন্নয়ন ঘটছে। তিনি বলেন, এবারের করোনাভাইরাসের সময় আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা যেভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, সেভাবে আর কোনো রাজনৈতিক দলকে মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেখিনি। এ ব্যাপারে অন্য দলগুলোর কোনো আগ্রহ ছিল না। তাদের কাজই ছিল প্রতিদিন টেলিভিশনে বক্তৃতা বা বিবৃতি দেওয়া এবং আওয়ামী লীগের একটু সমালোচনা করা। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের সময় সরকারের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই খুব আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছে। কখনো সরকারের একার পক্ষে এ ধরনের পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব ছিল না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়েছে একটাই কারণে যে, আমাদের একটা শক্তিশালী সংগঠন তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত আছে। আর সেটা আছে বলেই আমরা এটা মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি। যেটা আমার বিশ্বাস। জানি এ কথা কেউ হয়তো বলবেও না লিখবেও না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এককভাবে শুধু সরকারি লোক দিয়ে সবকিছু করা সম্ভব হয় না। তারাও করেছে খুব আন্তরিকতার সঙ্গে। আমাদের প্রশাসনে যে যেখানে ছিল বা পুলিশ বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী, বিডিআর, আনসার প্রত্যেকে এবং বিশেষ করে স্বাস্থ্যকর্মীরা। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রথম দিকে একটু ভীতি ছিল। কিন্তু সরকারের প্রণোদনা এবং উৎসাহে তারা কাজ করতে পেরেছে। হাজার হাজার ডাক্তার এবং নার্স আমরা নিয়োগ দিয়ে চেষ্টা করেছি করোনা মোকাবিলা করার জন্য। আবার ভ্যাকসিন কেনার ব্যাপারে আমরা সবার আগে উদ্যোগ নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বিপদ হয়ে গিয়েছিল ভারতে এত ব্যাপকহারে করোনা দেখা দিল যে চুক্তি থাকা সত্ত্বেও তারা ভ্যাকসিন সাপ্লাই দিতে পারছিল না। তার পরও আমরা পৃথিবীর যেখান থেকে পেরেছি ভ্যাকসিন সংগ্রহ করেছি এবং এখন আর সমস্যা হবে না। আমরা নিয়মিত পাব এবং আমাদের দেশের মানুষকে আমরা দিতে পারব। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা মানুষের কোনো কাজের সুযোগ ছিল না, ঘরে বন্দী, খাবারের অভাব। সে সময় আমাদের নেতা-কর্মীরা প্রত্যেকে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছে। শেখ হাসিনা করোনায় দলের বহু নেতা-কর্মীর মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, কত মানুষকে যে আমরা হারালাম। এমন কোনো দিন নেই যে, মৃত্যু সংবাদ না আসত। আজকেও (বৃহস্পতিবার) কিছুক্ষণ আগে খবর পেয়েছি ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর স্ত্রী মারা গেছেন। তিনি বলেন, যে যা-ই বলে বলুক, আমাদের আত্মবিশ্বাস আছে এবং আমরা সেই আত্মবিশ্বাস নিয়েই চলি। ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম ২০২১ সালে বাংলাদেশকে আমরা এই পর্যায়ে নিয়ে আসব। সেটা আমরা করতে পেরেছি বলেই আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। তিনি বলেন, জাতিসংঘের যে কর্মসূচি সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এসডিজি), সেটাও যেমন আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি, সেই সঙ্গে আমাদের নিজেদের কর্মসূচি বাংলাদেশকে ঘিরে অর্থাৎ ২০৪১ সাল নাগাদ কেমন বাংলাদেশ আমরা দেখতে চাই, সেই পরিকল্পনাও আমরা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছি। সেই সঙ্গে ডেল্টা প্ল্যান করেছি। অর্থাৎ দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং আশু করণীয় নির্ধারণ করে সেভাবে আমরা কাজ করেছি, যার সুফল এখন দেশের মানুষ পাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর