মঙ্গলবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

মুক্তবাণিজ্যে আগ্রহী নয় যুক্তরাষ্ট্র

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানাল ওয়াশিংটন বাংলাদেশ দূতাবাস টিকফা ফোরামে প্রস্তাব তোলার পরামর্শ

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বাণিজ্য বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশ মুক্তবাণিজ্য চুক্তি বা এফটিএ করতে চাইলেও বর্তমানে দেশটি এ ধরনের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তিতে আগ্রহী নয় বলে ইঙ্গিত দিয়েছে ওয়াশিংটনে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস। সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে দূতাবাস বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র সাধারণত এ ধরনের দ্বিপক্ষীয় মুক্তবাণিজ্য পছন্দ করে না। এ পর্যন্ত দেশটি মাত্র ২০ দেশের সঙ্গে এ ধরণের এফটিএ করেছে। উপরন্তু বেশির ভাগ এফটিএ সম্পন্ন হয়েছে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে। এখানে অর্থনৈতিক বাণিজ্যিক বিষয় গুরুত্ব পায়নি খুব একটা।

গত ১৭ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটনে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে এ সংক্রান্ত মতামত পাঠানো হয়, যাতে স্বাক্ষর করেছেন অ্যাম্বাসেডর এম শহীদুল ইসলাম।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ এফটিএ করার জন্য এখনো যুক্তরাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রস্তাব দেয়নি। আমরা প্রাথমিকভাবে ট্যারিফ কমিশন থেকে একটি সম্ভাব্যতা যাচাই রিপোর্ট পেয়েছি, যেখানে বলা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এফটিএ লাভজনক হবে। সে বিষয়ে ওয়াশিংটন দূতাবাস মতামত পাঠিয়েছে।

মতামতে অ্যাম্বাসেডর এম শহীদুল ইসলাম বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ানোর ক্ষেত্রে শুল্ক প্রধান বাধা নয়। শুল্ক কমালেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে আমাদের রপ্তানি বেড়ে যাবে বলে অভিজ্ঞতা বলছে না। তৈরি পোশাকসহ সীমিত সংখ্যক রপ্তানি পণ্য দিয়ে খুব বেশি প্রবৃদ্ধি আশা করাও যাবে না। এ ছাড়া দেশটির কাছে এফটিএ প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে গেলে মেধাস্বত্ত¡ ও শ্রম ইস্যুসহ নানা শর্তের মুখে পড়তে হতে পারে বাংলাদেশকে। তবে এরপরও সরকার আগামী টিকফা ফোরামে দ্বিপক্ষীয় মুক্তবাণিজ্যের প্রস্তাবটি তুলতে পারে বলে মতামতে তুলে ধরেন তিনি।

এ বিষয়ে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন,  প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আমল থেকেই দ্বিপক্ষীয় মুক্তবাণিজ্যের নীতি থেকে সরে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র। সরকার বদল হলেও সেই নীতির তেমন পরিবর্তন দেখতে পারছি না। তবে আমরা আমাদের বাণিজ্য সম্ভাবনা বিবেচনা করে দেশটির সঙ্গে এফটিএ করার বিষয়ে এগিয়ে যাব।

সচিব আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ক্ষেত্রে আমরা কোনো শুল্ক সুবিধা পাই না। এ ছাড়া ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) যে ধরনের শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দিচ্ছে সেটিও কখনো তাদের কাছ থেকে পাওয়ার সম্ভাবনা  নেই। সে কারণে আমরা দ্বিপক্ষীয় মুক্তবাণিজ্যের বিষয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছি। যাতে শুধু বাংলাদেশ নয়, যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশে একই সুবিধা পাবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, এলডিসি বা স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বর্তমানে উন্নত দেশগুলোতে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পাচ্ছে বাংলাদেশ। ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে বের হওয়ার পর পরবর্তী ৩ বছর এ সুবিধা অব্যাহত থাকবে। এরপর দেশের পণ্য রপ্তানির বিপরীতে এখনকার মতো আর শুল্ক সুবিধা পাওয়া যাবে না। এ জন্য সরকার বিভিন্ন দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি করার কৌশল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এফটিএ করার উদ্যোগ এরই অংশ।

কর্মকর্তারা জানান, একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রপ্তানি গন্তব্য হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রযোজ্য হারে শুল্ক দিয়ে অন্যান্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে পোশাকসহ অন্যান্য পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ। গড়ে প্রায় ১৬ শতাংশ শুল্ক দিয়ে দেশটিতে পোশাক রপ্তানি করতে হয়। একসময় বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা বা জিএসপির আওতায় কিছু পণ্যে শুল্ক সুবিধা পেলেও সেটি পোশাক খাতে কার্যকর ছিল না। ২০১৩ সালের  সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা বাতিল করে দেয় দেশটির সরকার। পরে এই সুবিধা বহাল রাখার শর্ত হিসেবে শ্রম অধিকার নিশ্চিতসহ ১৬ দফা শর্ত বেঁধে দেয়। সেই শর্ত পূরণ করলেও আর জিএসপি সুবিধা পুনর্বহাল করেনি দেশটি। ফলে বিকল্প পথে হাঁটতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। কর্মকর্তারা বলছেন, এফটিএ কার্যকর হলে তখন শূন্য শুল্কে পণ্য রপ্তানির সুযোগ তৈরি হবে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি বাড়বে বলে আশা করছে সরকার।

সর্বশেষ খবর