মঙ্গলবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

সাহেদের সঙ্গে আসামি স্বাস্থ্যের সাবেক ডিজিসহ ছয়জন

বিশেষ প্রতিনিধি

লাইসেন্স নবায়নবিহীন বন্ধ রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ ও চিকিৎসার জন্য চুক্তি করে অবৈধভাবে পারিতোষিক গ্রহণের অভিযোগে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) আবুল কালাম আজাদ, হাসপাতালটির মালিক মোহাম্মদ সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম ও স্বাস্থ্যের চার কর্মকর্তাসহ ছয়জনকে আসামি করে চার্জশিট অনুমোদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

গতকাল দুদকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় তদন্ত কর্মকর্তা মো. ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী চার্জশিটের সুপারিশ পেশ করলে কমিশন তা মঞ্জুর করে। পরে বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন সংস্থাটির সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক ডিজি আবুল কালাম আজাদ, রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ ছাড়াও যাদের বিরুদ্ধে দুদক চার্জশিট দিচ্ছে তারা হলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. মো. আমিনুল হাসান, উপপরিচালক (হাসপাতাল-১) ডা. মো. ইউনুস আলী, সহকারী পরিচালক (হাসপাতাল-১) ডা. মো. শফিউর রহমান এবং গবেষণা কর্মকর্তা ডা. মো. দিদারুল ইসলাম। দুদক সচিব বলেন, আসামিরা অসৎ উদ্দেশ্যে অন্যায়ভাবে লাভবান হওয়ার অভিপ্রায়ে পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে রিজেন্ট হাসপাতালকে ডেডিকেটেড কভিড হাসপাতালে রূপান্তর, মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং সম্পাদন ও সরকারি প্রতিষ্ঠান নিপসমের ল্যাবে ৩ হাজার ৯৩৯ জন কভিড রোগীর নমুনা বিনামূল্যে পরীক্ষা করে অবৈধ পারিতোষিক বাবদ রোগীপ্রতি ৩ হাজার ৫০০ টাকা হিসাবে মোট ১ কোটি ৩৭ লাখ ৮৬ হাজার ৫০০ টাকা গ্রহণ করেন।

আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, একইভাবে রিজেন্ট হাসপাতাল লিমিটেডের মিরপুর ও উত্তরা শাখার জন্য চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয় ও অন্য কর্মকর্তাদের খাবার খরচ বরাদ্দের বিষয়ে ১ কোটি ৯৬ লাখ ২০ হাজার টাকার মাসিক চাহিদা তুলে ধরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে অপরাধ করায় তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তা কমিশনের কাছে চার্জশিট দাখিলের সুপারিশ করে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন তদন্ত কর্মকর্তার দাখিলকৃত প্রতিবেদনের সুপারিশের আলোকে চার্জশিট দাখিলের প্রস্তাব অনুমোদন করে। এর আগে গত বছর ২৩ সেপ্টেম্বর করোনার নমুনা সংগ্রহ ও চিকিৎসার জন্য চুক্তি করে সরকারের ৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। তবে সে মামলায় বাদ পড়ে স্বাস্থ্যের সাবেক ডিজি আবুল কালাম আজাদের নাম।

দুদকসূত্রে জানা গেছে, প্রায় এক বছর তদন্তের পর রিজেন্ট হাসপাতালে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় স্বাস্থ্যের সাবেক ডিজির যোগসূত্র খুঁজে পায় দুদক। করোনাভাইরাস মহামারীতে নিম্নমানের মাস্ক, পিপিইসহ স্বাস্থ্য সরঞ্জাম সরবরাহ ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের একের পর এক কেলেঙ্কারিতে গোটা স্বাস্থ্য খাত নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এসব ঘটনায় তোপের মুখে পড়েন স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক ডিজি আবুল কালাম আজাদ। মূলত করোনা মহামারীকালে চিকিৎসকদের মানহীন স্বাস্থ্য সরঞ্জাম সরবরাহের ঘটনার মধ্য দিয়ে স্বাস্থ্য খাতের এসব অনিয়ম প্রথম সামনে আসে। একই সঙ্গে জেকেজি হেলথ কেয়ারের জালিয়াতি ও রিজেন্ট হাসপাতালের করোনার ভুয়া রিপোর্টকান্ডে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সমালোচনা হয় দেশের স্বাস্থ্য খাত নিয়ে। স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির বিভিন্ন বিষয়ে সংশ্লিষ্টতা এবং কমিশনের অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে গত বছর ৬ আগস্ট স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক ডিজিকে পৃথক দুটি নোটিস দিয়ে তলব করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অবশ্য দুদকের তলবের আগেই ওই বছরে ২১ জুলাই ডিজির পদ থেকে সরে দাঁড়ান আবুল কালাম আজাদ। দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিম্নমানের স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কেনায় কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সে সময় সাবেক ডিজির সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক মো. আমিনুল হাসানসহ চারজনকে তলব করে সংস্থাটি। গত বছর কভিড-১৯ সংক্রমণ বাড়তে থাকলে রোগীদের চিকিৎসায় ওই বছর ২১ মার্চ রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি হয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের। সে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের তৎকালীন ডিজি আবুল কালাম আজাদসহ সংস্থাটির বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা। করোনাভাইরাসের পরীক্ষা না করে ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে সরকারের কাছ থেকে বিল আদায় করার পরও রোগীর কাছ থেকে করোনা টেস্টের নামে বাড়তি টাকা আদায়ের অভিযোগে গত বছর ৭ ও ৮ জুলাই অভিযান চালিয়ে সাহেদের মালিকানাধীন রিজেন্ট হাসপাতালের মিরপুর ও উত্তরা শাখা বন্ধ করে দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সে সময় পালিয়ে যান সাহেদ। তবে পরবর্তী সময়ে সাতক্ষীরা সীমান্ত থেকে তাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে রিজেন্ট হাসপাতাল ও জেকেজির মতো প্রতিষ্ঠানের চুক্তি, স্বাস্থ্যের গাড়িচালক আবদুল মালেকের শত কোটি টাকার মালিক হয়ে যাওয়ার ঘটনায় স্বাস্থ্যের সাবেক ডিজির বিষয়ে তদন্ত শুরু করে সংস্থাটি এবং দুর্নীতিতে তার সম্পৃক্ততা পায়।

সর্বশেষ খবর