বৃহস্পতিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ক্ষমতাসীন জোটে শুধুই হতাশা

নামে থাকলেও বাস্তবে সরকারের এই মেয়াদে জোটের কোনো কর্মসূচি নেই সরকারকে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে : ইনু একলা চল নীতি পরিহার করুন : বাদশা জোটের কাজও নেই, কার্যকারিতাও নেই : আম্বিয়া

রফিকুল ইসলাম রনি

ক্ষমতাসীন জোটে শুধুই হতাশা

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলের শরিক দলগুলোর নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্রমশ হতাশা বাড়ছে। জোটে থেকেও সরকার ও জোট প্রধান আওয়ামী লীগের সঙ্গে শরিকদের এক ধরনের দূরত্ব থেকে এ হতাশা বাড়ছে বলে দলগুলোর নেতা-কর্মীদের অভিযোগ।

দীর্ঘদিন সরাসরি বৈঠক না হওয়া, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একক প্রস্তুতি শুরু, জোট শরিক নেতাদের সরকারে যথাযথ মূল্যায়ন না করায় সংগঠনের নেতারা প্রকাশ্যে ১৪-দলের অস্তিত্ব নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন। তারা বলছেন, নামে জোট থাকলেও বর্তমান সরকার মেয়াদে প্রায় তিন বছরে জোটের দৃশ্যমান কোনো কর্মসূচি নেই। 

জোট শরিকদের অভিযোগ, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে শরিকদের সঙ্গে পরামর্শ ও তাদের মতামত দেওয়ার কোনো পরিস্থিতি জোট শরিকদের নেই। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের দিক থেকেও কোনো যোগাযোগ বা প্রয়োজন মনে করা হচ্ছে না বলে ১৪-দলের নেতাদের অভিযোগ। জোটের রাজনীতির হালচাল সম্পর্কে বাংলাদেশ জাসদ সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনিই এ প্রতিবেদককে প্রশ্ন করেন, ১৪-দলীয় জোট কি আসলে আছে? তিনি বলেন, এখন জোটের কাজও নেই, কার্যকারিতাও নেই। বর্তমানে রাজনৈতিক যে পরিবেশ চলছে, এতে জোট থাকা না থাকার কোনো প্রাসঙ্গিকতা খুঁজে পাই না।’

১৪-দলের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট শরিকদের দূরত্ব চলে আসছে। সম্প্রতি কিছু ঘটনা জোটের শরিক দলগুলোর নেতা-কর্মীদের মধ্যে ১৪-দল সম্পর্কে এ হতাশা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বৈশ্বিক করোনা মহামারী মোকাবিলায় সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় আরও কী কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যায় তা আলোচনার মাধ্যমে বের করা যেতে পারত। শুরু থেকে ১৪-দলের নেতারা ঐকমত্যের ভিত্তিতে পরিস্থিতি মোকাবিলায় করণীয় নির্ধারণের প্রস্তাব দিলেও সরকার বা আওয়ামী লীগের দিক থেকে সাড়া আসেনি।

ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দীর্ঘদিন জোটের বৈঠক হয় না। সরকারের অনেক সিদ্ধান্তে মতামত গ্রহণ করা হয় না। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ এককভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। আমাদের সঙ্গে বৈঠকের প্রয়োজন মনে করেনি। এতে মনে হচ্ছে, আওয়ামী লীগের কাছে জোটের প্রাসঙ্গিকতা নেই। আমরা জোট প্রধান আওয়ামী লীগকে বলব, একলা চলো নীতি পরিহার করুন। জোট সঙ্গীদের নিয়ে চলুন।   জোট শরিক দলের একাধিক নেতা জানান, করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো বন্ধ করে দেওয়ায় হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়েছে। এ পদক্ষেপ ১৪-দলের রাজনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বাস্থ্য খাতের দুর্বলতা দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। বিভিন্ন পর্যায়ে অনিয়ম, দুর্নীতির চিত্র বেরিয়ে আসছে। এসব বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে জোটের শরিকরা কোনো পরামর্শ বা মতামত দিতে পারছে না। ফলে নেতাদের মধ্যে হতাশা ও অবিশ্বাস তৈরি হচ্ছে বলে ওই নেতারা জানান। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে করণীয় কী তা নির্ধারণ করতে আগামীকাল শুক্র ও শনিবার দুই দিনব্যাপী জাতীয় কমিটির সভা ডেকেছে ১৪-দলের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ। সভায় বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দলটির করণীয়, জোটের রাজনীতিতে থাকা না থাকাসহ বিভিন্ন ইস্যু রাখা হয়েছে।  এ প্রসঙ্গে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘করোনার আগে এক ধরনের রাজনীতি পরিবেশ ছিল। এখন আরেক ধরনের রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এখন করণীয় কী সেসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে শুক্র ও শনিবার দুই দিনব্যাপী জাতীয় সভা ডেকেছি। সেখানে সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা বরাবরই বলছি, সরকারকে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। দলবাজি, দখলবাজি, টেন্ডারবাজি, গুন্ডমি বন্ধ করতে হবে। আমরা জোটে থাকলেও ক্ষমতাবহিভর্‚ত কোনো কর্মকান্ড করলে সরকারকে সমালোচনার সম্মুখীন হতে হবে।’  কিছুদিন আগে ওয়ার্কার্স পার্টির এক সভায় ১৪-দলের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ১৪-দলের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, ‘১৪ দলের আন্দোলনের ফসল রাজনৈতিক ক্ষমতা এখন দলীয় ক্ষমতায় পরিণত হয়েছে। পত্রিকায় বিবৃতি ও দিবস পালন ছাড়া ১৪-দলের অস্তিত্ব রয়েছে কি না এ প্রশ্ন শুধু জনগণেরই নয়, ১৪-দলের নেতা-কর্মীদেরও।’ এদিকে ১৪-দলের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও এ জোটের প্রয়োজনীয়তা এখনো বিদ্যমান বলে শরিক দলগুলোর নেতারা জানান। তবে শুধু ১৪-দলের শরিকদের নয়, জোট প্রধান হিসেবে আওয়ামী লীগকেও তা উপলব্ধি করতে হবে বলে তারা জানান। ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘জোটের রাজনীতি এখন নিবু নিবু অবস্থা। জোট প্রধানদের একলা চলো নীতিতে শরিকদের মধ্যে হতাশা বাড়ছেই। আওয়ামী লীগ যেভাবে দেশ চালাচ্ছে, এটা মানুষের পছন্দ নয়। এই হতাশার ভিতর থেকেই নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি হতে পারে-এটা আওয়ামী লীগকে উপলব্ধি করতে হবে। এখনো সময় আছে।’  ১৪-দলের নেতারা বলেন, একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে ১৪-দল গঠন হয়েছিল। ১৪-দলের যে ২৩ দফা তা এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকার ও আওয়ামী লীগের অবস্থান ওই ২৩ দফার কোনো কোনো বিষয়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে পড়ছে। এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে ১৪-দলকে কার্যকর জোটে পরিণত করা জরুরি বলে তারা মনে করছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জোটের শরিক দলের এক সাধারণ সম্পাদক বলেন, জোটের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ এখন আর ন্যূনতম গণতান্ত্রিক চর্চা করছে না। তারা উপেক্ষিত। কিন্তু জোট ছেড়ে কই যাবেন, আবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করে গত ১৭ বছরে তেমন কোনো সাংগঠনিক লাভও হয়নি। সব মিলিয়ে দোটানায় আছেন তারা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর