বৃহস্পতিবার, ৭ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা
আবদুল্লাহপুর থেকে উদ্ধার

জাপান যেতে চেয়েছিল সেই তিন ছাত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

টাকা, সোনার অলঙ্কার ও শিক্ষা সনদ নিয়ে ঘর ত্যাগ করা রাজধানীর পল্লবীর কলেজপড়ুয়া সেই তিন ছাত্রীকে উদ্ধার করেছে র‌্যাব। তারা হলেন মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী কাজী দিলখুশ জান্নাত নিসা, পল্লবী ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী কানিজ ফাতেমা ও দুয়ারীপাড়া কলেজের শিক্ষার্থী স্নেহা আক্তার। গতকাল ভোরে রাজধানীর আবদুল্লাহপুর বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়। র‌্যাব বলছে, উদ্ধার তিন ছাত্রী কক্সবাজার থেকে ঢাকায় ফিরছিলেন। অতিরিক্ত পারিবারিক বিধিনিষেধের ফলে তারা পরিবারের প্রতি বিরক্ত হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অপসংস্কৃতিতে আসক্ত হয়ে পড়েন। পরে স্বাধীন জীবন যাপন ও উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে কক্সবাজারের সমুদ্রপথে জাপান যাওয়ার পরিকল্পনা করে ঘর ত্যাগ করেন। র‌্যাব-৪-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার ওই তিন ছাত্রী নিখোঁজ হওয়ার পর নিসার বড় বোন অ্যাডভোকেট কাজী রওশন দিল আফরোজ বাদী হয়ে পল্লবী থানায় মামলা করেন। মামলার ছায়া তদন্তে ওই তিন ছাত্রীর অবস্থান কক্সবাজার বলে নিশ্চিত হয় র‌্যাব। পরে র‌্যাবের একটি টিম তাদের উদ্ধারে কক্সবাজার গেলে তারা মঙ্গলবার রাতে একটি বাসে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। এরপর আবদুল্লাহপুর থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়। তাদের পল্লবী থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।’ তিন ছাত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তারা তিন বান্ধবী বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অপসংস্কৃতিতে আসক্ত হয়ে পড়েন। দিন দিন লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। ফলে তাদের পরিবার পড়াশোনা ও ধর্মীয় বিধিবিধান মেনে চলার জন্য চাপ দিত। অতিরিক্ত পারিবারিক বিধিনিষেধের ফলে তারা পরিবারের প্রতি বিরক্ত হয়ে পড়েন। পরিবারের এসব আচরণ তাদের কাছে অত্যাচার মনে হতো। তারা মূলত উচ্চাভিলাষী জীবন যাপন পছন্দ করতেন। দীর্ঘদিন বাসায় আবদ্ধ থাকার সময় তারা পশ্চিমা সংস্কৃতি বিশেষ করে জাপানি সংস্কৃতির প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েন। তারা অধিক পরিমাণে জাপানি সিনেমা-সিরিয়াল, সাংস্কৃতিক প্রোগ্রাম দেখে দেখে জাপানি ভাষা কিছুটা আয়ত্ত করেন। তারা দেশ ছেড়ে স্বাধীন জীবন যাপন ও উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে জাপান যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। কারণ জাপানি সংস্কৃতিতে নারী-পুরুষের সমঅধিকার, স্বাধীনতা, দত্তক হওয়ার সুযোগ রয়েছে এবং অন্যান্য ধর্মীয় ও সামাজিক বিধিনিষেধ নেই। এরই ধারাবাহিকতায় তারা দুই মাস আগে তাদের বন্ধু তরিকুলের সঙ্গে দিয়াবাড়ী এলাকায় ঘুরতে গিয়ে হাফসা চৌধুরী নামে এক নারীর সঙ্গে পরিচিত হন। হাফসার সঙ্গে পরিকল্পনা করে কক্সবাজার রুট দিয়ে নৌপথে জাপান যাওয়ার উদ্দেশে তারা তিন বান্ধবী ঘর ত্যাগ করেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে বাসা থেকে বের হওয়ার পর মোবাইল ফোন সেট ভেঙে ফেলেন। পরে তারা হাফসার পাঠানো দুজন লোকের মাধ্যমে একটি মাইক্রোবাসে কমলাপুর রেলস্টেশন পৌঁছান। চট্টগ্রামের ট্রেন না পেয়ে বাসযোগে যান কুমিল্লার ময়নামতি। পথে তারা নতুন মোবাইল সেট কেনাসহ পশ্চিমা বেশভূষা ধারণ করেন। এরপর চট্টগ্রাম থেকে বাসে কক্সবাজার যান। শুক্রবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত তারা কলাতলিতে একটি হোটেলে অবস্থান করেন। এ সময় হাফসার লোক পরিচয়ে আসিফ এবং শফিক নামে দুই ব্যক্তি তাদের কাছে থাকা সোনার অলঙ্কার ও কিছু টাকা নিয়ে নেন। এতে তারা আতঙ্কিত হয়ে আবার নিজেদের বাসায় ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। ডিএমপির পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. পারভেজ ইসলাম জানান, র‌্যাব তিন ছাত্রীকে উদ্ধারের পর পুলিশে হস্তান্তর করে। রাতেই প্রত্যেককে নিজ নিজ পরিবারে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর