বুধবার, ৩ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

আমাদের তো দেশও রক্ষা করতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

আমাদের তো দেশও রক্ষা করতে হবে

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, ১০০ গ্রাম বা তার বেশি পরিমাণ হেরোইনের মামলায়ও সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগ জামিন দিলে চেম্বার আদালত তা স্থগিত ছাড়া কী করবে, আমাদের তো দেশও রক্ষা করতে হবে। গতকাল সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলের এক আবেদনের বিষয়ে এমন মন্তব্য করেন তিনি। সকালে আপিল বিভাগের কার্যক্রম চলাকালে আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল তাঁর একটি মামলায় চেম্বার আদালতের দেওয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চান। তখন আপিল বিভাগ সেটি না দিতে চাইলে রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘মাই লর্ড! আইটেম নম্বর ১১। মাই লর্ড! আমি চেম্বারে স্টে (স্থগিত) পেয়েছি।’ তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘তাহলে এখন আমরা আপনার এটা ভালো করে দেখি। চেম্বারে স্টে যেহেতু পেয়েছেন, তাহলে ভালো করে দেখি। আপনি এটা আবার হেয়ারিং (শুনানি) করেন।’ প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আইনজীবী কাজল বলেন, ‘মাই লর্ড! এটা হেয়ারিং করলে একই রেজাল্ট হবে।’ প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আসেন, করতে থাকেন কতক্ষণ।’ এর মধ্যে স্থগিতাদেশ বহাল রেখে আদেশও দিয়ে দেন প্রধান বিচারপতি।

তখন আইনজীবী কাজল বলেন, ‘হাই কোর্টের রুলসটা পরিবর্তন করে দেন। কারণ আমরা যখন প্র্যাকটিসে আসি তখন থেকে দেখিনি ইন্টেরিম (অন্তর্বর্তী) অর্ডারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রকে আপিল করতে।’ এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘শোনেন! হাই কোর্টে সপ্তাহে অন্ততপক্ষে ১ হাজার জামিনের আদেশ হয়। রাষ্ট্রপক্ষ আপিলে আসে ৫০ বা ১০০টা নিয়ে।’ তিনি আরও বলেন, ‘১০০, ২০০ ও ৩০০ গ্রাম হেরোইন মামলা যদি জামিন দিয়ে দেয়, তাহলে আমরা কী করব? দেশও তো রক্ষা করতে হবে। আমি তো হাই কোর্টে ছিলাম। আমি আন্দাজে জামিন দিইনি। যেটাতে পাওয়ার মতো, সেটাতে দিয়েছি।’ প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘হাই কোর্ট আদেশ দিয়েছে, ব্যাংকের সব ইন্টারেস্ট মাফ। ২০ বছরে টাকা পরিশোধ করবে, তা-ও শুধু মূল অংশ। এ রকম ইন্টেরিম অর্ডার কি কেউ দিতে পারে? প্রথম দিনেই বলতেছে সমস্ত ইন্টারেস্ট বাদ। এ রকম শুধু একটা না, এ রকম তিনটা কোর্ট আদেশ দিয়েছে। এটা নিয়ে ফুল কোর্ট মিটিংয়ে পর্যন্ত বলা হয়েছে। তার পরও বন্ধ হয়নি।’ আইনজীবী কাজল বলেন, ‘গরিব আইনজীবীদের কনসার্ন হলো জামিন। সাধারণ আইনজীবী দু-একটা জামিন নিয়ে কাজ করেন।’ তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা তো ১০ হাজার ফেনসিডিল বোতল পর্যন্ত ধরি না।’ আইনজীবী কাজলের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘হাই কোর্টে এখন এত আগাম জামিন হয় এটা আগে দেখেছেন কখনো? এখন প্রতিটি কোর্টেই আগাম জামিন হয়। ধর্ষণ মামলা, খুনের মামলা, হেরোইনের মামলায় যদি আগাম জামিন নিয়ে নেয় তাহলে আমরা কী করব? আমাদের আপিলের রায় কি মানে?’ এ সময় কাজল বলেন, ‘প্রত্যেকটা মামলাতে ভিন্ন ভিন্ন ফ্যাক্ট রয়েছে। এখানে (আপিলে) যত সহজে মামলা নিষ্পত্তি হয়, হাই কোর্টে একটি মামলায় জামিন পাওয়া গলদঘর্ম হয়ে যায়।’ প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘হ্যাঁ, গলদঘর্ম হয়ে যায়। হাই কোর্টে প্রতিদিন ৩০০ জামিন হয় আর বলছে গলদঘর্ম হয়ে যায়!’ ওই সময় জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ইমান আলী বলেন, ‘মিস্টার রুহুল কুদ্দুস! এই যে ধর্ষণ, হত্যা মামলাগুলা দেখে দেখে স্টে (স্থগিত) দিচ্ছি, এটা কি আনজাস্টিফাই মনে করছেন? ধর্ষণ মামলায়, খুনের মামলায় জামিন দিয়ে দিচ্ছে, সেগুলো এখানে নিয়ে আসবে না?’ আপিল বিভাগের আরেক বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান বলেন, ‘মিস্টার রুহুল কুদ্দুস! নিজের চেহারার দিকে তাকান। বারের সেক্রেটারির রুমে বসে কেউ মামলা করে নাই। আমরাও বার রিপ্রেজেন্ট করেছি। সভাপতি-সম্পাদকের রুমে মক্কেল জায়গা দিইনি। আপনি দীর্ঘদিন যাবৎ এখানে বসে প্র্যাকটিস করতেছেন।’ তখন কাজল বলেন, ‘মাই লর্ড! আপনি আমাকে ব্যক্তিগতভাবে বলছেন।’ তখন বিচারক বলেন, ‘আপনি তো ব্যক্তিগতভাবে কোর্টকে বলছেন।’ আইনজীবী কাজল বলেন, ‘এখন ভার্চুয়ালি শুনানি হচ্ছে। আপনারা আপনাদের চেম্বারে বসে করছেন। আমি আমার সেক্রেটারির চেম্বারে বসে করছি।’ বিচারপতি নূরুজ্জামান বলেন, ‘হ্যাঁ, সেক্রেটারির রুম দিয়েছে আপনাকে প্র্যাকটিস করার জন্য!’ পরে অ্যাটর্নি জেনারেলের হস্তক্ষেপে প্রধান বিচারপতি পরবর্তী আইটেম কল করতে বলেন। এরপর অন্য মামলার শুনানি হয়।

সর্বশেষ খবর