শুক্রবার, ১২ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক : সচিব

নিজস্ব প্রতিবেদক

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব আনিছুর রহমান বলেছেন, ‘তেল আমদানি করা ছাড়া আমাদের উপায় ছিল না। দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক। আমলারা এত বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। এ কাজটি আমরা করিনি। আর তেলের দাম কমালেও পরিবহন নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।’ গতকাল ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স অব বাংলাদেশ (এফইআরবি) আয়োজিত ওয়েবিনারে তিনি এসব কথা করেন। এফইআরবি চেয়ারম্যান অরুণ কর্মকারের সভাপতিত্বে সেমিনার সঞ্চালনা করেন নির্বাহী পরিচালক শামীম জাহাঙ্গীর।

আনিছুর রহমান বলেন, ‘অর্থনীতিতে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কিন্তু বিপিসির হাতে অর্থ ছিল না। আমদানি বন্ধ হয়ে গেলে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। সরবরাহ ঠিক রাখতে হলে চাইলেই দাম কমানো যায় না। বিশ্ববাজারে দাম কমার সঙ্গে সঙ্গে দেশে সমন্বয় করা হবে। তবে তেলের দাম কমানোর পর পরিবহনভাড়া কমবে কি না সে নিশ্চয়তা জ্বালানি বিভাগ দিতে পারবে না। পেট্রোল ও অকটেনের আপাতত দাম বাড়ানোর কোনো চিন্তা নেই। আমদানি করা তেলের মধ্যে ৭৩ ভাগই ডিজেল। আর অকটেন ও পেট্রোল খুবই কম আমদানি হয়। ফলে এ দুটির দাম বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা আমরা করিনি। অযথা গুজব রটানোর দরকার নেই।’ তিনি বলেন, ‘ডিজেলের তুলনায় কেরোসিনের ব্যবহার মাত্র ১.৬ ভাগ। কিন্তু মিশ্রণের কারণে সমন্বয় করতে গিয়ে দাম একই রকম করেই বাড়ানো হয়েছে। বিপিসি জেট ফুয়েল, এইচএফও, এলপিজি নিয়মিত অ্যাডজাস্ট করছে। নিয়মিত ডিজেলের দাম কমানো-বাড়ানো হলে তো পরিবহনে কোনো পরিবর্তন আসবে না। এটা নিয়ন্ত্রণ আমাদের দায়িত্ব হলেও নেতাদের নানা দাবি, যাত্রীদের জিম্মি করে বেশি ভাড়া আদায় আমাদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।’ আনিছুর রহমান আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমে এলে সঙ্গে সঙ্গে সমন্বয় করা হবে। কিন্তু পরিবহনের বিষয়ে আমাদের কিছু করার নেই। আমরা বুঝতে পারছি সাময়িকভাবে অর্থনীতিতে একটু চাপ পড়বে। কভিড-উত্তর রিকভারিতে একটু সমস্যা হবে। কিন্তু আমাদের উপায় ছিল না। আন্তর্জাতিক বাজারে সব পণ্যের দাম বেড়েছে। গ্যাসের পাইপের দামও বেড়েছে, আমরা অনেক প্রকল্প রিভাইস করেছি। সারের দামও বেড়েছে। একই অবস্থা এলএনজির ক্ষেত্রেও।’ বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ বলেন, ‘এককভাবে জ্বালানির দাম বাড়ানোর এখতিয়ার নেই বিপিসির। বিপিসি আমদানি করে, বিক্রি করে। জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি সরকারের সিদ্ধান্ত। বিপিসি শুধু এটা বাস্তবায়ন করেছে। গত কয়েক বছরে যে মুনাফা করেছে বিপিসি, সে টাকা দিয়ে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বেশ কিছু প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এতে ৩০-৩৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। শুধু এসপিএম বাস্তবায়ন হলে মাসে ৮০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।’ বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘তেলের দাম বেড়েছে, গ্যাসের দাম ৪-৫ গুণ বেড়েছে, কয়লার দামও বেড়েছে ৫ গুণ। সবকিছু একসঙ্গে জাতির কাঁধে ভর করেছে। জুলাই ২০২০ থেকে জুন ২০২১ পর্যন্ত বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ হয়েছিল ৫০ হাজার কোটি টাকা। ক্যাপাসিটি ২৫ হাজার কোটি টাকা, জ্বালানি ২৫ হাজার কোটি টাকা। ১১ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়েছে।’ জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইজাজ হোসেন বলেন, ‘ডিজেল নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ ব্যবহার করে। তাই পেট্রোল-অকটেনের তুলনায় কম দাম রাখার দর্শন কাজ করত। আমরা কি সে দর্শন থেকে বের হয়ে আসছি?’ ক্যাবের জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, ‘তেলের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়াটি আইনসিদ্ধ হয়নি। আইনে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর এখতিয়ার বিইআরসিকে দেওয়া হয়েছে। অবিলম্বে তেলের দাম বৃদ্ধির আদেশ প্রত্যাহার করে বিইআরসিতে পাঠিয়ে দেওয়া হোক। তারা যাচাই-বাছাই করে দেখুক আদৌ তেলের দাম বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা আছে কি না। বিপিসির কার্যক্রম নিরীক্ষা করা উচিত।’ তাদের আয়-ব্যয়ে স্বচ্ছতা নেই বলে অভিযোগ করেন তিনি। সভাপতির বক্তব্যে অরুণ কর্মকার বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সুবিবেচনা আসেনি। পরিবহন সেক্টরের বিষয়ে সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকবে না কেন তা নিয়ে সরকারের ভাবা উচিত। আমাদের মূল লক্ষ্য সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমানো, সেটাই সবার লক্ষ্য হওয়া উচিত।’ অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি এ কে এম হাতেম, সিপিডি পরিচালক (গবেষণা) খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, বিজিএমইএ পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল, যাত্রীকল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর