বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য, আজকে স্বাধীনতার ৫০ বছর পার করছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত বিএনপি তাদের পাকিস্তানি প্রেম দেখিয়েই যাচ্ছে। আজকেও বক্তৃতায় পাকিস্তান প্রেম দেখলাম। খালেদা জিয়া অসুস্থ, তাঁকে নিয়ে কথা বলতে চায় না। বিএনপিকে বলব, এখনো সময় আছে, আপনাদের পাকিপ্রেমটা দূরে রাখুন।’
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে একাদশ জাতীয় সংসদের ১৫তম অধিবেশনের সমাপনী দিনে গতকাল পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে তিনি এসব কথা বলেন। রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে আমাদের গৌরবের অধ্যায়কে ধ্বংস করার জন্য যে চক্রান্ত চলছে, এর বিরুদ্ধে আমাদের এক হতে হবে। বিএনপিকে বলব, এখনো সময় আছে, আপনাদের পাকিপ্রেমটা দূরে রাখুন। খেলা নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষ থাকবে। কিন্তু বাংলাদেশে অন্য দেশের পতাকা উড়বে না। তারা উদাহরণ দিয়েছেন, অন্য দেশের খেলার মাঠে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ে। হ্যাঁ তোলে, সেখানে কিন্তু বাংলাদেশিরা তোলে। এখানে পাকিস্তানিরা তুললে আমার কোনো কথা ছিল না। এখানে বাংলাদেশের তরুণদের বিভ্রান্ত করা হয়েছে।’
রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘আমি গতকাল (শনিবার) ফ্লোর চেয়েছিলাম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে। কারণ, এই হাউসে ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, সেটা কেবল অসত্যই নয়, তিনি তার বক্তব্যে চালাকির সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ১৯৭৪ সালের জাতিসংঘের বক্তব্যকেও টেনে এনেছিলেন। এটা গুরুত্বপূর্ণ এই যে, গণমাধ্যমে এসেছে তিনি পাকিস্তানি ক্রিকেট দল নিয়ে কথা বলায় সংসদে হইচই হয়েছে। বরং তিনি (এমপি হারুন) যেটা করতে চেয়েছিলেন, সেটা হচ্ছে পাকিস্তানি পতাকা ওড়ানোর পক্ষে যৌক্তিকতা দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছেন।’রাশেদ খান মেনন এরকম ঘটনা এখন শুধু নয়, বাংলাদেশ সৃষ্টির পরও হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘১৯৭৪ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর সফর ঘিরে পরিকল্পিত ঘটনা ঘটানো হয়েছিল। আজকে আবার ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের পতাকা ওড়ানোর চেষ্টা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমি আমার সুবর্ণজয়ন্তীর বক্তব্যে বলেছিলাম, পাকিস্তানের পতাকা ওড়ানোর ঘটনা পরিকল্পিত কি না আমি জানি না। আজকে দেখছি, এটা পরিকল্পিত। পরশু ভারতের মুম্বাইয়ে সন্ত্রাসী হামলার বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধান অতিথি ছিলেন। তার সামনে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেছিলেন, মাঠে যে পাকিস্তানি পতাকা ওড়ানোর ঘটনা তার সঙ্গে পাকিস্তান হাইকমিশন জড়িত। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জঙ্গি উত্থান নিয়ে বলেছিলেন, পাকিস্তানি গোয়েন্দারা জঙ্গি দমন নিয়ে আমাদের বিব্রত করেছেন।’ রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘দেশে বর্তমানে যে জঙ্গি উত্থান রয়েছে, তার সঙ্গে পাকিস্তানের গোয়েন্দারা জড়িত রয়েছে কি না আমরা জানি না।’ তিনি বলেন, ‘ক্রিকেটপ্রেম এক জিনিস, জাতীয় প্রেম, গৌরব ও পতাকা আরেক জিনিস। খেলার মাঠে তাদের সমর্থন করতে পারি। কিন্তু তার জন্য তরুণরা পাকিস্তানের পতাকা নিয়ে মাঠে যাবে, তাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা হচ্ছে। এটা পরিকল্পিতভাবে করা হচ্ছে। সুবর্ণজয়ন্তীর এই সময়ে মুক্তিযুদ্ধের গৌরববোধকে ধ্বংসের প্রচেষ্টা লক্ষ্য করছি।’ তিনি বলেন, ‘এখনো পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের অনেক বিষয় অমীমাংসিত রয়ে গেছে। তারা আমাদের সম্পদ ফেরত দেয়নি। আমাদের হিসাব দেয়নি। কিন্তু পাকিস্তান হাইকমিশন যে কাজ করছে, সেটি যথাযথ নয় বলে মনে হয়। আমাদের দুর্ভাগ্য হচ্ছে, পাকিস্তান হাইকমিশনে যে অনুষ্ঠান হয়, আমাদের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো স্পন্সর করে। তাদের সেই কার্ডের মধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম আপনারা দেখতে পারেন। আমরা দেখেছিলাম যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরীর বিচারের সময় সাফাই গাওয়ার জন্য লোক দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। বহু কষ্টে তা ঠেকানো গিয়েছিল। এগুলো তো ইতিহাস।’