মঙ্গলবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

৪৭.০৬ শতাংশ ইউপিতে পরাজয় আওয়ামী লীগের

গোলাম রাব্বানী

তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৪৭.০৬ শতাংশ ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে পরাজিত হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৫২.৯২ শতাংশ; স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৪৪.৯৫ শতাংশ ও জাপাসহ অন্যান্য দল ২.১১ শতাংশ ইউপিতে জয় পেয়েছে।

মোট ভোট পড়েছে ৭৪.২১ শতাংশ। ইসির প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণে এ তথ্য পাওয়া গেছে। ইসি সূত্র জানিয়েছে, তৃতীয় ধাপের ১০০৮ ইউপি তফসিল হলেও মামলা ও অন্যান্য জটিলতায় নির্বাচন স্থগিত হয় ৭ ইউপির; ৯ ইউপির বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র স্থগিত রয়েছে। ফলে ১০০৮ ইউপির মধ্যে ইসি গতকাল ৯৯২ ইউপির ফলাফল প্রকাশ করেছে। প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৯৯২ ইউপির মধ্যে ৫২৫ ইউপিতে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। যা মোট ফলাফলের ৫২.৯২ শতাংশ। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৪৪৬ ইউপিতে বিজয়ী হয়েছেন, যা ৪৪.৯৫ শতাংশ। আর জাতীয় পার্টি ও অন্যান্য দল জয় পেয়েছে ২১ ইউপিতে, যা ২.১১ শতাংশ। দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ ৪৭.০৬ শতাংশ ইউপিতে হেরে গেছে।

ইসি জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের ৫২৫ চেয়ারম্যানের মধ্যে ৯৯ জন বিনা ভোটে হয়েছেন। আর স্বতন্ত্র ৪৪৬ জনের মধ্যে একজন বিনাভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। এ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা ১৭ ইউপিতে চেয়ারম্যান হয়েছেন। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ১, ওয়ার্কার্স পার্টি ১, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ১ ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ১ ইউপিতে বিজয়ী হয়েছেন।

দেখা গেছে, অনেক ইউপিতে জামানত হারিয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী। আবার স্বতন্ত্র বিজয়ী প্রার্থীদের মধ্যে বিএনপি-জামায়াত সমর্থকরাও চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন। তৃতীয় ধাপে ২১ ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিল না।

দুই ধাপে ৪২৪ ইউপিতে পরাজিত : প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের ১১৯৮ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা দলীয় বিদ্রোহী, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দলের প্রার্থীদের কাছে ৪২৪ ইউপিতে পরাজিত হয়েছেন। অনেক ইউপিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জামানতও হারিয়েছেন। দ্বিতীয় ধাপে সর্বোচ্চ ভোট পড়েছে ৮৯.৭৬ শতাংশ। সর্বনিম্ন ভোট পড়েছে ৪২.২৮ শতাংশ। গড় ভোট পড়েছে ৭৩.৪৯ শতাংশ।

ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ইউপির দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের মধ্যে প্রায় ৪২ শতাংশই পরাজিত হয়েছেন। যদিও প্রথম ধাপের ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা ৭৩.৪৮ শতাংশ বিজয়ী হয়েছিলেন। আর ওই ধাপে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছিলেন ২৪.২২ শতাংশ ইউপিতে।

 

দুই ধাপের ভোটে ৪২৪ ইউপিতে নৌকার কেন পরাজয়, সেই হিসাব-নিকাশ করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলের হাইকমান্ড বিদ্রোহীদের কাছে নৌকা প্রতীকের পরাজয়ের কারণ বিশ্লেষণ করছেন।

ইসি সূত্র জানিয়েছে, প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের ভোটে ২০ ইউপিতে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক ছিল না। এসব ইউপিতে দলীয় মনোনয়ন উন্মুক্ত রাখা হয়েছিল। সেই হিসাবে দুই ধাপের ১১৯৮ ইউপি ভোটে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে ১১৭৮ জন প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এর মধ্যে বিজয়ী পেয়েছেন ৭৫৪ জন তথা ৭৫৪ ইউপিতে। অন্য প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন ৪৪৪ ইউপিতে। তবে ২০ ইউপিতে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন না দেওয়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিদ্রোহী ও অন্য দলের প্রার্থীর কাছে হেরেছেন ৪২৪ ইউপিতে।

ইসি জানিয়েছে, গত ১১ নভেম্বরের দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ৫৮.২৭ শতাংশ জয়ী হয়েছেন। বাকি ৪১.৭৩ শতাংশ নৌকার প্রার্থী নিজ দলের বিদ্রোহী, স্বতন্ত্র (বিএনপি), অন্যান্য দলের প্রার্থীদের কাছে পরাজিত হয়েছেন। এই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়েছেন ৩৯.৫৬ শতাংশ। তাদের মধ্যে বিএনপি-জামায়াত নেতারাও আছেন।

ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রথম ধাপের তুলনায় দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের ভোট কমেছে। দ্বিতীয় ধাপের ৮৩৩টি ইউপির মধ্যে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন ৪৮৫টিতে। এর মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৮১ জন এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৪০৪ জন জয়ী হন। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন ৩৩০টিতে। এ ছাড়া এই ধাপে জাতীয় পার্টি ১০টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ৪টি এবং জাতীয় পার্টি (জেপি), খেলাফত মজলিশ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি একটি করে ইউপিতে জয়ী হয়েছে।

প্রথম ধাপে গত ২১ জুন ও ২০ সেপ্টেম্বরের ভোটে নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা ৭৩.৪৮ শতাংশ ইউপিতে জয়ী হন। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছিলেন ২৪.২২ শতাংশ ইউপিতে। ওই নির্বাচনে ৩৬৫টি ইউপির মধ্যে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা ২৬৯টিতে জয়ী হন। এর মধ্যে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৭২টি ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১৯৭টিতে জয়ী হন। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হন ৮৮টি ইউপিতে। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি ৩টি, জাতীয় পার্টি (জেপি) তিনটি এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি একটি করে ইউপিতে জয়ী হয়।

সর্বশেষ খবর