শুক্রবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
নিরাপদ সড়ক দাবির আন্দোলন

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে পুলিশের বাধা, আজ ফের জমায়েত

নিজস্ব প্রতিবেদক

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে  পুলিশের বাধা, আজ  ফের জমায়েত

নিরাপদ সড়কের দাবিতে গতকাল রাজধানীর রামপুরায় বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সীমিত কর্মসূচি পালন করতে গেলে গতকাল পুলিশের বাধার মুখে পড়ে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশের বাধা ঠেলে নিরাপদ সড়কসহ নানা দাবিতে রাজধানীর রামপুরা ব্রিজের ওপর বিক্ষোভ করে তারা।

গতকাল দুপুর ১২টা থেকে শিক্ষার্থীদের অবস্থান করার কথা থাকলেও শুরুতে পুলিশের বাধায় তারা প্রথমে নামতে পারেনি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রদের সংখ্যাও  বাড়তে থাকে। পরে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী দুপুর দেড়টা থেকে ২টা পর্যন্ত সড়কে অবস্থান করে। বিক্ষোভে তারা নিরাপদ সড়ক চেয়ে নানা স্লোগান দিতে থাকে। রাজধানীতে সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত দুই ছাত্রের উদ্দেশে দুই মিনিট নীরবতাও পালন করা হয়। রামপুরা ব্রিজের ওপর আজ শুক্রবারও সকাল ১০টায় আবার জমায়েতের ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।

ঘোষণা অনুযায়ী- গতকাল বেলা ১২টায় রামপুরা ব্রিজের ওপর দাঁড়াতে গেলে পুলিশ শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেয়। এ সময় কয়েক শিক্ষার্থী পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে দাঁড়াতে গেলে নারী পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে তাদের ধাক্কাধাক্কি হয়। দুজন শিক্ষার্থীকে ব্রিজ থেকে সরিয়ে বনশ্রী সড়কে নামিয়ে দেয় পুলিশ। পরে সেখানেই তারা দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করে। বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা ‘পুলিশ দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না’ ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ ‘আমরা আছি থাকব, যুগে যুগে লড়ব’ ‘একাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার’ ‘জেগেছেরে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকে।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তারা ১২টার দিকে রামপুরা ব্রিজে এসে দাঁড়াতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। তাদের লাঞ্ছিতও করা হয়। পুলিশ কয়েকজনের ফোন নম্বর, বাসার ঠিকানা নিয়েছে বলেও জানান তারা।

বিক্ষোভকালে খিলগাঁও মডেল কলেজের শিক্ষার্থী সোহাগী সামিয়া বলেন, পরীক্ষা থাকায় আজকে সড়কের এক পাশে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করার কথা ছিল। সড়ক অবরোধ বা যানচলাচলে বাধা দেওয়ার কর্মসূচি ছিল না। কিন্তু পুলিশ আমাদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। সামিয়া বলেন, ‘পুলিশ আজ যা করেছে, তার প্রতিবাদে আমরা এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর আন্দোলন করব। জেলখানা বড় করেন আমরা আসতেছি। পুলিশ আমাদের আজ আটকিয়েছে, তাদের কাছে বন্দুক আছে, কামান আছে, হাতিয়ার আছে। এক মাঘেই তো শীত চলে যায় না। আজকে আমাদের আটকিয়েছে। ছাত্ররা যখন দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে মাঠে নামবে, তখন কীভাবে আটকাবে? ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে যখন জনগণ রাস্তায় নামবে, তখন তাদের কিছু করার থাকবে না।’ রাব্বি নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ২০১৮-এর আন্দোলন থেমে গেছে কিন্তু ছাত্ররা হাল ছেড়ে দেয়নি। তাই তারা আবার রাস্তায় নেমেছে। পুলিশ আমাদের সঙ্গে নয় সাংবাদিকদের সঙ্গেও খারাপ আচরণ করেছে। তারা আমাদের দাঁড়াতে দেয়নি। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে দাঁড়াতে চেয়েছি। পুলিশ আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে। আমাদের ফোন নম্বর বাসার ঠিকানা নিয়েছে। হয়তো আমাদের নামে মামলা দেবে।

তবে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) নুরুল আমীন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ছাত্রছাত্রীরা যাতে তাদের দাবি জানাতে পারে সে ব্যবস্থা আমরা আগেই করে দিয়েছি। ছাত্রদের আন্দোলনে কিছু কুচক্রী ঢুকে পড়েছে। তারা আন্দোলনকে ভিন্ন দিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। আগের দিন থেকেই আমরা এটা খুব সূক্ষ্মভাবে ফলো করছি। আপনারা জানেন প্রধানমন্ত্রী এরই মধ্যে তাদের প্রস্তাব মেনে নিয়েছেন। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যেহেতু মেনে নেওয়া হয়েছে, সেখানে আন্দোলন করার কোনো সুযোগ নেই। রোগীসহ সাধারণ মানুষের রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে সমস্যা হচ্ছে। তাদের যেন কোনো সমস্যা না হয় আমরা সেদিকে খেয়াল রাখছি।’

উল্লেখ্য, বাস ভাড়া অর্ধেক করার দাবিতে ছাত্রদের আন্দোলনের মাঝে গত ২৯ নভেম্বর রাতে রামপুরায় অনাবিল পরিবহনের বাসের ধাক্কায় এসএসসি পরীক্ষার ফলপ্রার্থী এক ছাত্রের মৃত্যু হয়। এর আগে ২৪ নভেম্বর গুলিস্তানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একটি ময়লার গাড়ির ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই নিহত হয় নটর ডেম কলেজের এক ছাত্র।

 

এরপর থেকে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনাসহ নানা দাবিতে প্রতিদিনই রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করে আসছে শিক্ষার্থীরা। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের পেছনে যারা জড়িত, তাদের বিচারের পাশাপাশি অন্যতম একটি দাবি ছিল বাস ভাড়া অর্ধেক করা।

সর্বশেষ খবর