বৃহস্পতিবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন আমাদের গর্বের

সেলিনা হোসেন

বিজয় দিবসের সুবর্ণজয়ন্তী স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের একটি গৌরবময় জায়গা। আমরা ১৯৭১ সালে যে বিজয় অর্জন করেছি তার বর্ণাঢ্য সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে দেশের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের আগামী প্রজন্ম এগিয়ে যাবে এই মর্যাদা নিয়ে। ১৯৭২ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ফিরে ভাষণে বলেছিলেন- ‘আমি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে চাই। ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র হবে সবার। আমি সবাইকে মানুষ হিসেবে, নাগরিক হিসেবে দেখি। সবার অধিকার রাষ্ট্রের কাছে থাকবে।’ অথচ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশে সাম্প্রদায়িক হামলা হলো। দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজামণ্ডপে হামলা হলো। আমরা মনে করি এ বিষয়গুলো সরকারের গভীর বিবেচনায় থাকা উচিত। বাংলাদেশ নিয়ে স্বপ্নের বড় দিক ছিল অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। কিন্তু ৫০ বছরেও আমরা সেই জায়গা তৈরি করতে পারলাম না। এই ব্যর্থতা আমাদের জীবনের একটি বিষণ্ন অন্ধকার। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় আমরা বেশ কিছুটা এগিয়েছি। বহির্বিশ্বে আমাদের খ্যাতি বেড়েছে। ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। এভাবে বাংলাদেশের সৃজনশীল দিকটি চমৎকারভাবে বিশ্বের ছোট ছোট রাষ্ট্রের অধিকার নিশ্চিতের প্রতীক হয়ে উঠেছে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কো ঐতিহ্যিক প্রামাণিক দলিল হিসেবে সংরক্ষণ করেছে। এটাও আমাদের আন্তর্জাতিক মর্যাদার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বিশ্বের দরবারে নিজেদের তুলে ধরতে পেরেছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলা ভাষায় জাতিসংঘে ভাষণ দিয়েছেন। আমরা আমাদের মাতৃভাষার মর্যাদা ধরে রেখেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেকগুলো পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁর অর্জনগুলো আমাদের আন্তর্জাতিক খ্যাতি বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর একটি বক্তব্য আমাকে ভীষণ অনুপ্রাণিত করেছে। তিনি বলেছেন, ‘এ দেশে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না।’ এ দৃঢ় অঙ্গীকার ধারণ করে বিশ্বের দরবারে আমাদের অবস্থান প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। তারপরও আমি বলব- আরও কিছু দিকে আমাদের নজর দেওয়া জরুরি। কিছু মানুষ দুর্নীতি করে লজ্জার কারণ তৈরি করেছে। এর ফলে আমরা মানুষের অধিকার বিপন্ন হতে দেখছি। এসব দুর্নীতি আমরা কেন সহ্য করব? আমাদের সামাজিক মূল্যবোধের দৃঢ় ভিত্তি নস্যাৎ করছে কিছু লোক। এদের কঠোর শাস্তি দেওয়া জরুরি। দেশে শিশু ও নারী নির্যাতনের ঘটনাকে আমাদের লজ্জার বড় দিক মনে করি। কেন এ ধরনের ঘটনা স্বপ্নের বাংলাদেশে ঘটবে তা আমি মেনে নিতে পারি না। কেন কঠোর শাস্তি দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে নারী নির্যাতন, ধর্ষণ বন্ধ করা যাচ্ছে না? সেটা আমার প্রশ্ন। এ দিকগুলো আমাদের সামাজিক মূল্যবোধকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। মানবিক চেতনা ও মূল্যবোধকে বড় করে দেখতে হবে। সেটাই বিশ্বের দরবারে আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন হয়ে উঠবে।

অনুলিখন : জয়শ্রী ভাদুড়ী

সর্বশেষ খবর