মঙ্গলবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

পরিবর্তন আসছে ইসি গঠন আইনে

দুই কমিশনের দায়মুক্তি নিয়ে পাল্টাপাল্টি বিএনপি ও আইনমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

পরিবর্তন আসছে ইসি গঠন আইনে

আলোচিত নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন আইনে দুটি পরিবর্তন আসছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনার (ইসি) হিসেবে নিয়োগের যোগ্যতা ও অযোগ্যতার শর্তে দুটি সংশোধনী এনে এই পরিবর্তন আনার সুপারিশ করেছে আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। আগামীকাল জাতীয় সংসদের অধিবেশনে এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হতে পারে। সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে সংসদে উত্থাপিত খসড়া আইনের ৫(গ) ও ৬(ঘ) ধারায় সংশোধনী এনে বিলের প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে খসড়া আইনের যে ৯ নম্বর ধারা নিয়ে বিএনপির আপত্তি, তা এবারও উপেক্ষিত হয়েছে। ৯ নম্বর ধারায় আগের দুই নির্বাচন কমিশনকে দায় মুক্তি দেওয়ার বিধানের সংশোধনীর প্রস্তাব দিয়েছিল বিএনপি। সেটা গৃহীত হয়নি। কমিটির সভাপতি শহীদুজ্জামান সরকার বলেছেন, ‘ইনডেমনিটি বলছে অনেকে। আসলে ওটা ইনডেমনিটি নয়। বিলের ৯ নম্বর ধারায় আগের দুটি সার্চ কমিটির বৈধতা দেওয়া হয়েছে। কমিশনের কার্যক্রমকে হেফাজত করার বিষয় নয়।’ আর এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সাফ জবাব ছিল, ‘দায়মুক্তির রাজনীতি করে না আওয়ামী লীগ।’

গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত ‘আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ১৮তম বৈঠকে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২’ এর দুটি সংশোধনী গ্রহণ করে বিলটি চূড়ান্ত করা হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি মো. শহীদুজ্জামান সরকার। অংশ নেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক, মোস্তাফিজুর রহমান, মোঃ শামসুল হক টুকু, মো. আবদুল মজিদ খান, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, রুমিন ফারহানা ও সেলিম আলতাফ জর্জ।

জানা যায়, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২’ বিলের সংশোধনীতে কমিটি যোগ্যতার ক্ষেত্রে সিইসি ও ইসি নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি পদের পর ‘স্বায়ত্তশাসিত ও অন্যান্য পেশা’ শব্দযুগল যুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া অযোগ্যতার ধারায় পরিবর্তন এনে ‘নৈতিক স্খলন ও ফৌজদারি অপরাধে যে কোনো মেয়াদের সাজা হলেই সিইসি বা ইসি হওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য হবেন’ বাক্যটি যুক্ত করা হয়েছে। আগে এ ধারায় ‘অন্যূন দুই বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত’ শর্তযুক্ত ছিল। বৈঠক শেষে কমিটির সদস্য ও বিএনপির এমপি ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা সাংবাদিকদের বলেন, ৯ নম্বর ধারা নিয়ে আপত্তি আমাদের। দায়মুক্তির কথা বলা হয়েছে এ আইনটিতে। এ বিষয়ে সংসদে সংশোধনী আনবেন তারা।

বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি শহীদুজ্জামান সরকার সাংবাদিকদের বিলের পরিবর্তনের বিষয়টি জানিয়ে বলেন, ‘সংসদীয় কমিটি বিস্তারিত আলোচনা করে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে। আমরা যোগ্যতা ও অযোগ্যতার জায়গায় কিছু পরিবর্তন এনেছি। দুই বছরের কারাদন্ডের জায়গাটা পরিবর্তন করা হয়েছে। দুই বছর উঠিয়ে দিয়ে কারাদন্ড করে দেওয়া হয়েছে। আর সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি পদের পাশাপাশি ‘স্বায়ত্তশাসিত ও অন্যান্য পেশা’ যুক্ত করার জন্য সুপারিশ করেছি।’ সংসদে উত্থাপিত বিলের ৯ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগদানের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক এরআগে গঠিত অনুসন্ধান কমিটির ও তৎকর্তৃক সম্পাদিত কার্যাবলি এবং উক্ত অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগ বৈধ ছিল বলে গণ্য হবে এবং উক্ত বিষয়ে কোনো আদালতে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না।’ এ প্রসঙ্গে কমিটির সভাপতি বলেন, ‘আগের দুটো কমিশনের কার্যক্রমকে হেফাজত দেওয়ার বিষয় এখানে আসেনি। শুধু সার্চ কমিটির বৈধতা দেওয়া হয়েছে।’

এদিকে, সংশোধনী আনা বিলের ৫(গ) ধারায় যোগ্যতার ক্ষেত্রে বলা আছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও কমিশনার হতে গেলে, কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি পদে তার অন্যূন ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কমিটির গতকালের বৈঠকে এই ধারায় বেসরকারি পদের পরে ‘স্বায়ত্তশাসিত ও অন্যান্য পেশা’ ?শব্দগুচ্ছ যুক্ত করে সংশোধনের সুপারিশ করেছে। এ ছাড়া বিলের ৬(ঘ) ধারায় অযোগ্যতার ক্ষেত্রে বলা আছে, নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত হলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও কমিশনার নিয়োগের জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবেন। কমিটি দুই বছরের কারাদন্ডের মেয়াদ শব্দগুচ্ছের পরিবর্তে যে কোনো মেয়াদে ‘কারাদন্ডে’ শব্দ প্রতিস্থাপনের সুপারিশ করেছে। অর্থাৎ, নৈতিক স্খলন ফৌজদারি অপরাধে যে কোনো মেয়াদের সাজা হলেই আর কেউ সিইসি বা ইসি হওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন।

সর্বশেষ খবর