বুধবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা
একনেকে ১০ প্রকল্প অনুমোদন

বারবার প্রকল্প সংশোধনে বিরক্ত প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

বারবার প্রকল্প সংশোধনে বিরক্ত প্রধানমন্ত্রী

বারবার প্রকল্প সংশোধনে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তিনি বিরক্তি প্রকাশ করেন বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

গতকালের একনেক সভায় ৪ হাজার ৬২১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ের ১০টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এর পাঁচটিই সংশোধন প্রকল্প। একটি প্রকল্প তৃতীয়বারের মতো সংশোধন প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে রাজধানীর শেরেবাংলানগরে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এতে যোগ দেন। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সংবাদ সম্মেলনে সভার বিষয়বস্তু সম্পর্কে অবহিত করেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বারবার প্রকল্প সংশোধন করা হয়। একনেক সভায় ১০টি প্রকল্প উপস্থাপন করা হয়, এর মধ্যে পাঁচটিই সংশোধিত। এভাবে বারবার সংশোধিত প্রকল্প একনেক সভায় আসছে বলে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া সিলেট অঞ্চলে অনেক জমি পতিত। এসব জমির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। সভা শেষে বিষয়টি তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একমত। সিলেট অঞ্চলে নানা কারণে অনেক জমি পতিত পড়ে আছে, কোনো ব্যবহার হয় না। জমিগুলো যেন ব্যবহার হয়, সেজন্য আমি সিলেটবাসীকে প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রায় জানিয়ে দেব। প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রায় তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের সারের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু উৎপাদন করতে গেলে গ্যাসের সংকট হয়। ফলে বিদেশে সার কারখানা নির্মাণে দেশের উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করতে পারবেন। সেই সার দেশে ব্যবহার করা যায় কি না- সেই সম্ভাবনাটা বেসরকারি খাত উন্মোচন করতে পারে। তিনি বলেন, বিদেশে উৎপাদিত সার বাংলাদেশের চাহিদা মেটাবে। উদ্যোক্তারা চাইলে বাইরের দেশেও সার কারখানা নির্মাণে বিনিয়োগ করতে পারবেন। এর মাধ্যমে গ্যাসের সংকট কমবে এবং বিদেশে বিনিয়োগও বাড়বে। তবে দেশের স্বার্থ যেন আগে রক্ষা হয়, সে বিষয়টি উদ্যোক্তাদের নিশ্চিত করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, একনেক সভায় ৭২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘ইউরিয়া ফরমালডিহাইড-৮৫ প্লান্ট স্থাপন প্রকল্প’ অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এম এ মান্নান বলেন, হাওরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। হাওর এলাকায় পিলারের সাহায্যে এ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করতে হবে। এ জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন সরকারপ্রধান। প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরে এম এ মান্নান বলেন, হাওরে যেখানে ছোট সেতু দরকার সেটা করতে বলেছেন তিনি। যেন ঠিকমতো পানি চলাচল করতে পারে। সেতুর জন্য যেন নৌকা চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়টিও নজরে রাখতে বলেছেন। খুঁটি দিয়ে ছোট ছোট সেতু বানিয়ে ফেলার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মন্ত্রী জানান, ক্লাইমেট স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্টের (সিএসএডব্লিউএমপি) আওতায় সিলেট অঞ্চলে কৃষি উন্নয়নও করা হবে। প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় সিলেটের হাওরাঞ্চলের কথাও উঠে আসে।

সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার ১০ প্রকল্প : ৪ হাজার ৬২১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০টি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে একনেক। প্রকল্পগুলোর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৩ হাজার ৫৫ কোটি ২১ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সাহায্য ১ হাজার ৫৬৬ কোটি ১৩ লাখ টাকা। অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হলো- সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ‘নেত্রকোনা-বিপিউড়া-ঈশ্বরগঞ্জ সড়ক (জেড-৩৭১০) উন্নয়ন (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প; ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের ‘বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন ভবন নির্মাণ (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প ; স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘১৬টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস নির্মাণ (সংশোধিত ১৭টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস নির্মাণ ও ৪টি পাসপোর্ট অফিস ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ) (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প; প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘শেখ হাসিনা সেনানিবাস বরিশাল স্থাপন (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প; কৃষি মন্ত্রণালয়ের দুটি প্রকল্প যথাক্রমে ‘ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার অ্যান্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট’ প্রকল্প এবং ‘আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলের কৃষি উন্নয়ন’ প্রকল্প; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, গাজীপুরের অ্যাপ্রোচ সড়ক প্রশস্তকরণ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন (৩য় সংশোধিত)’ প্রকল্প; পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘ফ্লাড অ্যান্ড রিভারব্যাংক ইরিসন ম্যানেজমেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম’ এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের দুটি প্রকল্প যথাক্রমে ‘ইউরিয়া ফরমালডিহাইড-৮৫ (ইউএফ-৮৫) প্লান্ট স্থাপন’ প্রকল্প এবং ‘গোপালগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, বরিশাল, রংপুর, জামালপুর এবং যশোর জেলায় বিটাকের ৬টি কেন্দ্র স্থাপন’ প্রকল্প।

সর্বশেষ খবর