সোমবার, ৭ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

বিচারক ও পুলিশ হত্যার টার্গেট নিয়ে দেশে ফেরেন মনির

নিজস্ব প্রতিবেদক

হামলা করার জন্যই বাহরাইন থেকে দেশে ফিরেছিলেন লাকসামের বাসিন্দা মনির আবদুর রাজ্জাক (৪০)। হামলা চালিয়ে আবারও বাহরাইনে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনাও করেছিলেন তিনি। বাস্তবায়নের জন্য বেশ কিছু স্থান রেকিও করেন। তার ধারণা ছিল, হামলা করে বাহরাইনে চলে গেলে তাকে আর গ্রেফতার করতে পারবে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে হামলা চালানোর আগেই

শনিবার রাজধানীর ফকিরাপুল এলাকায় অভিযান চালিয়ে মনিরকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে ৯টি মোবাইল সিম কার্ড ও একটি পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়েছে। সিটি-সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার আ ফ ম আল কিবরিয়ার নির্দেশনায় অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ইশতিয়াক আহমেদের সহযোগিতায় এবং সহকারী পুলিশ কমিশনার (ই-ফ্রড) টিমের সুরঞ্জনা সাহার নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালিত হয়। গতকাল দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব বিষয় উল্লেখ করে সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, গ্রেফতার মনির অনলাইনে বিভিন্ন কনটেন্ট দেখে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হন। জঙ্গি সংগঠন গাজওয়াতুল হিন্দে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের বিচারক ও পুলিশ সদস্যদের হত্যা করতে হামলার পরিকল্পনা করেন তিনি। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ২৮ ফেব্রুয়ারি পরিবারের কাউকে না জানিয়ে মনির গোপনে দেশে আসেন। তবে তিনি ২০০৭ সালে প্রথম বাহরাইনে যান এবং একটি নির্মাণ কোম্পানিতে শ্রমিকের কাজ নেন। প্রবাসে থাকা অবস্থায় তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধর্মীয় উগ্র মতবাদ ও বিভিন্ন পোস্ট, ভিডিও দেখে রেডিক্যালাইজড হন। পরে ফেইক ফেসবুক আইডি খুলে নিজের পরিচয় গোপন করে একটি ধর্মীয় উগ্র মতবাদী সংগঠনে যোগ দিতে ইচ্ছা প্রকাশ করে পোস্ট দেন এবং অন্যদেরও এই জিহাদে যোগদানের আহ্বান জানান।

সিটিটিসি প্রধান বলেন, ২০১৮ সালে বাহরাইন থেকে দেশে এসে দুই মাস পর আবার ফিরে যান মনির। এরপর থেকে প্রবাসে বসেই তিনি ফেসবুকে ‘ধর্মীয় উসকানিমূলক পোস্ট’ দিয়ে অনলাইনে জঙ্গিবাদ ছড়াচ্ছিলেন এবং রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন কর্মকান্ডের পরিকল্পনা করছিলেন। বাংলাদেশের বিচারক ও পুলিশ বাহিনীকে ‘টার্গেট’ করে ফেসবুকে পোস্ট দেন তিনি। মনিরের কিছু সহযোগী আছেন জানিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা মনে করছি, তাকে গ্রেফতারের মাধ্যমে বাংলাদেশ আরও একটি বড় ঘটনা থেকে রক্ষা পেল। তাকে গ্রেফতারের মাধ্যমে তার পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিতে পেরেছি। তার অন্য সহযোগীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। গ্রেফতার মনিরের বিরুদ্ধে রমনা মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মনির ‘নিজেই উদ্বুদ্ধ হয়ে’ উগ্র মতবাদে জড়িয়েছেন, দেশের কোনো জঙ্গি সংগঠনের কারও সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়নি। সিটিটিসি জানায়, বাহরাইনে তার পাকিস্তানি এক সহকর্মীর সঙ্গে পরিচয়ের সূত্রে নিজেকে পাকিস্তানি পরিচয় দিয়ে একটি আইডি খোলেন মনির। সেটি দিয়ে নানা রকম সরকারবিরোধী, উসকানিমূলক পোস্ট দিতেন তিনি। তার ধারণা ছিল যেহেতু তিনি বিদেশে তাই তাকে কেউ ধরতে পারবে না। মনির ফেসবুকে কী ধরনের পোস্ট দিতেন এর কিছু নমুনা সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়। এর একটিতে বলা ছিল- কয়েকটা বিচারক আর পুলিশ নিধন করলেই আমাদের সোনার বাংলা আবার ফিরে পাব।

সর্বশেষ খবর