শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৮ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা
করোনা শনাক্তের দুই বছর

তিন ঢেউ সামলেছে দেশ

♦ টিকার আওতায় ৭৪ শতাংশ মানুষ ♦ আক্রান্ত ১৯ লাখ, মৃত্যু ২৯ হাজার ♦ প্রথম রোগী শনাক্ত হয় ৮ মার্চ

জয়শ্রী ভাদুড়ী

তিন ঢেউ সামলেছে দেশ

করোনাভাইরাস সংক্রমণের দুই বছরে তিন ঢেউ সামলেছে দেশ। ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। মহামারি করোনাভাইরাসের থাবায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৯ হাজার ৮৯ জন, আক্রান্ত হয়েছেন ১৯ লাখ ৪৭ হাজার ৭০২ জন। করোনায় প্রাণহানি ঠেকাতে টিকায় মিলেছে সাফল্য। টিকার আওতায় এসেছেন ৭৪ শতাংশ মানুষ।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘করোনা সংক্রমণের দুই বছরে মহামারি মোকাবিলায় অনেক অভিজ্ঞতা আমাদের হয়েছে। অনেক প্রিয়জনকে হারিয়েছি আমরা। অনেকে সংক্রমিত হয়ে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক-মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। করোনার এ সময়ে অনেকে জীবিকা হারিয়েছেন, বেড়েছে অর্থনৈতিক বৈষম্য। আমাদের এখনো কাঠামোগত সীমাবদ্ধতা আছে। সেদিকে নজর দিতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেশে সংক্রমণ এখন নিম্নমুখী। বিশ্বব্যাপী টিকা কার্যক্রম জোরদার হওয়ায় নতুন ভ্যারিয়েন্ট অতটা সুবিধা করতে পারবে না।’ ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস বিশ্বজুড়ে তোলপাড় করে চলেছে। অসংখ্যবার মিউটেশন করে শক্তিশালী ভ্যারিয়েন্ট তৈরি করছে করোনা। এ পর্যন্ত সংক্রমণের দুই বছরে করোনার তিন ঢেউ সামলেছে দেশ। গতকাল দেশে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৪৩৬ জন, মারা গেছেন চারজন। সংক্রমণ হার ছিল ২ দশমিক ১৮ শতাংশ।

দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। নারায়ণগঞ্জ ও মাদারীপুর জেলায় সর্বপ্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ১৪ মার্চ রাজধানী ঢাকায় করোনা রোগী শনাক্ত হয়। ঢাকার পর ১৭ মার্চ গাজীপুরে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সংক্রমণ ঠেকাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। এরপর লকডাউন করা হয় দেশজুড়ে। বন্ধ থাকে সরকারি অফিস-আদালত, যান চলাচল, হোটেল-রেস্তোরাঁ, হাটবাজার, আমদানি-রপ্তানি, পর্যটন স্পটসহ সবকিছু। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো অফিস বন্ধ রেখে বাসা থেকে কর্মীদের কাজ করার ব্যবস্থা করে। ডিসেম্বরে কমতে থাকে সংক্রমণ। সংক্রমণ ঠেকাতে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে দেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মাধ্যমে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৩ কোটি ডোজ টিকা কেনার চুক্তি করে সরকার। ২১ জানুয়ারি দেশে পৌঁছে করোনার টিকা। ২৭ জানুয়ারি দেশজুড়ে শুরু হয় টিকাদান। রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তাকে দিয়ে শুরু হয় টিকাদান।

মার্চের শুরু থেকেই ফের বাড়তে থাকে করোনা সংক্রমণ। প্রতিবেশী দেশ ভারতে করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রকোপে সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করে। দেশে এ ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়লে মার্চে বাড়তে শুরু করে রোগীর সংখ্যা। আক্রান্ত বাড়লে হাসপাতালগুলোয় স্থানসংকুলান হয়ে পড়ে। আইসিইউর জন্য রোগী নিয়ে হাসপাতালের দুয়ারে ঘুরতে থাকেন স্বজনরা। জুলাই-আগস্টে সংক্রমণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। ১০ আগস্ট এক দিনে করোনা সংক্রমণে ২৬৪ জন মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটে। রোগীর চাপ সামলাতে মহাখালী ডিএনসিসি মার্কেটকে কভিড হাসপাতালে রূপান্তরিত করা হয়। গ্রামে গঞ্জে বাড়তে থাকে সংক্রমণ। উপসর্গ নিয়ে করোনা টেস্ট করতে আসা মানুষের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয় পরীক্ষাগারে দায়িত্বরত কর্মীদের। নমুনার স্তূপ পড়ে যায় ল্যাবে। ৬৪ জেলার অধিকাংশটিতেই আইসিইউ সাপোর্ট না থাকায় সংকটাপন্ন রোগীদের জীবন বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়ে। ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশব্যাপী কঠোর লকডাউন ঘোষণা করা হয়। রোগী বাড়তে থাকলে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব কনভেনশন সেন্টারকে ফিল্ড হাসপাতালে রূপান্তরিত করে সেবাদান শুরু হয়। ভারতে সংক্রমণ বাড়ায় এপ্রিল থেকে টিকা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় সে দেশের সরকার। কেনা টিকার মধ্যে ৭০ লাখ ডোজ এবং ভারত থেকে উপহার পাওয়া ৩৩ লাখ ডোজ আসার পরে সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার চালান বন্ধ হয়ে যায়। এতে দেশের টিকাদান কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার চীন থেকে টিকা কেনার চুক্তি করে। এ ছাড়া কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশন্স (কোভ্যাক্স) থেকে টিকা সহায়তা চাওয়ার উদ্যোগ নেয় সরকার। এ ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীন, জাপানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে টিকা সহায়তা পায় বাংলাদেশ। চীন থেকে ক্রয় চুক্তির আওতায় কেনা টিকা, কোভ্যাক্স থেকে পাওয়া এবং বিভিন্ন দেশ থেকে পাওয়া টিকায় গতি পায় টিকা কার্যক্রম। করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুহার কমতে থাকলে সেপ্টেম্বরে স্বাভাবিক হতে শুরু করে পরিস্থিতি। ১২ সেপ্টেম্বর সীমিত পরিসরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হয়। ১ নভেম্বর করোনা থেকে সুরক্ষা দিতে দেশব্যাপী ১২-১৭ বছর বয়সী শিশুদের টিকা দেওয়া শুরু হয়। এসব অগ্রগতির মধ্যে ১১ ডিসেম্বর দেশে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে রোগীর সংখ্যা। করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের মুখে পড়ে দেশ। হুহু করে বাড়তে থাকে সংক্রমণ। সংক্রমণের হার ওমিক্রন ঠেকাতে ১৯ ডিসেম্বর শুরু হয় করোনা টিকার তৃতীয় ডোজ অর্থাৎ বুস্টার ডোজ প্রদান। এ পর্যন্ত টিকার দ্বিতীয় ডোজের আওতায় এসেছেন ৫১ শতাংশ মানুষ, বুস্টার ডোজ পেয়েছেন ৫ শতাংশ মানুষ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর