মঙ্গলবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

ছয় দিনেও গ্রেফতার নেই নাহিদ মুরসালিনের হত্যাকারী

তদন্তে ভালো অগ্রগতি আছে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছয় দিনেও গ্রেফতার হয়নি নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের সময় নির্মমভাবে নিহত নাহিদ হাসান ও মুরসালিনের কোনো হত্যাকারী। যদিও সংশ্লিষ্ট সূত্র দাবি করছেন, ঘটনাস্থল থেকে সংগ্রহ করা ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে সন্দেহভাজন বেশ কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। শিগগিরই তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এরই মধ্যে ঢাকা কলেজের অর্ধশতাধিক ছাত্রের সঙ্গে কথা বলেছেন তারা। এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তদন্তে ভালো অগ্রগতি আছে।

তবে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন প্রথম এবং দ্বিতীয় সারির অন্তত সাতজনকে নিজেদের কবজায় নিয়েছে একটি সংস্থা। তাদের মধ্যে রয়েছেন নাহিদ হত্যার ঘটনায় অন্যতম সন্দেহভাজন বাশার ইমন। তিনি ঢাকা কলেজের ছাত্র। অন্যদিকে অ্যাম্বুলেন্সে হামলাকারী এবং সাংবাদিক নির্যাতনকারী ব্যবসায়ী পক্ষের কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি কোনো সংস্থাই। অভিযোগ উঠেছে, ব্যবসায়ী পক্ষের হামলাকারীদের বিষয়ে রহস্যজনক আচরণ করা হচ্ছে।

এদিকে হামলাকারী ইমনের একাধিক ঘনিষ্ঠজন এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, ঘটনার দুই দিন পরই ইমনকে একটি সংস্থার সদস্যরা আটক করেছেন। এর বাইরে শনিবার রাতে ঢাকা কলেজের মাস্টার্সের ছাত্র জুলফিকার, তিতাস, রানা ও জসিমকে একটি সংস্থা ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও গতকাল তাদের ছেড়ে দিয়েছে। যদিও ওই সংস্থার কর্মকর্তাদের দাবি, শুধু ইমন নয়, এ ঘটনায় সন্দেহভাজন কাউকেই আটক করা হয়নি।

এ বিষয়ে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘নাহিদকে যে কুপিয়েছে তার সম্পর্কে খোঁজ নিতে ঘটনাস্থল থেকে সংগ্রহ করা ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আমরা অনেকটাই নিশ্চিত হয়েছি যে নাহিদকে যে কুপিয়েছে তার নাম ইমন। আমরা তাকে গ্রেফতার করতে খুঁজছি। ঘটনার সঙ্গে আরও যারা জড়িত তাদেরও আমরা খুঁজছি।’ এদিকে ইমন সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মামলার পর থেকে ইমন পলাতক রয়েছেন। বন্ধ রয়েছে তার মোবাইল ফোনও। ডি-অ্যাকটিভ করা হয়েছে তার ফেসবুক আইডি। তবে ঘটনার দিনও তার ফেসবুক আইডি সচল ছিল।

একাধিক ফুটেজে দেখা যায়, ঘটনার দিন দুপুর পৌনে ১টায় ব্যবসায়ীরা ঢাকা কলেজের ছাত্রদের ধাওয়া দেন। এ সময় ব্যবসায়ীদের পক্ষে সামনে থেকে অবস্থান নিয়ে নাহিদও ছাত্রদের ধাওয়া দেওয়ার একপর্যায়ে নূরজাহান মার্কেটের গেটের সামনে পা পিছলে মাটিতে পড়ে যান। আর ওই সময় ছাত্রদের মধ্যে কয়েকজন রড, লাঠি, ইট দিয়ে নাহিদকে বেধড়ক পেটাতে থাকেন। একপর্যায়ে নাহিদ নিস্তেজ হয়ে পড়েন। এ সময় রামদা হাতে কালো হেলমেট পরা একজন এসে নাহিদকে কোপাতে থাকেন। হলুদ হেলমেট ও লাল রঙের গেঞ্জি পরা আরেকজন এসে নাহিদকে কোপাতে থাকেন। তখন তাকে চড় মেরে সরিয়ে দেন আরেকজন। এরপর ব্যবসায়ী পক্ষের যুবকরা নাহিদকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।

নাম প্রকাশে গণমাধ্যমকে আরও সতর্ক হতে হবে- ডিবিপ্রধান : এদিকে নাহিদকে কোপানোর একটি ছবি ভাইরাল হওয়ার পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে একাধিক ছবির পাশাপাশি নাম প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যে একজনের নাম রাব্বি। তিনি ঢাকা কলেজের নর্থ হলের মাস্টার্সের ছাত্র। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘গণমাধ্যমে নাহিদ হত্যায় জড়িত বলে রাব্বি নামে যে ছাত্রের নাম ছাপা হয়েছে আসলে তদন্তে দেখা গেছে রাব্বি সেদিন দিনাজপুরে ছিলেন। তাই পুরোপুরি নিশ্চিত না হয়ে কারও নাম প্রকাশ না করার বিষয়ে গণমাধ্যমকে আরও সতর্ক থাকতে হবে।’

চলছে ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ : ঘটনার দিন দেশি অস্ত্র হাতে সংঘর্ষে অংশ নেওয়া ঢাকা কলেজের আরও কয়েক ছাত্রসহ ১৭ জন হেলমেটধারীকে চিহ্নিত করা হয়েছে জানিয়ে তদন্তসংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা পুলিশ ও র‌্যাব সূত্র জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলের আশপাশের শতাধিক সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে অনেককে চিহ্নিত করেছেন তাঁরা। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, ‘আমরা অনেককেই চিহ্নিত করেছি, কিন্তু কাউকে এখনো শনাক্ত করিনি। কারও পরিচয় সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চিত হতে পারিনি। এটা খুবই স্পর্শকাতর মামলা। আমরা এ নিয়ে কোনো তাড়াহুড়া করতে চাই না। শতভাগ নিশ্চিত হয়েই অপরাধীদের আইনের আওতায় আনব। সংঘর্ষের সময় ধারালো অস্ত্র ও হেলমেট পরে ঢাকা কলেজের যেসব শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন, তাদের মধ্যে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত আহ্বায়ক কমিটির সদস্যরা আছেন কি না তারও তদন্ত চলছে।’

তদন্তে ভালো অগ্রগতি আছে- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : নিউমার্কেটের সংঘর্ষের ঘটনায় ভালো অগ্রগতি হয়েছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, ‘তাড়াহুড়া করার কিছু নেই, ধৈর্য ধরতে হবে। এ ঘটনায় দুটি খুনের মামলা হয়েছে। ভাঙচুরের মামলা হয়েছে। এগুলোয় সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করা হয় না। তাই প্রমাণের ব্যাপার আছে, তদন্তের ব্যাপার আছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা কোনো দিনও ঘটনার সত্যতা না পেলে কাউকে গ্রেফতার করেন না। বিএনপি নেতা মকবুলের গ্রেফতার রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, বরং সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই। রাজনৈতিকভাবে কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না কিংবা কাউকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না।’ এদিকে সংঘর্ষের মামলায় গ্রেফতার বিএনপি নেতা মকবুল হোসেন সরদারের কাছ থেকে ‘গুরুত্বপূর্ণ তথ্য’ মিলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তিন দিনের রিমান্ডের প্রথম দিনের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গতকাল এ কথা বলেন নিউমার্কেট জোনের পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার শাহেনশাহ। প্রসঙ্গত, সোমবার রাতে নিউমার্কেট ব্যবসায়ী-কর্মচারীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজ ছাত্রদের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় পুলিশের দুটিসহ এ পর্যন্ত চারটি মামলা হয়েছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাতে নিহত দোকানকর্মী মোহাম্মদ মুরসালিনের ভাই নূর মোহাম্মদ বাদী হয়ে নিউমার্কেট থানায় হত্যা মামলা করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর