মঙ্গলবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

সঠিক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া ইসলামের শিক্ষা

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

সঠিক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া ইসলামের শিক্ষা

‘সময় কারও জন্য বসে থাকে না’ এই প্রচলিত বাক্যটির সঙ্গে প্রায় সব মানুষই পরিচিত। সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করা বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমানের লক্ষণ। সময় চলে গেলে আক্ষেপ করতে হবে। কিন্তু কোনো লাভ হবে না। পবিত্র মাহে রমজান প্রায় শেষের দিকে। আজকে আমরা ২৪তম রোজা পালন করছি। আর মাত্র কয়েকটি রোজা বাকি। এর মধ্যে ২৭তম রাতের ইবাদত, ঈদের আগের রাতের ইবাদতসহ অনেক আমল এখনো বাকি। ইসলাম সঠিক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের শিক্ষা দেয়। একজন ইমানদার ব্যক্তির জন্য এই সময় এই ইবাদতগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে আদায় করাটাই সঠিক সময়ে সঠিক আমল। তাই রমজানের বাকি দিনগুলোতে সঠিক নিয়মে ইবাদত-বন্দেগি করার জন্য প্ল্যান-প্রোগ্রাম করতে হবে। যাতে কোনো আমল বাদ না পড়ে। এখানে সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করার কয়েকটি ইসলামী পদ্ধতির উল্লেখ করা হলো। ১. কোনো ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে প্রথমে আমাদের কর্তব্য ইস্তিখারা করা, আল্লাহর কাছ থেকে কাজের অনুমতি প্রার্থনা করা। এ সম্পর্কে হযরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে যে কোনো কাজ করার পূর্বে ইস্তিখারার নির্দেশ দিতেন। তিনি ইস্তিখারার দোয়া এমনই গুরুত্বের সঙ্গে আমাদেরকে মুখস্থ করিয়ে দিতেন যেমন গুরুত্ব দিয়ে মুখস্থ করিয়ে দিতেন পবিত্র  কোরআনকে। ইসতিখারার নিয়ম- প্রথমে নিয়ত করে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে এই দোয়া পাঠ করবে- যার বাংলা অর্থ নিম্নে দেওয়া হলো।

‘হে আল্লাহ, আমি আপনার ইলমের মাধ্যমে আপনার কাছে কল্যাণ কামনা করছি। আপনার কুদরতের মাধ্যমে আপনার কাছে শক্তি কামনা করছি এবং আপনার মহা অনুগ্রহ কামনা করছি। কেননা আপনি শক্তিধর, আমি শক্তিহীন, আপনি জ্ঞানবান, আমি জ্ঞানহীন। আর আপনি অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞানী। হে আল্লাহ, এই কাজটি (এখানে উদ্দিষ্ট কাজ বা বিষয়টি উল্লেখ করা) আপনার জ্ঞান মোতাবেক যদি আমার দ্বীন, আমার জীবিকা এবং আমার পরিণতির ক্ষেত্রে অথবা ইহলোক ও পরলোকে কল্যাণকর হয়, তবে তাতে আমাকে সামর্থ্য দিন। পক্ষান্তরে এই কাজটি আপনার জ্ঞান মোতাবেক যদি আমার দ্বীন, জীবিকা, ও পরিণতির দিক দিয়ে অথবা ইহকাল ও পরকালে ক্ষতিকর হয়, তবে আপনি তা আমার থেকে দূরে সরিয়ে রাখুন এবং আমাকেও তা থেকে দূরে সরিয়ে রাখুন এবং কল্যাণ যেখানেই থাকুক, আমার জন্য তা নির্ধারিত করে দিন। অতঃপর তাতেই আমাকে পরিতুষ্ট রাখুন। (অতঃপর নিজ প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করা।)’ (বুখারি : ১১০৬।

ইস্তিখারা করার পর কাজের ফলাফল কি হবে তা ছেড়ে দিতে হবে আল্লাহতায়ালার কুদরতের কাছে। আল্লাহ যা করবেন তাতেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। যিনি আল্লাহতায়ালার ওপর সন্তুষ্ট থাকবেন আল্লাহতায়ালা তার জন্য যথেষ্ট হবেন। যেমনটি পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে। ‘আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তার উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেনই।’ (সুরা তালাক, আয়াত-৩) হাদিসে আরও বর্ণিত আছে। বিখ্যাত সাহাবি হজরত সা’দ বিন আবী ওয়াক্কাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আদম সন্তানের সৌভাগ্যের বিষয়গুলো থেকে একটি হলো ইস্তিখারা করা এবং আল্লাহর ফয়সালার ওপর সন্তুষ্ট থাকা। আর মানুষের দুর্ভাগ্য হলো ইস্তিখারা না করা ও আল্লাহর ফয়সালার ওপর অসন্তুষ্ট থাকা।’ (তিরমিজি : ২৩০৪)

২. কঠিন সময় সঠিক সিদ্ধান্ত লাভের জন্য হাদিসে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহতায়ালার কাছে সাহায্য চাওয়ার কথা বলেছেন।

কারণ বান্দার সব কিছু আল্লাহর সাহায্যেই হয়ে থাকে। সব কঠিন পরিস্থিতিতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে আল্লাহতায়ালার শেখানো ভাষায় তাঁরই কাছে সাহায্য চাওয়া জরুরি। কঠিন সময় সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের আয়াত : যা আমরা দোয়া হিসেবে পড়ে থাকি। বাংলা অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমাদের এবং আমাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে যথাযথ ফয়সালা করে দিন। আর আপনি শ্রেষ্ঠ ফয়সালাকারী।’ (সুরাতুল আরাফ-৮৯) প্রয়োজনে আয়াত নম্বর দেখে আরবিতে দোয়াটি পড়া যেতে পারে। কোনো ইমানদার মানুষ যখন আল্লাহর নাজিলকৃত আয়াত পড়ে খাস দিলে আল্লাহর সাহায্য কামনা করে, তখন বিপদ যত কঠিনই হোক না কেন, আল্লাহতায়ালা ওই বান্দাকে সাহায্য করেন। তিনি তাঁর রহমত ও বরকত দ্বারা ওই বান্দাকে ঢেকে দিবেন। এর বহু প্রমাণ ইতিহাসে আমরা পেয়েছি। আল্লাহতায়ালা মুসলিম উম্মাহকে সঠিক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার তৌফিক দান করুন। আমিন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর