মঙ্গলবার, ১০ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

বিমানবন্দরে দু-তিন জায়গায় হয়রানি বেশি

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিমানবন্দরে দু-তিন জায়গায় হয়রানি বেশি

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের যাত্রীসেবার মান নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। গতকাল বিকালে যাত্রীসেবার মান দেখতে হঠাৎ বিমানবন্দর পরিদর্শনে আসেন তিনি। পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে বিমানবন্দরের বিভিন্ন সেবা প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি যেটা দেখেছি, দু-তিনটি জায়গায় যাত্রীরা বেশি হয়রানির শিকার হন। এর মধ্যে একটা হলো ইমিগ্রেশনে করোনা সার্টিফিকেট জমা দেওয়ার লম্বা লাইন।’ সালমান এফ রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘শাহজালাল বিমানবন্দরে যাত্রীদের নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে- এমন খবর পেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে এ বিমানবন্দর পরিদর্শনে পাঠিয়েছেন। অভিযোগ শুনেছিলাম, ইমিগ্রেশনে যাত্রী হয়রানি করা হয়। অনেকেই বলেছেন ইমিগ্রেশন পার হতে অনেকের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়। আমরা এসবির অতিরিক্ত আইজিপিকে সঙ্গে নিয়ে এসেছি। তার অধীনেই এটি পরিচালিত হয়। তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।’ বিমানবন্দরের সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে আপনি সন্তুষ্ট কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ বিমানবন্দর পরিদর্শন করে আমি পুরোপুরি সন্তুষ্ট নই। আমি যা দেখেছি, এখানে পরিস্থিতি উন্নত করার অনেক সুযোগ রয়েছে। সেসব সুযোগের কথা আমি সংশ্লিষ্টদের বলে দিয়েছি। এখানে মাঠ পর্যায়ে যারা আছেন, তাদের মনমানসিকতা বদলাতে হবে।’ বিমানবন্দর ব্যবস্থাপনায় বর্তমান লোকবল দিয়ে যাত্রী ভোগান্তি কমানো যাচ্ছে না। এটি ঠিক করতে তৃতীয় পক্ষকে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে যুক্ত করা হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘মোটামুটি একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তৃতীয় টার্মিনালে গ্রাউন্ড ও লাগেজ হ্যান্ডলিং এবং স্ক্যানার এসব ব্যবস্থাপনার কাজে আউটসোর্সিং করা হবে।’

এখনই বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সার্ভিস (মাঠ পরিচালনা সেবা) তৃতীয় পক্ষের কাছে দেওয়া হবে কি না? জবাবে তিনি বলেন, ‘এখনই তা করা সম্ভব নয়। কারণ এ প্রক্রিয়া শেষ করতে যে সময় লাগবে তত দিনে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ হয়ে যাবে। এখন যা অবস্থা সেটাকে উন্নত করাই আমাদের লক্ষ্য। সরকার খুব সিরিয়াসলি এ বিষয়টি নিয়েছে। আমরা পরিদর্শনের পরও যদি অভিযোগের হার না কমে, তাহলে আরও কঠিন ব্যবস্থায় যাব। প্রক্রিয়াটা আমরা আজ শুরু করেছি।’

অনেকে ঢালাওভাবে বিমানবন্দর সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করেন জানিয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘হয়তো এমনটা ঘটতে পারে। তবে যাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এখন ইমিগ্রেশনে একটা অ্যাপস তৈরি করা হচ্ছে। এতে যাত্রীদের হয়রানি কমবে। তবে ইমিগ্রেশনে টাকার জন্য নয়, অনেক সময় অবাঞ্ছিত প্রশ্ন করে যাত্রীদের হয়রানি করা হয়।’

কাস্টমসের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা বলেন, ‘ওখানে অনেকে গ্রিনলাইন-রেডলাইন নিয়ে হয়রানির শিকার হন। সেখানে অনেক যাত্রী সোনা আনার যে সীমা (বর্তমানে দুটি বিস্কিট আনা যায়), সবাই মোটামুটি সেটি আনছেন। এজন্য ট্যাক্স দিতে হয়। এজন্য যাত্রীরা একবার গিয়ে ডিক্লারেশন দেন। এরপর ট্যাক্সের পরিমাণ বলার পর অনেক দূরে গিয়ে ব্যাংকে টাকা দেন। এরপর আবার কাস্টমসের কাছে ফেরত আসেন। এখন আমরা ব্যাংক ও কাস্টমসের কাউন্টার পাশাপাশি করার কথা বলেছি যাতে এতবার হাঁটতে না হয়। কর্তৃপক্ষ আমাকে আশ্বস্ত করেছেন তারা সে ব্যবস্থা করে দেবেন।’

সালমান এফ রহমান বলেন, ‘বেল্টে ব্যাগেজ আসার আগে প্রি-স্ক্যানিং করা যায় কি না সে ব্যাপারেও আমরা সংশ্লিষ্টদের বলেছি। যদি আগে থেকেই স্ক্যানিং করে ফেলা যায়, তাহলে কাস্টমসের ওপর বাইরের লোড কমে যাবে। তখন যে ব্যাগকে তারা ধরতে চায় তা আগে থেকেই জেনে চিহ্নিত করে রাখা যাবে। বিদেশে এটাই হয়। ওনারা বলেছেন এটা পরীক্ষা করবেন।’ বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালে আধুনিক সব সেবা থাকবে জানিয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘তৃতীয় টার্মিনালের আশায় বসে থাকলে হবে না। এখনই সেবা উন্নত করতে হবে।’

ব্রিফিংয়ের সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জেল হোসেন, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সদস্য (পরিকল্পনা ও পরিচালনা) এয়ার কমোডর সাদিকুর রহমান চৌধুরী, সদস্য (নিরাপত্তা) গ্রুপ ক্যাপ্টেন আবু সালেহ মাহমুদ মান্নাফী, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক মো. কামরুল ইসলাম, পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মনিরুল ইসলাম প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর