মঙ্গলবার, ২৪ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

দ্রব্যমূল্য কমাতে বাড়বে ভর্তুকি

কম মূল্যে চাল ডাল তেল আটা সরবরাহ করা হবে সারা বছর

মানিক মুনতাসির

দ্রব্যমূল্য কমাতে বাড়বে ভর্তুকি

করোনাভাইরাস মহামারির ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সারা বিশ্বকে নতুন এক সংকটের মুখে ফেলেছে। যার ফলে দেশে দেশে চলছে জ্বালানি সংকট। জ্বালানির দামও বাড়ছে দফায় দফায়। শুধু তাই নয়, উৎপাদন, বণ্টন, সরবরাহ চেনে মারাত্মক আঘাত হেনেছে এ যুদ্ধ। ফলে ডলারের বাজারে চলছে অস্থিরতা। খাদ্যপণ্যের দামও বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। এদিকে বিশ্বে খাদ্য সংকটের আশঙ্কা প্রকাশ করে বিশ্বনেতাদের সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশেও পণ্যমূল্য সহনীয় মাত্রার ওপরে চলে গেছে। বাড়ছে মূল্যস্ফীতিও। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের ওপর ব্যাপকভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এমন এক সংকটকালে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থ বিভাগের সূত্রগুলো বলছেন, এবারের বাজেটের অগ্রাধিকারের বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে স্থান পাবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ। এ জন্য এ খাতের ভর্তুকি বাড়ানো হবে। সারা বছর ভর্তুকিমূল্যে চাল, ডাল, তেল, আটা সরবরাহ করা হবে টিসিবির মাধ্যমে। এ জন্য ১ কোটি পরিবারকে নতুন করে টিসিবি কার্ড দেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। আগামী জুন থেকেই এ কার্ডের মাধ্যমে কম দামে খাদ্যপণ্য কিনতে পারবে নিম্ন আয়ের মানুষ। আর এ সম্পর্কে বিস্তারিত পরিকল্পনা তুলে ধরা হবে     আসছে বাজেটে।

অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন এবং দেশে মুদ্রাস্ফীতির কারণে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। যা সাধারণ মানুষের জন্য বিশেষ করে দরিদ্র ও অর্থনৈতিকভাবে দুর্বলদের জন্য অসহনীয় হয়ে উঠেছে। আবার নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে গেছে অন্তত ২ কোটি মানুষ। তারা বেশ অস্বস্তিতে রয়েছে। যাদের অনেকেই জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে দৈনন্দিন বাজেট কাটছাঁট করছে। এদের অনেকেই কম খাচ্ছে। অতিপ্রয়োজনীয় ছাড়া দৈনন্দিন খরচ থেকে বাদ দিচ্ছে বহু আইটেমও। এজন্য নিম্ন আয়ের এসব মানুষকে আর্থিক সুবিধার মাধ্যমে কিছুটা স্বস্তি দিতে এবারের বাজেটে ভর্তুকি বাড়ানো হবে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা। আর ভর্তুকিতে সর্বমোট বরাদ্দ থাকবে প্রায় ৮৩ হাজার কোটি টাকা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টায় ও মহামারি-পরবর্তী পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়া রোধে সরকার আগামী অর্থবছরের জন্য ৮২ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকার ভর্তুকি প্যাকেজ প্রস্তুত করেছে। যা আগের অর্থবছর ছিল ৬৬ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। সে হিসেবে গত বছরের চেয়ে এবার ভর্তুকি বাড়ছে ২১ দশমিক ১ শতাংশের বেশি। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘গরিব ও দরিদ্র শ্রেণির মানুষের জন্য বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো জরুরি। দ্রব্যমূল্য বাড়ায় যারা দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষ তারা বেশি সংকটে পড়েছে। তাদের কম মূল্যে খাদ্য পৌঁছে দিতে হলে ভর্তুকি বাড়াতে হবে। আর যারা বেকার রয়েছে তাদের জন্য কাজের ব্যবস্থা করতে হবে।’ এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে খাদ্য ও জ্বালানি পণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা এবং দেশের প্রধান রপ্তানি বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়নে মন্দার পূর্বাভাস সত্ত্বেও আগামী অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে যাচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার এখনকার তুলনায় নতুন অর্থবছর বেশ কমে আসবে বলে মনে করছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। ফলে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। খাদ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এজন্য আগামী অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে প্রণোদনা ও ঋণ খাতে প্রকৃত ব্যয় জিডিপির ১ দশমিক ১৭ শতাংশ ধরা হয়েছে। এটি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাড়িয়ে ১ দশমিক ৯০ শতাংশ করা হচ্ছে। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতে ১ লাখ ৪৯ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। আগামী অর্থবছরে তা বাড়িয়ে ১ লাখ ৭৭ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা করা হচ্ছে। তবে এটি আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভর করবে।

সর্বশেষ খবর