বুধবার, ১ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

সাংবাদিকতায় বাধা এমন আইন হবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাংবাদিকতায় বাধা এমন আইন হবে না

দেশের সাংবাদিক সমাজকে আশ্বস্ত করে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, স্বাধীন সাংবাদিকতায় বাধার সৃষ্টি করতে পারে এমন কোনো আইন দেশে হবে না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে আইনটি সংশোধন করা হবে। গতকাল সচিবালয়ে গণমাধ্যম কেন্দ্রে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) কর্তৃক গণমাধ্যমকর্মী আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও ডাটা সুরক্ষা আইন নিয়ে আয়োজিত ‘বিএসআরএফ সংলাপ’ অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। সংগঠনের সভাপতি তপন বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিএসআরএফের সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক।

আনিসুল হক বলেন, ‘আমি একটা জিনিস ব্রডলি বলে দিতে চাই, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন সংবিধান উপহার দেন, তখন দুটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করেছেন। একটা হলো বাকস্বাধীনতা, আরেকটা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, যেটা আমাদের সংবিধানে মৌলিক অধিকার হিসেবে গ্যারান্টি। সেই জিনিসটাই পাল্টে দেওয়া হবে, তা হয় না। আমি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি, দেশে এমন কোনো আইন হবে না, যা স্বাধীন সাংবাদিকতায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার এমন কোনো আইন করবে না, যে আইন স্বাধীন সাংবাদিকতা কিংবা স্বাধীন সংবাদ পরিবেশনের দায়িত্বকে খর্ব করে। সরকার চায় সংবাদমাধ্যমে শৃঙ্খলা থাক। ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত না করে সঠিক তথ্য দিয়ে সমৃদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তা থেকেই কিছু আইন থাকতে হয়। আমরা জনগণকে সেবা করতে এসেছি। এর মাধ্যমে যদি কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়, সেটা যদি জনগণ বলতে চায় আমরা শুনব। প্রতিকারের প্রয়োজন হলে আমরা সেটা করব।’

আইনটির সংশোধনের অগ্রগতি প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৯ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ জাতিসংঘের রেসিডেন্স কো-অর্ডিনেটরের মাধ্যমে জেনেভায় জাতিসংঘের হাইকমিশন ফর হিউম্যান রাইটসের অফিসের সঙ্গে বৈঠক করেছি। আমরা দুই পক্ষই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমাদের দিক থেকে একটি কমিটি করে দেওয়া হবে, তাদের দিক থেকে একটা কমিটি থাকবে। সারা বিশ্বের যে বেস্ট প্র্যাকটিস সেগুলো দেখব। দেখার পর কোনটা বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে প্রযোজ্য হয়, সেটা গ্রহণ করব। আমরা লেজিসলেটিভ সচিবের নেতৃত্বে একটা কমিটি করে দিয়েছি। তারা একাধিক বৈঠক করেছেন। মিটিং চলছে, এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এখন ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের কোনো মামলা সরাসরি নেওয়া হয় না। এখন মামলা একটা নির্দিষ্ট সেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মামলাও কমে যাচ্ছে। আবার মামলা করলে দ্রুত গ্রেফতার করা হচ্ছে না। আমরা যে অবস্থানটা নিয়েছি, এটা গ্রাউন্ড লেভেল পর্যন্ত যাচ্ছে। তাতে মিস ইউজ (অপপ্রয়োগ) এবং অ্যাবিউজ (অপব্যবহার) বন্ধ হয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ।’

তিনি বলেন, ‘ইউনূস (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) সাহেবের বিরুদ্ধে শ্রমিকরা মামলা করেছিলেন। সেই মামলা প্রত্যাহার হয়েছে। যে ৪৩৭ কোটি টাকা নিয়ে বিরোধ ছিল সেটা ইউনূস সাহেব পরিশোধে রাজি হয়েছেন, সেই পরিপ্রেক্ষিতেই মামলা প্রত্যাহার হয়েছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে মামলা প্রত্যাহার নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়াতে কী গেছে- কার কত ক্ষমতা?’ বলেই হেসে ফেলেন মন্ত্রী।

ডাটা প্রটেকশন অ্যাক্টের বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি আমার সঙ্গে দেখা করে তাদের সুবিধা ও অসুবিধাগুলো বলেছে। আমি অবহিত হয়েছি। আমি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। আগামীকাল (১ জুন) আমি তার সঙ্গে বসব। তিনিও বলেছেন আমরা এটা (ডাটা প্রটেকশন অ্যাক্ট) পর্যালোচনা করব। কথা উঠেছে এই (ডাটা প্রটেকশন অ্যাক্ট) আইনটির বিষয়ে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা হয়নি। আমি নিশ্চিত করব স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে যেন আলোচনা করা হয়। সারা পৃথিবীতে ডাটা প্রটেকশন আইন নিয়ে কী কী আছে এটা পর্যালোচনা করার জন্য আমি সব আইন আনাচ্ছি। যারা এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছি।’

গণমাধ্যমকর্মী আইন প্রসঙ্গে আনিসুল হক বলেন, ‘গণমাধ্যমকর্মী আইন সাংবাদিকদের জন্য দরকার রয়েছে। এর পরও এ আইনের বিষয়ে আপনাদের বক্তব্যটা যাতে দিতে পারেন সেটার জন্য আমি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রীর সঙ্গে ইতোমধ্যে কথা বলেছি। সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকেও আমি বলে দেব যাতে তারা সাংবাদিকদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেন। আপনারা আইনটি পরিষ্কার করার কথা বলেন, বাতিল করার কথা বইলেন না। আইনটিতে আপনাদের সুবিধা হবে। আপনারা তিনটি আইনের কথা বলেছেন। এর সঙ্গে রয়েছে ওটিটি এবং বিটিআরসি রেগুলেশন। আমি সব বিষয়ের ব্যাপারে আলোচনার মধ্যে আছি।’ যোগ করেন মন্ত্রী। তিনি জানান, গণমাধ্যমকর্মী আইনে অবসরের বয়সসীমা ৫৯ বছর বলার উদ্দেশ্য হলো, স্বেচ্ছায় কোনো সংবাদকর্মী চাইলে অবসরে যেতে পারবেন। তবে কোনো মালিক বাধ্য করতে পারবেন না। এ আইনের সঠিক বাস্তবায়ন করতে আরও পরিষ্কার করে তথ্য সংযোজন করা হবে।

 

সর্বশেষ খবর