মঙ্গলবার, ৭ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

ডিএনএ টেস্ট বুথে লাইন

বাবার খোঁজে সাত মাসের ফাইজা

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

ফাইজা। বয়স মাত্র সাত মাস। এ বয়সে মা-বাবার কোলে আদর, স্নেহ, আহ্লাদ পাওয়ার কথা। সুন্দর হাসিতে বাবা-মায়ের মন জুড়ানোর কথা। বাবার কোলে চড়ে আনন্দ উপভোগ করার কথা। কিন্তু এখন সেই ফাইজাকে মামার কোলে করে আসতে হয়েছে বাবার খোঁজে। নমুনা দিয়ে বাবার লাশ শনাক্ত করতে। ফুটফুটে, নিষ্পাপ, অমলিন এবং মায়াবি চেহারাটা দেখলে পৃথিবীর যে কোনো হাসিমাখা মানুষের মনও ভারী হয়ে যাবে। ফাইজা জানে না, তার মুখের লালা নিয়েই না ফেরার দেশে চলে যাওয়া বাবাকে শনাক্ত করা হবে। ফাইজারের মতো আরও অনেকেই এসেছিলেন। লাশ হয়ে যাওয়া স্বজনদের শনাক্তে ডিএনএ বুথে দীর্ঘ লাইন ছিল তাদের। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় নিখোঁজ হয়েছেন বাঁশখালীর সোবহান। সোবহানের মেয়ে ফাইজা তার মামা রিজনের কোলে করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে স্থাপন করা বুথে এলো ডিএনএ টেস্টের জন্য নমুনা দিতে। ফাইজারের সঙ্গে তার মায়ের রক্তও নেওয়া হয়েছে। পুলিশের সিআইডি বিভাগের ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবরেটরি অব বাংলাদেশ চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে ‘ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের বুথ’ স্থাপন করে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। জানা যায়, সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণের ঘটনায় সরকারি ঘোষণা মতে ৪১ জন মারা যান। এর মধ্যে ২৫ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। ময়নাতদন্তসহ প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ২১ জনকে পারিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। চারজনের লাশ মর্গে ছিল। তবে আরও ১৬ জনকে শনাক্ত করা যায়নি। গতকাল সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত নিখোঁজ ১৬ জনের পরিবারের ৩১ জন সদস্যের নমুনা নেওয়া হয়েছে। শিশুদের থেকে মুখের লালা এবং প্রাপ্তবয়স্কদের কাছ থেকে রক্ত ও চুল নেওয়া হয়েছে। রিপোর্ট দেওয়া হবে এক মাস পর। এ ঘটনায় নিখোঁজ হন কন্টেইনারের গাড়িচালক ইয়াসিন (২৬)। তার বাবা বদিউল আলম এলেন ফেনীর ফুলগাজি এলাকা থেকে নমুনা দিতে। বদিউল আলম বলেন, ‘আমার তিন ছেলে তিন মেয়ে। নিখোঁজ ইয়াসিন মেজো ছেলে। সাত বছর ধরে চট্টগ্রামে গাড়ি চালায়। ঘটনার আগেও তার সঙ্গে কথা হয়। কিন্তু এখন তার কোনো খোঁজ মিলছে না।’ একই ঘটনায় নিখোঁজ হন ফরিদুজ্জামান। তার বাবা সাইফুল ইসলাম ও মা ফুলমতি বেগম এলেন ডিএনএ টেস্টের জন্য নমুনা দিতে। তাদের বাড়ি রামগড়ের মিঠাপুর। তার বাবা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘নিখোঁজ সন্তানের খোঁজে রামগড় থেকে এলাম। আমি আমার সন্তানের খোঁজ চাই।’ সিআইডির চট্টগ্রামের প্রধান শাহনেওয়াজ খালেদ বলেন, বিষয়টি খুবই জটিল এবং স্পর্শকাতর। তাই অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে নমুনা সংগ্রহের কাজটি করা হচ্ছে। এক মাস পর নমুনাগুলোর প্রতিবেদন দেওয়া হবে। এ সময়ে লাশগুলো ফ্রিজারে সংরক্ষণ করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর