মঙ্গলবার, ২১ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে ফের টালবাহানা

অসহযোগিতার অভিযোগ মন্ত্রণালয় ও হাইকমিশনের বিরুদ্ধে

নিজস্ব প্রতিবেদক

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে ফের টালবাহানা শুরু হয়েছে। সব সিদ্ধান্ত হয়ে যাওয়ার পরও সেখানে কর্মীদের যাওয়া শুরু করা যাচ্ছে না। অভিযোগ উঠেছে, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের অসহযোগিতার কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনাও উপেক্ষা করার অভিযোগ করেছেন শ্রমবাজার সংশ্লিষ্টরা। জানা যায়, গত ২ জুন জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের মিটিং-এ মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ উভয় দেশের প্রতিনিধি দল মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ে একমত হয়। মিটিং-এর সিদ্ধান্তসমূহ উভয় দেশের প্রতিনিধি দল সর্বসম্মতিক্রমে স্বাক্ষর করে। প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ঘোষণা করেন, জুন মাসের মধ্যেই মালয়েশিয়ায় কর্মী গমন শুরু হবে। কিন্তু জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের মিটিং-এর পর প্রায় তিন সপ্তাহ অতিক্রম হলেও আজ পর্যন্ত পরিস্থিতির কোনো ধরনের উন্নতি হয়নি। শ্রমবাজার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তারা দূতাবাসে ডিম্যান্ড লেটার জমা করার পর মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস হতে বলা হচ্ছে ঢাকায় মেডিকেল করার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে মেডিকেল সেন্টারসমূহ অনুমোদন প্রয়োজন, এ ছাড়া মেডিকেলের রিপোর্ট হাইকমিশনের অনলাইন মডিউলে অন্তর্ভুক্তকরণ, কর্মীরা নিয়োগকর্তা হতে পলায়ন করলে সেগুলো হাইকমিশনের মডিউলে প্রতিফলন ইত্যাদি। প্রকৃত পক্ষে এর কোনোটিই হাইকমিশনের কাজ নয়, শুধু প্রক্রিয়াটিকে দেরি করানো বা অভিবাসন প্রক্রিয়াটি বন্ধ রাখার জন্যই এসব শর্ত আরোপ করা হচ্ছে বলে মনে হয়। কেননা দুই দেশের মধ্যে সব বিষয়ে যেহেতু ঐকমত্য হয়েছে, সুতরাং হাইকমিশনের কাজ হলো মালয়েশিয়ার নিয়োগকারীদের দেওয়া ডিম্যান্ড লেটার, চুক্তিপত্র জমা গ্রহণ পূর্বক তাদের কোম্পানি প্রোফাইল যাচাই-বাছাই এবং প্রয়োজনে কোম্পানি/ফ্যাক্টরি পরিদর্শন করে সন্তুষ্ট সাপেক্ষে প্রকৃত চাহিদা বাছাই করে ডিম্যান্ড লেটার ও চুক্তিপত্র সত্যায়ন করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো। মন্ত্রণালয় মেডিকেল ও আনুষঙ্গিক আনুষ্ঠানিকতা  শেষ হওয়ার পর দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট এজেন্সিকে নিয়োগ প্রক্রিয়াটি সম্পাদনের জন্য অনুমতি প্রদান করবে। কিন্তু গত ১৯ ডিসেম্বর দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার পর ছয় মাস পার হলেও মেডিকেল সেন্টারের ব্যাপারে মন্ত্রণালয় কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করেনি। একদিকে মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন বলছে ডিম্যান্ড লেটার সত্যায়নের পূর্বেই মেডিকেল সেন্টার নির্বাচন করতে অন্যদিকে মন্ত্রণালয় তালিকা চূড়ান্ত করছে না। এই পরিস্থিতিতে মালয়েশিয়া সরকার ঢাকা থেকে তথ্য জোগাড় করে স্বাস্থ্য অধিদফতর কর্তৃক অনুমোদনপ্রাপ্ত এবং নবায়নকৃত মেডিকেল সেন্টারের মনোনয়ন নিয়েছে, সিস্টেম ইনস্টল করেছে এবং মালয়েশিয়ার কেন্দ্রীয় সার্ভারের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেছে। এখন নতুন করে মেডিকেল সেন্টার অনুমোদনের ক্ষেত্রে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ গ্রহণ করলে একদিকে যেমন পুরো প্রক্রিয়াটি অনেক পিছিয়ে যাবে আবার মালয়েশিয়া সরকার তাদের অনুমোদিত মেডিকেল সেন্টারের জায়গায় নতুন মেডিকেল সেন্টার সিস্টেমে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেবে। সংশ্লিষ্টদের আরও অভিযোগ, মালয়েশিয়া সরকারের নির্ধারিত সিস্টেম প্রোভাইডার ইতোমধ্যেই মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনে ডিম্যান্ড লেটার, চুক্তিপত্র সত্যায়নসহ অভিবাসন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব সফটওয়্যার ও ইকুইপমেন্ট ইনস্টল করেছে। ঢাকায় মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও তাদের মডিউলের সংযোগ স্থাপনের ব্যাপারে অনেক আগেই প্রস্তাব দিয়েছে। এর কোনো কিছুর বিষয়েই প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি। উল্টো কখনো ডাটা ব্যাংকের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগে বাধ্যবাধকতা, কখনো র‌্যামডম স্প্যাম্পলিং আবার কখনো বা মালয়েশিয়ার কাছে মন্ত্রণালয়ের নতুন সিস্টেম সমন্বয় করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এভাবে হাইকমিশন এবং মন্ত্রণালয় অযৌক্তিক শর্ত আরোপ করে পুরো প্রক্রিয়াটিকে বিলম্ব ঘটাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মন্ত্রণালয়ের এ ধরনের কর্মকাণ্ডের ফলে মালয়েশিয়া সরকারের কাছে বাংলাদেশ কর্মী পাঠাতে প্রস্তুত নয়, এমন বার্তা যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এতে বাংলাদেশের শ্রমবাজার অন্য দেশের হাতে যাওয়ার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকরা বলছেন, মালয়েশিয়া মানব সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর বিবৃতির তথ্যানুসারে, ১৫ জুন পর্যন্ত ২ লাখ কর্মী নিয়োগের ব্যাপারে তার মন্ত্রণালয় ডিম্যান্ড লেটার ইস্যু করেছে। যার একটি বড় অংশ বাংলাদেশের পাওয়ার কথা হলেও আমাদের ঢিলেঢালা কর্মকাণ্ড এবং সিদ্ধান্তহীনতার কারণে পার্শ্ববর্তী দেশ নেপালসহ অন্য ১২টি সোর্স কান্ট্রিতে চলে যাচ্ছে। দুই দেশের মধ্যে সবকিছু চূড়ান্ত হওয়ার পরও নানান জটিলতা, সিদ্ধান্তহীনতা এবং আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতার কারণে মালয়েশিয়া শ্রমবাজারটি হাতছাড়া হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তাই দ্রুত দেশের স্বার্থে মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনকে ডিম্যান্ড লেটার ও চুক্তিপত্র সত্যায়ন শুরু করতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা দেওয়া প্রয়োজন।

সর্বশেষ খবর