সোমবার, ২৭ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

পদ্মা সেতু নিয়ে সংসদে পাল্টাপাল্টি

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় সংসদে বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে দৃঢ়তা, প্রজ্ঞা ও সাহসের সঙ্গে সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে স্বপ্নের পদ্মা সেতু জাতিকে উপহার দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশের মানুষের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা। এ সময় সরকারি দলের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘পদ্মা সেতুর সুমহান স্থপতি’ আখ্যায়িত করে বলেন, এই পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন তিনি জাতির পিতার মতো দৃঢ় মনোবল ও সাহস রাখেন, কারও কাছে মাথা নত করেন না। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করে সারা বিশ্বের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন বাংলাদেশের সক্ষমতার কথা। বাংলাদেশ ও পদ্মা সেতু যত দিন থাকবে, তত দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিরদিন কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করবে দেশের মানুষ। অপর পক্ষে বিরোধী দলের সদস্যরা বলেন, পদ্মা সেতু কোনো রাজনৈতিক আইটেম নয়। এটি গোটা বাঙালি জাতির গর্ব ও অহংকারের বিষয়। এই সেতু নির্মাণের মাধ্যমে গোটা পৃথিবীকে আমাদের আর্থিক শক্তি ও সক্ষমতার বার্তা ইতোমধ্যে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এটি আমাদের সব থেকে বড় গৌরবের বিষয়। তবে তারা আর্থিক খাতের সমালোচনা করে বলেন, বছরের পর বছর ব্যাংকিং সেক্টর থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। এই টাকা চুরি কে করেছে, এটা কি দেখার কেউ নেই? আর্থিক খাতের লুটপাট থামানো যাচ্ছে না কেন? লুট পাট থামান। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও প্যানেল সভাপতি এ বি তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে সংসদের গতকালের বৈঠকে প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন। আলোচনায় অংশ নেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, আওয়ামী লীগের শাজাহান খান, মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাহাদারা মান্নান, গাজী মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ, বিএনপির হারুনুর রশীদ. সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ, মো. ফখরুল ইমাম ও অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম প্রমুখ। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে দুর্বার গতিতে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। শুধু স্বপ্নের পদ্মা সেতু নয়, অনেক বিশাল বিশাল অর্জন এসেছে বঙ্গবন্ধুকন্যার হাত ধরে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় ছিলেন বলেই বঙ্গবন্ধু হত্যা, জাতীয় চার নেতা হত্যাসহ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। কিন্তু দেশের মানুষ দেখেছে কীভাবে জিয়াউর রহমান ও তাঁর স্ত্রী খালেদা জিয়া এসব যুদ্ধাপরাধীকে মন্ত্রী করে তাদের গাড়িতে লাখো শহীদের রক্ত¯œাত জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছেন। আজ সেই বিএনপি নেতাদের মুখে যখন গণতন্ত্রের কথা শুনি, তখন লজ্জা হয়। আসলে ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত ছাড়া দেশের এত উন্নয়ন তাদের চোখে পড়ে না।  মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদ্মা সেতুর মহান স্থপতি আখ্যায়িত করে বলেন, এই সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের সৌভাগ্য জাতির পিতার পর শেখ হাসিনার মতো একজন ভিশনারি লিডারশিপ পেয়েছে। আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শাজাহান খান বলেন, আমি আজ আনন্দে আত্মহারা। আজ আমি মাদারীপুর থেকে রওনা দিয়ে ২ ঘণ্টায় ঢাকায় এসেছি। আমি পদ্মা নদী পার হয়েছি, সময় লেগেছে মাত্র ৫ মিনিট। একইভাবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ও সেখানে আওয়ামী লীগের জনসভায় যোগ দিতে গিয়ে দেখলাম এই অঞ্চলের মানুষ আনন্দে আত্মহারা। তিনি বলেন, আমাদের ত্রাতা হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি না থাকলে এই পদ্মা সেতু হতো না, আমাদের এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি আসত না। তিনি আরও বলেন, বিএনপির আমলে তখনকার যোগাযোগমন্ত্রী অলি আহমেদ বলেছিলেন তারা পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করবেন, কিন্তু তারা করেননি। তাদের কত মেয়াদ গেল তারা পারেনি। আওয়ামী লীগ ’৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে ২০০১ সালে পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। আজ শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন আমরা পারি। এ সময় তিনি যারা ’৭৫ এর হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার’ স্লোগান দেয় তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, পদ্মা সেতু কোনো রাজনৈতিক আইটেম নয়। রাজনৈতিক বিষয় নয়। এটি গোটা বাঙালি জাতির গর্ব ও অহংকারের বিষয়। এই সেতু নির্মাণের মাধ্যমে গোটা পৃথিবীকে আমাদের আর্থিক শক্তি ও সক্ষমতার বার্তা ইতোমধ্যে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এটি আমাদের সব থেকে বড় গৌরবের বিষয়। তিনি আরও বলেন, পদ্মা সেতু আমাদের কাছে হীরকের চেয়েও বেশি মূল্যবান। এই পদ্মা সেতুতে বছরে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা টোল আদায় হবে। টাকা আদায়ের উৎস হিসেবে পদ্মা সেতু তৈরি হয়নি। জনগণের অর্থে, জনগণের কল্যাণের জন্য, জনগণের স্বার্থে পদ্মার ওপারের ৩ কোটি মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নের জন্য এই পদ্মা সেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের উপহার দিয়েছেন।

কাজী ফিরোজ রশীদ আর্থিক খাতের সমালোচনা করে বলেন, কীভাবে পি কে হালদার প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা নিয়ে দেশের বাইরে চলে গেল? বছরের পর বছর ব্যাংকিং সেক্টর থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। এই টাকা চুরি কে করেছে, এটা কি দেখার কেউ নেই? এটা তো এক দিনে হয়নি। এ সময় তিনি আরও বলেন, আর্থিক খাতের লুটপাট থামানো যাচ্ছে না কেন। লুটপাট থামান। তিনি ধনীদের মুখ চেয়ে বাজেট করা হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, অর্থমন্ত্রী বাজেট প্রণয়নে যথেষ্ট মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন। তবে মনে হয় ধনীদের চেহারা সামনে রেখে উনি বাজেট প্রণয়ন করেছেন। কিন্তু গরিবের কথাও ভাবতে হবে। মূল্যস্ফীতির কারণে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাচ্ছে। দ্রব্যমূল্য গরিবের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে হবে। এ জন্য সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ আরও বাড়ানোর দাবি জানান তিনি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি যদি লাগামহীনভাবে এভাবে বাড়তে থাকে, তাহলে ধনী এবং দরিদ্রের মাঝে ব্যবধান আরও বেড়ে যাবে। যেটা একটা বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।

সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে অনেক আগেই পদ্মা সেতু হতো। আজ তাঁরই কন্যার হাত ধরে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে। যমুনার আগেও তিনি সেতু নির্মাণ করে উত্তরবঙ্গের মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ করে দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার কোটি কোটি মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তিনি আরও বলেন, এই পদ্মা সেতু নিয়েও কিছু দল নানা সমালোচনা করেছে। অথচ বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকতে নির্মাণ নয়, বরং তারা পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। তিনি বলেন, স্বাধীনতার ১৬ ডিসেম্বরের পর ২৫ জুন হবে আরেকটি ঐতিহাসিক দিন।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর প্রজ্ঞা, সাহস, দূরদর্শিতার মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে প্রমাণ করেছেন শেখ হাসিনা মানেই বাংলাদেশ। পদ্মা সেতু কোনো রড-সিমেন্ট-কংক্রিটের একটি স্থাপনা নয়, এটি আমাদের গর্ব, অহংকারের, সক্ষমতা এবং ষড়যন্ত্রকারীদের দাঁতভাঙা জবাব দেওয়ার সেতু। সারা বিশ দেখছে বাংলাদেশের সক্ষমতার চিত্র। কোনো শক্তিশালী রাষ্ট্রই আর আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না, সেটিও প্রমাণ হয়েছে।

সর্বশেষ খবর