শিরোনাম
শনিবার, ৩০ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা
মিরসরাই দুর্ঘটনা

আনন্দ হঠাৎ রূপ নিল বেদনায়

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ইমার্জেন্সি কেয়ার। সামনে মানুষের জটলা। স্বজন-দর্শনার্থীর উপর্যুপরি আওয়াজ। কিন্তু সব শব্দ-কণ্ঠকে ভেদ করে আকাশবিদীর্ণ করা একটি আওয়াজ সবার হৃদয়ে ছেদ ফেলেছে ‘আমার বুকের ধনকে এনে দাও’। পড়ন্ত বিকালে হাসপাতালের সামনের বৃক্ষের ডালপালাগুলো যেন বেদনায় মর্মাহত। সঙ্গে আকাশও মেঘাচ্ছন্ন।

চট্টগ্রামের মিরসরাই খৈয়াছড়া রেলগেট এলাকায় রেললাইন পার হওয়ার সময় ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসের ১১ যাত্রী নিহত হন। আহত হন আরও ৯ জন। হাসপাতালের সামনে আহতদের স্বজনদের এমন আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে আকাশ। 

এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার আগে কোচিং সেন্টারের শিক্ষার্থীরা বিনোদন করতে যান খৈয়াছড়ায়। কিন্তু মুহূর্তে একটি দুর্ঘটনায় বিষাদে রূপ নিল বিনোদন। আনন্দ রূপ নিল বেদনায়। অসময়েই খালি হয়ে যায় মায়ের বুক।  

এ ঘটনায় নিহত জিয়াবুল হক সজীবের বাবা মো. হামিদ আকাশবিদীর্ণ করা কণ্ঠে বলেন, ‘আজ জীবনের সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। আমার সব শেষ। তারা তিনজন মিলে ৫০ হাজার টাকা কিস্তি নিয়ে কোচিং সেন্টারটি চালু করে। দুই মাসের ১০ হাজার টাকা কিস্তি পরিশোধ করেছে। ভবন মালিকের কাছে ২৫ হাজার টাকা জমা আছে। আমার ছেলে মেধাবী ছিল। এলাকায় টিউশন ও ব্যাচ পড়াত। ব্যাচ পড়িয়ে সংসারে সহযোগিতা করত। স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে সংসারের হাল ধরবে। কিন্তু আজ সব শেষ। এখন আমার কী হবে? সজীবকে ছাড়া কীভাবে বাড়িতে থাকব।’

নিহত জিয়াবুল হক সজীব নগরের ওমরগণি এমইএস বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের গণিত বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন ২০১৮ সালে। কিন্তু টাকার অভাবে দ্বিতীয় বর্ষে ভর্তি করা যায়নি সজীবকে। সজীব তিন মাস আগে হাটহাজারী আমান বাজারের আর এন জে কোচিং সেন্টারটি চালু করেন। তার বাবা মো. হামিদ মুদি দোকানে চাকরি করেন। 

জানা যায়, মিরসরাইয়ের ঘটনায় ১১ জন ঘটনাস্থলে নিহত এবং নয়জনকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে ভর্তিকৃতরা হলেন মো. সৈকত (১৭), জুনায়েদ কাওসার ইমন (২০), গাড়ির সহকারী তৌকিদ ইবনে শাওন (১৮), মাহিম (১৮), তৌহিদ আহমদ (১৮), তানভীর হাসান হৃদয় (১৮), জিয়াউল হক (২১), আয়াত (১৬), তাসমির হাসান পাভেল (১৭)। তাদের সবার বাড়ি হাটহাজারী আমান বাজার খন্দকিয়া এলাকার। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঞ্জুমানে খুদ্দামুল মুসলেমিন বাংলাদেশ (একেএমবি) নিজস্ব দুটি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে লাশ দাফন-কাফন ও রোগী পরিবহনের কাজ করছে। চমেক হাসপাতালের নার্স তত্ত্বাবধায়ক মোছা. ইনসাফি হান্না বলেন, ‘মিরসরাইয়ের ঘটনায় নয়জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে ছয়জন ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে, একজন ২ নম্বর ওয়ার্ড ও দুজন ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি আছে। তাদের সিটি স্ক্যান করাসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। সবাই শঙ্কামুক্ত।’ চমেক হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ইমার্জেন্সি কেয়ারের সামনে আহত তানভীর হাসান হৃদয়ের মা লাকি আক্তার কেঁদে কেঁদে বলেন, আল্লাহ আমার হৃদয়কে ফিরাইয়া দেন। তারে ছাড়া আমি বাঁচব কী করে। আমার হৃদয় ছাড়া আর কেউ নেই। তাকে ছাড়া আমি কীভাবে থাকব? তার বাবাকে কী জবাব দেব। আমার ছেলে কথা বলেছে, এখন কীভাবে আছে আমার হৃদয়, জানি না। 

সর্বশেষ খবর