সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, আর্থিক খাতের দুর্বলতার কারণে আমাদের অর্থনীতিতে চাপ তৈরি হয়েছে। অর্থনীতির প্রধান খলনায়ক হলো আর্থিক খাতের দুর্বলতা। দীর্ঘদিনের জমে থাকা জটিলতার সংস্কার না হওয়া। এর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া এখন দেখা যাচ্ছে। আর্থিক খাতের জটিলতা, অযত্নের কারণে আমরা এগোতে পারছি না। অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে গতকাল অনলাইন প্ল্যাটফরমে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসব কথা বলেন।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, অর্থনীতিতে যে সংস্কার প্রয়োজন ছিল তা কেউ করেনি। এখন রোগ বাসা বেঁধেছে পুরো শরীরে। বর্তমানের সংকট সেই রোগের উপসর্গ মাত্র। সেটি হলো সংস্কার না হওয়ার। তিনি বলেন, আর্থিক খাতের সংকট মোকাবিলায় সরকারকে ভর্তুকি কমাতে হচ্ছে। অথচ এখন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে গরিব মানুষের সুরক্ষা দিতে ভর্তুকি দেওয়া বেশি প্রয়োজন ছিল। তিনি আরও বলেন, দেশের নীতি নির্ধারকেরা অপরিপক্ব ও বিচ্ছিন্নভাবে কথা বলছেন। তাঁদের বক্তব্য বিভ্রান্তিমূলক। কেউ বলছেন, দুই মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ঠিক হয়ে যাবে, কেউ বলছেন, ২০২৪ সালের আগে ঠিক হবে না। কেউ বলছেন, আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নেবে না, কেউ বলছেন নেবে। এসব কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে, নীতি প্রণয়নের মধ্যে রাজনীতিবিদেরা নেই, আমলানির্ভর নীতি প্রণয়ন হচ্ছে। কেউ যদি বলেন, আইএমএফের শর্তে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। এর মানে, দেশ নীতি সার্বভৌমত্ব হারি৬য়ে ফেলেছে। কোনো সরকারের জন্য এটি সম্মানজনক নয়। তবে এই ধরনের ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু প্রাক পদক্ষেপ নেওয়া হয়। তবে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি অনভিপ্রেত ও অবিবেচনাপ্রসূত। যদি ১৫ শতাংশ হতো, তাহলে সরকার এখন ভর্তুকি দিতে পারত। ড. দেবপ্রিয় বলেন, আর্থিক খাতের সংকট মোকাবিলায় দুই থেকে তিন বছরের জন্য একটি অন্তর্বর্তীকালীন অর্থনৈতিক নীতি সমঝোতা প্রয়োজন। এই নীতি সমঝোতায় নীতি বিষয়কে প্রাধান্য দিতে হবে। সেগুলো হলো, সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখা, উৎপাদন ও কর্মসংস্থান অব্যাহত রাখা এবং গরিব মানুষকে সুরক্ষা দেওয়া। আগামীতে যদি রাজনৈতিক টানাপোড়েন হয়, তখনো আর্থিক খাতকে সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, এখন একটি জাতীয় মজুরি কমিশন গঠনের সময় হয়ে গেছে। তৈরি পোশাক শ্রমিকদের এখন মহার্ঘ্য ভাতা দেওয়া উচিত। ডলারের বেশি বিনিময় হারের সুবিধা পাচ্ছেন পোশাক শিল্পের মালিকেরা। তাই এর একটি অংশ পোশাক শ্রমিকদের পাওয়া উচিত। কারণ, বিনিময় হার বৃদ্ধির কারণে শ্রমিক শ্রেণি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।