রবিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
মতবিনিময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

চা শ্রমিকরা ভূমিহীন থাকবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

চা শ্রমিকরা ভূমিহীন থাকবে না

ভিডিও কনফারেন্সে গতকাল শ্রমিকদের উপহারের চুড়ি দেখিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা চা শ্রমিকদের ভোটাধিকার দিয়েছেন। এর পরও তারা ভূমিহীন থাকবে, এটা হতে পারে না। অন্যসব নাগরিকের সঙ্গে তাদেরও ভূমির ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা হবে। গতকাল বিকালে সিলেটের লাক্কাতুরা গলফ ক্লাব মাঠে চা শ্রমিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মতবিনিময় সভায় যুক্ত হন তিনি। চা শ্রমিকদের কাছ থেকে সোনার চুড়ি উপহার পেয়েছিলেন জানিয়ে এ ঘটনায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা গণভবনে আমার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় উপহার নিয়ে এসেছিলেন। সেই উপহার এখনো আমি হাতে পরে বসে আছি। আমি কিন্তু ভুলিনি। আমার কাছে এটা হচ্ছে সব থেকে অমূল্য সম্পদ। চা শ্রমিক ভায়েরা চার আনা আট আনা করে জমিয়ে আমাকে এ উপহার দিয়েছেন। এত বড় সম্মান, এত বড় উপহার আমি আর কখনো পাইনি। তিনি বলেন, কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের জন্য আমার বাবা রাজনীতি করে গেছেন। কাজেই তারা কষ্টে থাকবে, এটা হতে পারে না। শ্রমিকদের যারা কষ্ট করে, তাদের দিকে আমাদের তাকানো দরকার। শেখ হাসিনা বলেন, চা বাগানের মালিকরা অনেক বিনীতপ্রাণ, তারা শ্রমিকদের জন্য শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। চা শ্রমিকদের শিক্ষায় বাগানের স্কুলগুলো জাতীয়করণ করা হবে। চা বাগানের হাসপাতালগুলোয় অ্যাম্বুলেন্স চাওয়া হয়েছে, তার ব্যবস্থা করা হবে। চা বাগানের শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। চা বাগানে উঁচুনিচু টিলায় ওঠানামা করতে হয়, যেটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই মাতৃত্বকাতৃণ ছুটি ছয় মাস করা আবশ্যক মনে করি। আর গ্রাচুইটি কেন দেওয়া হচ্ছে না, সেটা দেখব। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য আমরা অনেক কাজ করে যাচ্ছি। শ্রমিক ও তাদের শিশুরা যাতে পুষ্টিকর খাবার খেতে পারে সে ব্যবস্থা করব। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের চা শ্রমিক, যাদের ব্রিটিশরা একসময় নিয়ে এসেছিল, তাদের অমানবিক অত্যাচার করত, খাটাত। জাতির পিতা শেখ মুজিব টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হওয়ার পর বিভিন্ন ব্যবস্থা নেন এবং পরবর্তীতে তাদের নাগরিকত্ব দেন, ভোটের অধিকার দেন। আমার আর যত নাগরিক হিজড়া, বেদে অন্য যারা ভাসমান প্রত্যেককে আমি আলাদা করে ঘর করে দিচ্ছি, তাদের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। এখানে আমার চা শ্রমিকরা অবহেলিত থাকবে, এটা কখনো হতে পারে না।

চা শ্রমিকদের নানা সমস্যা সমাধানে কাজ করার আশ্বাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যারা শ্রম দেয় তাদের দিকে তাকানো আমাদের দরকার। আমি এটুকু বলতে পারি, আমার বাবা তো এই কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষের জন্যই রাজনীতি করে গেছেন, দেশ স্বাধীন করে গেছেন। কাজেই তাঁর বাংলাদেশে মানুষ কষ্টে থাকবে, এটা হতে পারে না। আমার সাধ্যমতো আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি, এ দেশে কেউ ভূমিহীন থাকবে না। যারা ভূমিহীন তাদের জন্য আমরা ঘর করে দিচ্ছি। জাতির পিতা শেখ মুজিবই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, কিন্তু শেষ করে যেতে পারেননি। আমি মনে করি, তাঁর মেয়ে হিসেবে এটা আমার দায়িত্ব-কর্তব্য। আমরা সেটা করেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, চিকিৎসার ব্যবস্থায় অ্যাম্বুলেন্স চাওয়া হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্স তো দেবই। এই মাতৃত্বকালীন যেন কেউ কষ্ট না পায় সে ব্যবস্থা করব। দ্রুত যাতে চিকিৎসা পান সে ব্যবস্থা করব। কমিউনিটি ক্লিনিক আমরা করেছি, সেখানে কিন্তু মাতৃত্বকালীন চিকিৎসাটা আমরা বিনা পয়সায় দিই, ওষুধ দিই। কাজেই যেখানে যেখানে বাগান আছে, তার আশেপাশে এই ক্লিনিকগুলো আছে কি না সেটা দেখব। অনেক জায়গায় আছে আমি জানি, আবার অনেক জায়গায় দূরত্বের কারণে না-ও থাকতে পারে। দ্রুত যাতে চিকিৎসা পেতে পারেন এবং অ্যাম্বুলেন্সে রোগী নেওয়ার ব্যবস্থাটা যাতে হয় আমরা সে ব্যবস্থা করব। গ্র্যাচুইটি কেন দেওয়া হচ্ছে না, এটা আমরা দেখব। সরকারপ্রধান বলেন, খাদ্য নিরাপত্তার জন্য আমরা অনেক কাজ করে যাচ্ছি। শুধু খাবার না, পুষ্টিকর খাবার যেন আপনারাই শুধু না, আপনাদের শিশুরাও যাতে পেতে পারে সেটা আমরা দেখব। আমি একটা কথাই বলতে পারি, আমার একটাই চিন্তা বাংলাদেশের মানুষকে নিয়ে, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্যই কাজ করছি। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই, চা শ্রমিকরা সব সময় নৌকায় ভোট দেন। আপনারা ভোট দিয়েছেন বলেই সেবার সুযোগ পেয়েছি। বারবার, তিনবার ক্ষমতায়ও এসেছি। এজন্যই দেশটাকে উন্নয়নের দিকে নিয়ে যেতে পারছি। প্রধানমন্ত্রীর কথায় ভরসা রাখায় চা শ্রমিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, আমি আপনাদের কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি যে আমার ওপর ভরসাটা রেখেছেন। আমার কথা মেনে নিয়েছেন, কাজে যোগ দিয়েছেন। আপনারা ভালো থাকেন, এটাই আমি চাই। আমাদের নেতাদের বলব, আপনাদেরও দায়িত্ব আছে এই শ্রমিকদের দিকে তাকানো। তারা কিন্তু কোনো দিকে তাকায় না, সব সময় নৌকা মার্কায় ভোট দেয়। কাজেই যারা নৌকার জয় চায়, তাদের সবার দায়িত্ব এই শ্রমিকদের দিকে দেখা। দেশের চা বাগানবেষ্টিত চার জেলা থেকে আটজন শ্রমিক এ মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন। বক্তব্যে নিজেদের অভাব ও দাবির কথা জানান তারা। একই সঙ্গে শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাসের কথাও তুলে ধরেন তারা। ভার্চুয়ালি এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। সিলেটে চা শ্রমিকদের পক্ষে বক্তব্য দেন চা শ্রমিক সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা ও নারী চা শ্রমিক শ্যামলী গোয়ালা। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ পাত্রখোলা চা বাগানের শ্রমিকদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তাঁকে স্বাগত জানান মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান। সেখানে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ মো. আবদুস শহীদ, সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নেছার আহমদসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা। এরপর হবিগঞ্জের চ ীছড়া চা বাগান থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান। এ সময় শ্রমিকদের পক্ষে কথা বলেন চা শ্রমিক শিমু রানী রায়। এরপর চট্টগ্রামের কর্ণফুলী চা বাগানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক। সেখান থেকে চা শ্রমিকরা বক্তব্য দেন এবং চা শ্রমিক ও তাদের সন্তানরা গানের তালে নৃত্য পরিবেশন করেন। প্রধানমন্ত্রীও মুগ্ধ নয়নে তাদের পরিবেশনা দেখেন। দীর্ঘ ১৮ দিন ধর্মঘট পালনের পর ২৭ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাগান মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৫০ টাকা বাড়ান। এতে চা শিল্পের অচলাবস্থা কাটে। ১৭০ টাকা মজুরিতে ২৮ আগস্ট থেকে কাজে ফেরেন শ্রমিকরা। সে সময় চা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলার আগ্রহের কথা জানান সরকারপ্রধান।

সর্বশেষ খবর