বৃহস্পতিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

বিএনপির বিক্ষোভ চলছেই

খুলনার গুলিবিদ্ধ দুই নেতা ঢাকায়, নাটোরে ৩৫০ জন আসামি, ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপি কার্যালয়ে কৃষি কর্মকর্তার সাইনবোর্ড, শাওন হত্যার প্রতিবাদে যুবদলের র‌্যালি

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপির বিক্ষোভ চলছেই

রাজধানীতে গতকাল পুলিশি ব্যারিকেডের মধ্যে যুবদলের র‌্যালি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

খুলনা মহানগরীর দৌলতপুরে বিএল কলেজ গেটে গুলিবিদ্ধ দুই বিএনপি নেতা রিয়াজ পারভেজ শাহেদ ও রফিকুল ইসলামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আনা হয়েছে। পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষের ঘটনায় নাটোরে বিএনপির ৩৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। নারায়ণগঞ্জে যুবদল নেতা শাওন প্রধানের মৃত্যুতে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশে শোকর‌্যালি করেছে যুবদল। এদিকে ঠাকুরগাঁও সদরে রাতারাতি বিএনপি কার্যালয় হয়ে গেছে ‘কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়’। কে বা কারা বিশাল আকারের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছে। তবে অস্বীকার করেছেন সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তা। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

খুলনা বিএনপির গুলিবিদ্ধ দুই নেতা ঢাকায় : খুলনা মহানগরীর দৌলতপুরে গুলিবিদ্ধ ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক রিয়াজ পারভেজ শাহেদ ও স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা রফিকুল ইসলামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। গতকাল ভোরে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাদের ঢাকায় আনা হয়।

এর আগে মঙ্গলবার রাত ৯টায় দৌলতপুর বিএল কলেজ ২ নম্বর গেট-সংলগ্ন এলাকায় তাদের দুর্বৃত্তরা গুলি করে। রিয়াজের ডান হাতের বাহুতে একটি ও রফিকের পিঠে তিনটি গুলি লাগে। জানা যায়, রফিককে সঙ্গে নিয়ে দৌলতপুরের লঞ্চঘাটের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে রাতে মোটরসাইকেলে বাড়ি ফিরছিলেন রিয়াজ পারভেজ। পথে বিএল কলেজ ২ নম্বর গেটের সামনে স্পিডব্রেকারে মোটরসাইকেল স্লো করলে পেছন থেকে তাকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। রিয়াজের হাতে একটি ও রফিকের পিঠে তিনটি গুলি বিদ্ধ হয়। গুলির শব্দে এলাকাবাসী এগিয়ে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। রক্তাক্ত অবস্থায় দুজনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থল থেকে চারটি গুলির খোসা উদ্ধার হয়েছে। হামলাকারীরা মোটরসাইকেল ও সাদা রঙের প্রাইভেট কারে এসেছিল বলে জানা গেছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

নাটোরে বিএনপির ৩৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা : নাটোরের লালপুর উপজেলার গৌরীপুরে মঙ্গলবার বিকালে পুলিশ-বিএনপি ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় বিএনপির ৫৮ নেতার নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ৩০০ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতেই লালপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হুমায়ুন কবীর বাদী হয়ে এ মামলা করেন। ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে বিএনপির দুই কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা হলেন দক্ষিণ লালপুরের গোলাম মোস্তফা তুহিন (৪২) ও পালিদেহা গ্রামের মহির উদ্দিন (৫৮)। সকালে তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এদিকে গৌরীপুরে বিএনপির বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর নির্যাতনের ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। মঙ্গলবার আতিকুর রহমান নামে এক সাংবাদিক বাদী হয়ে লালপুর থানায় এ জিডি করেন। অভিযুক্ত কায়কোবাদ হোসেন লালপুর উপজেলা যুবলীগের ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক ও লালপুর পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক। তিনি উপজেলার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের মৃত সাহাবাজ মণ্ডলের ছেলে। আতিকুর রহমান জানান, বিএনপির বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম জয়ের সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন। এ সময় পেছন থেকে যুবলীগ নেতা কায়কোবাদ গণমাধ্যমকর্মীদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন এবং তাদের ক্যামেরা ও মোবাইল ফোন কেড়ে নেন। এ ছাড়া ওই যুবলীগ নেতা গণমাধ্যমকর্মীদের ধাক্কা মেরে ফেলে দেন এবং তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধার সৃষ্টি করেন। পরে সাংবাদিক নেতাদের হস্তক্ষেপে মোবাইল ফোন ও ক্যামেরা উদ্ধার করা হয়।

নারায়ণগঞ্জে যুবদলের শোকর্যালি : নারায়ণগঞ্জে যুবদল নেতা শাওন প্রধান হত্যার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শোকর‌্যালি করেছে মহানগর যুবদল। গতকাল দুপুরে নগরের কিল্লারপুল এলাকায় এ শোকর‌্যালি করেন নেতা-কর্মীরা। এতে নেতৃত্বে দেন মহানগর যুবদল আহ্বায়ক মমতাজ উদ্দিন মন্তু ও সদস্যসচিব মনিরুল ইসলাম সজল। ১ সেপ্টেম্বর পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে শাওন প্রধান নিহত হওয়ার সাত দিন পর প্রথমবারের মতো নারায়ণগঞ্জে যুবদলকে মিছিল করতে দেখা যায়। শোকর‌্যালি শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন মন্তু ও সজল। এ সময় নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদল, বন্দর, সিদ্ধিরগঞ্জ, সদর থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের যুবদল নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

জামিন পেলেন ২২ বিএনপি নেতা : নারায়ণগঞ্জে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের মামলায় উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিন পেয়েছেন জেলা ও মহানগর বিএনপির ২২ নেতা। গতকাল বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাই কোর্ট বেঞ্চ তাদের ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন মঞ্জুর করেন। জামিনপ্রাপ্তরা হলেন- মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবদুস সবুর খান সেন্টু, সহসভাপতি আতাউর রহমান মুকুল, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আল ইউসুফ খান টিপু, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান আহমেদ, মহানগর ছাত্রদল সভাপতি শাহেদ আহমেদ প্রমুখ। বিএনপি নেতাদের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট মো. মাহাবুবুর রহমান খান, ব্যারিস্টার মেহেদী হাসান, ব্যারিস্টার মার-ই-য়াম খন্দকার ও অ্যাডভোকেট নুরুল হুদা।

বিএনপি কার্যালয় হয়ে গেলকৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় : পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে শনিবার বিএনপি কার্যালয় ভাঙচুরের পর আসবাবপত্রে আগুন ধরিয়ে দেন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা। ঘটনার তিন দিনের মাথায় সেখানে কৃষি বিভাগের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়ায় মঙ্গলবার গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটে। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, তাদের দফতর থেকে সেখানে সাইনবোর্ড ঝোলানো হয়নি। জেলা যুবদল সভাপতি চৌধুরী মাহেবুল্লাহ আবু নুর জানান, রুহিয়া থানা বিএনপি কার্যালয়ের জায়গাটি তাদের পৈতৃক সম্পত্তি। ১৯৯৬ সালে তার বাবা আবদুল জব্বার চৌধুরী ৫৩ শতক জমি বিএনপিকে কার্যালয় হিসেবে ব্যবহারের জন্য দেন। সেই থেকে বিএনপি ওই জায়গা ব্যবহার করে আসছে। তবে স্থানীয় লোকজনের ধারণা, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরাই এ কাজ করেছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর