শিরোনাম
শনিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগে সম্মেলনের ঢেউ

ডিসেম্বরে জাতীয় অক্টোবর থেকে মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, ছাত্রলীগ ও তাঁতী লীগের সম্মেলন। চলছে জেলা-উপজেলায়

রফিকুল ইসলাম রনি

আওয়ামী লীগে সম্মেলনের ঢেউ

আওয়ামী লীগে শুরু হয়েছে সম্মেলনের ঢেউ। আগামী তিন মাস জেলা থেকে কেন্দ্র এবং সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন চলবে। ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে দলের কেন্দ্রীয় সম্মেলন। আগামী অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাচ্ছে দলের মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলন। তাছাড়া ২০টির অধিক জেলায় সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। কেন্দ্র, জেলা-সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনকে সামনে রেখে নেতা-কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ, আগ্রহের পাশাপাশি কৌতূহল বাড়ছে। সেই সঙ্গে চলছে পদপ্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ।

প্রতি তিন বছর পর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১৯ সালের ২০ ও ২১ ডিসেম্বর। সে অনুযায়ী ডিসেম্বরের ২৩ তারিখ বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। যথাসময়েই সম্মেলনের প্রস্তুতি নিতে দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা-সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন দ্রুত করার তাগিদ দিয়েছেন তিনি। সে অনুযায়ী কাজ শুরু হয়েছে।

দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, চলতি বছর ডিসেম্বরে জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে ভিতরে ভিতরে গঠনতন্ত্র, ঘোষণাপত্র সংশোধনের কাজ চলছে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সম্মেলনের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে এখন জেলা-উপজেলার সম্মেলন চলছে। সহযোগী যেসব সংগঠনের মেয়াদ শেষ সেগুলোরও সম্মেলন নভেম্বরের মধ্যে হয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘নেত্রী দেশে ফিরে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক ডাকতে পারেন। ওই বৈঠকেই কেন্দ্রীয় সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত হতে পারে।’

গত কয়েকদিন আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডি কার্যালয়ে সাবেক ছাত্রনেতাদের এমনকি জেলার প্রবীণ নেতাদেরও আনাগোনা দেখা গেছে। তারা প্রতিদিন বিকালে দলীয় সভানেত্রীর কার্যালয়ে আসছেন। কেউ সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ পদে আসতে চান। কেউ চান কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঢুকতে। তারা দলীয় সভানেত্রীর অফিসের পাশাপাশি দলের সিনিয়র নেতাদের বাসা-বাড়িতে যাওয়া আসা শুরু করেছেন। তারা তাদের রাজনৈতিক ইতিহাস তুলে ধরছেন।

জেলা সম্মেলনের জোর প্রস্তুতি : আওয়ামী লীগের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে এখনো ৩৩টি জেলা সম্মেলন বাকি। আগামী নভেম্বরের মধ্যেই মেয়াদোত্তীর্ণ এসব জেলার সম্মেলন শেষ করতে চায় আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি জেলার সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের ইউনিট, ওয়ার্ড-থানা সম্মেলন শেষ হয়েছে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কিছুটা পিছিয়ে আছে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে। ঢাকা বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ জেলা ঢাকা। কিন্তু এই জেলা কমিটির কোনো কার্যক্রম দৃশ্যমান নেই। দলীয় কোনো কর্মসূচিতে দেখা মেলে না ঢাকা জেলার। জানা গেছে, ঢাকা বিভাগকে ঢেলে সাজাতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। ইতোমধ্যে চারটি জেলার সম্মেলন শেষ করা হয়েছে। ২২ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ জেলা, ২৩ অক্টোবর ঢাকা জেলা, ২৪ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম। তিনি বলেন, নির্ধারিত জেলা ছাড়াও সেসব জেলা সম্মেলন বাকি সেগুলো নভেম্বরের মধ্যে শেষ করা হবে।’

চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আগামী ২৬ নভেম্বর কুমিল্লা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে। এ ছাড়া আরও কয়েকটি জেলা সম্মেলনের জন্য উপযুক্ত করা হচ্ছে। আশা করছি যথা সময়েই শেষ করা যাবে।’ রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘জেলায় আর মাত্র তিনটি উপজেলা সম্মেলন বাকি আছে। সেগুলো অক্টোবরের মধ্যে শেষ করা হবে।’

অক্টোবর থেকে সহযোগী ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলন : আগামী অক্টোবর থেকে ছাত্রলীগ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ ও তাঁতী লীগের সম্মেলন শুরু হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন থেকে দেশে ফিরলেই সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হবে। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শিডিউল অনুযায়ী সাপ্তাহিক ছুটির দিন প্রতি শনিবার একটি করে সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে পারে। অবশ্য এক্ষেত্রে দু-একটির সম্মেলন নভেম্বর প্রথম দিকেও গড়াতে পারে বলে সূত্র জানায়।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ১০ মে সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে সহযোগী সংগঠনগুলোর যৌথ সভা করে ছাত্রলীগ, যুব মহিলা লীগ ও মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন আয়োজন করার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে ওই সংগঠন তিনটির নেতাদের আওয়ামী লীগ অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে কথা বলে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিডিউল নেওয়ার কথা বলা হয়। যুব মহিলা লীগ ও মহিলা আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সাক্ষাৎ ও সময় চেয়ে আওয়ামী লীগের দফতরে চিঠি দিয়েছে। তবে ছাত্রলীগের মেয়াদ শেষ হলেও সম্মেলন নিয়ে নানা টালবাহানা করছে বলে পদপ্রত্যাশীদের অভিযোগ।

মহিলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১৭ সালের ৪ মার্চ। তিন বছর মেয়াদি এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয় ২০২০ সালের ৪ মার্চ। একই বছর ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় যুব মহিলা লীগের সম্মেলন। তাদের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২০ সালের ১১ মার্চ। তেমনি তাঁতী লীগের মেয়াদ হয়েছে ২০২০ সালের ১৯ মার্চ।

ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের মে মাসে। ওই বছরের জুলাইয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান রেজওয়ানুল হক চৌধুরী ও গোলাম রাব্বানী। উন্নয়ন প্রকল্প থেকে চাঁদা দাবিসহ নানা অভিযোগে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে পদ হারান দুজন। তাদের স্থলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয় আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্যকে। ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আল নাহিয়ান খান ও লেখক ভট্টাচার্যকে ভারমুক্ত করা হয়। জয়-লেখক প্রায় তিন বছর ধরে সংগঠনের দায়িত্ব পালন করছেন।

আওয়ামী লীগে সম্মেলনের ঢেউ শুরু হয়েছে জানিয়ে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘তৃণমূলসহ সহযোগী সংগঠন সবাই এখন সম্মেলনমুখী। আগামী তিন মাস টানা সম্মেলন হবে জেলা ও সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের। জেলা-উপজেলা এবং সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন শেষে চলতি বছরের ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন হবে।’

সর্বশেষ খবর