মঙ্গলবার, ৪ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

বনানীতে মেয়ের কবরে শায়িত তোয়াব খান

নিজস্ব প্রতিবেদক

বনানীতে মেয়ের কবরে শায়িত তোয়াব খান

শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও চোখের জলে বিদায় নিলেন বরেণ্য সাংবাদিক, ভাষাসৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা তোয়াব খান। গতকাল বাদ আসর রাজধানীর বনানী কবরস্থানে মেয়ে এষা খানের কবরে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয় একুশে পদকপ্রাপ্ত এই বর্ষীয়ান সাংবাদিককে। গত শনিবার ৮৭ বছর বয়সে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। গতকাল সকাল ১০টায় রাজধানীর তেজগাঁওয়ে দৈনিক বাংলা অফিসে তোয়াব খানের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১১টায় বরেণ্য সাংবাদিকের মরদেহ নেওয়া হয় রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। জাতীয় পতাকায় কফিন মুড়ে দেওয়া হয় গার্ড অব অনার। দুপুর ১টায় তোয়াব খানের নিথর দেহ নেওয়া হয় জাতীয় প্রেস ক্লাবে। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে ফুলেল শ্রদ্ধায় সিক্ত হন বরেণ্য এই সাংবাদিক। গুলশান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে বাদ আসর তোয়াব খানের তৃতীয় জানাজা শেষে দাফন করা হয় তোয়াব খানের মরদেহ।

সর্ব সাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের উদ্দেশে বেলা ১১টায় তোয়াব খানের মরদেহ নেওয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে কফিন জাতীয় পতাকায় মুড়ে ঢাকা জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলামের উপস্থিতিতে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। এ সময় ১ মিনিট নীরবতা পালন করেন সবাই। শহীদ মিনারে বরেণ্য সাংবাদিক তোয়াব খানের প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতির পক্ষে তার কার্যালয়ের কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তার সহকারী সামরিক সচিব জি এম রাজিব আহমেদ, আওয়ামী লীগের পক্ষে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান। এ ছাড়া বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, জাতীয় কবিতা পরিষদ, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ, সম্প্রীতি বাংলাদেশ, কুমিল্লার কাগজ, সৈয়দ রেজাউর রহমান অ্যাসোসিয়েটস একুশে পদক পাওয়া এই সাংবাদিককে শেষ শ্রদ্ধা জানান। শ্রদ্ধা জানানো শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, তোয়াব খানের মৃত্যুতে আমাদের সংবাদপত্র জগতে এক বটবৃক্ষের পতন হলো। এই শূন্যতা সহজে পূরণ হওয়ার নয়। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গার্ড অব অনার ও শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে তোয়াব খানের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর মন্ত্রিসভার সদস্য, সাংবাদিক সংগঠন ও গণমাধ্যমকর্মী ও সর্বস্তরের মানুষ তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। জানাজা শেষে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

এ সময় তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, তোয়াব খান সাংবাদিকতায় একজন পথিকৃৎ। তার মৃত্যু আমাদের সাংবাদিকতা জগতের জন্য শুধু নয়, পুরো জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, আজ আমরা শোকে ভারাক্রান্ত। প্রেস ক্লাবের আজীবন সদস্য তোয়াব ভাই আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তোয়াব ভাই চলে যাওয়া মানে সাংবাদিকতায় বিরাট শূন্যতা তৈরি হওয়া। জাতীয় প্রেস ক্লাব ছাড়াও প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, বাংলাদেশ সাব-এডিটর কাউন্সিল, জনকণ্ঠ, প্রথম আলো, কালের কণ্ঠ, সমকাল, বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট, নারী সাংবাদিক কেন্দ্র, মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক ফোরাম, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে তোয়াব খানের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। দ্বিতীয় জানাজা ও শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রেস ক্লাব থেকে তোয়াব খানের মরদেহ নেওয়া হয় গুলশানের বাসায়। শেষবারের মতো তার মুখ দেখেন পরিবার ও স্বজনরা। গুলশানের কেন্দ্রীয় মসজিদে তৃতীয় নামাজে জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে মেয়ে এশা খানের কবরে সমাহিত করা হয়েছে বাংলাদেশের সাংবাদিকতার কিংবদন্তিকে। এর আগে গত শনিবার দুপুরে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮৭ বছর বয়সে মারা যান একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক তোয়াব খান। ২০১৬ সালে একুশে পদক পাওয়া তোয়াব খানের জন্ম ১৯৩৪ সালের ২৪ এপ্রিল, সাতক্ষীরার রসুলপুর গ্রামে। তার সাংবাদিকতা জীবনের শুরু ১৯৫৩ সালে সাপ্তাহিক জনতার মাধ্যমে। দেশ স্বাধীনের পর দৈনিক পাকিস্তান থেকে বদলে যাওয়া দৈনিক বাংলার প্রথম সম্পাদক ছিলেন তিনি। এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ এবং প্রথম অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের প্রেস সচিবের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। তিনি নিউজবাংলা এবং নতুন আঙ্গিক ও ব্যবস্থাপনায় প্রকাশিত দৈনিক বাংলার সম্পাদকের দায়িত্ব নেন। তোয়াব খানের নেতৃত্বে দৈনিক বাংলার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় গত ৪ সেপ্টেম্বর।

সর্বশেষ খবর