শুক্রবার, ২১ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

একমঞ্চে সাত সম্মেলন

রফিকুল ইসলাম রনি

একমঞ্চে সাত সম্মেলন

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন আগামী ডিসেম্বরে। দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগেই এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। তবে এখনো ঠিক করা হয়নি দিন-তারিখ। সম্মেলনের দিনক্ষণ নির্ধারণসহ ১১ এজেন্ডা নিয়ে ২৮ অক্টোবর গণভবনে বসছে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক। এ বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হবে দলের ২২তম জাতীয় সম্মেলনের। একই সঙ্গে ঘোষণা আসবে চার সহযোগী ও দুই ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলনের। অর্থ সাশ্রয়ের জন্য এবার পর্যায়ক্রমে একমঞ্চে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগসহ সাত সংগঠনের সম্মেলন হবে। দলের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, অতীতের যে-কোনো কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকের চেয়ে এবারের বৈঠকে ভিন্নতা রয়েছে। জাতীয় সম্মেলন সামনে রেখে এ বৈঠককে খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন দলটির নেতারা। কারণ দলের ২২তম জাতীয় সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত করা হতে পারে এ দিনের বৈঠকে। একই সঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাওয়া ছাত্রলীগ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, তাঁতী লীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হবে। অতীতের রেওয়াজ অনুযায়ী এবারও জাতীয় সম্মেলনের আগে হবে ঢাকা মহানগরী উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলন। অন্যদিকে ডিসেম্বরে রংপুর সিটি নির্বাচন, বিএনপির আন্দোলন নিয়ে নিজেদের সাংগঠনিক কর্মসূচিসহ নানা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসবে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আগামী ডিসেম্বরেই জাতীয় সম্মেলন হবে। ২৮ অক্টোবর দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে তারিখ চূড়ান্ত হতে পারে। এ ছাড়া সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম মেয়াদোত্তীর্ণ সংগঠনের সম্মেলনেরও দিকনির্দেশনা দিতে পারেন দলীয় সভানেত্রী।’ প্রতি তিন বছর পর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১৯ সালের ২০ ও ২১ ডিসেম্বর। সে অনুযায়ী ২০ ডিসেম্বর বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, এবার ২৩-২৪ অথবা ৩০-৩১ ডিসেম্বর দলের ২২তম জাতীয় সম্মেলন হবে। বিগত দিনে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা জানিয়েছেন, প্রতি বছর জাঁকজমকপূর্ণ সম্মেলন করা হলেও এবার তা হচ্ছে না। কারণ বিশ্বমন্দার কারণে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে অর্থ সাশ্রয় করার আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে আগামী বছর বিশ্বমন্দা বড় আকার ধারণ করতে পারে বলে আগাম সতর্কবার্তা দিচ্ছেন। সে কারণে নিজ দলের সম্মেলনে আর্থিকভাবে খরচ কমানোর পক্ষে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। এজন্য দলের নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তাই একমঞ্চে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগসহ সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সম্মেলন করার পরিকল্পনা হচ্ছে। রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের এ সম্মেলন হবে। দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের নেতারা জানান, আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন ঘিরে সব সময়ই এক ধরনের উৎসবের আমেজ থাকে। রাজধানী ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, প্রবেশমুখগুলো বর্ণিলভাবে সাজানো হয়। এবারকার সম্মেলনে এ ক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রম হবে। সাজসজ্জা ও বর্ণিল আয়োজন কমানো হলেও রেকর্ডসংখ্যক কাউন্সিলর-ডেলিগেটের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হবে। খরচ কমাতে কাটছাঁট করা হবে সাজসজ্জা, জাঁকজমক, আলোকসজ্জা কিংবা অন্য কোনো ধরনের বর্ণাঢ্য আয়োজন। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সাজসজ্জা কমিয়ে যেন অর্থ সাশ্রয় হয় সেদিক নজর রাখছেন প্রধানমন্ত্রী। সে কারণেই একমঞ্চে কেন্দ্রীয়সহ সব সংগঠনের সম্মেলন হতে পারে।’ জানা গেছে, দিনক্ষণ চূড়ান্ত না হলেও ইতোমধ্যে দলটির সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে কমপক্ষে ১০টি উপকমিটি প্রস্তুত করতে দলের দফতর সম্পাদককে নির্দেশ দিয়েছেন।

প্রথা অনুযায়ী সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি, ঘোষণাপত্র, দফতর, প্রচার-প্রকাশনা, স্বেচ্ছাসেবক ও শৃঙ্খলা, মঞ্চ ও সাজসজ্জা, গঠনতন্ত্র, সাংস্কৃতিক, খাদ্য ও স্বাস্থ্যবিষয়ক উপকমিটি গঠনের উদ্যোগ রয়েছে। ২৮ অক্টোবর দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এ উপকমিটিগুলো গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে। দলটির নেতারা জানিয়েছেন, জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে নভেম্বরের প্রথম সপ্তায় কর্মযজ্ঞ শুরু হবে। দলের গঠনতন্ত্র, ঘোষণাপত্র পরিবর্তন, পরিমার্জন, সংশোধন ও সম্মেলন সফল করা নিয়ে কার্যক্রম শুরু হবে। একইভাবে সপ্তাহের শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন এবং ঢাকা মহানগরী উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলনের আয়োজন করা হবে। সে অনুযায়ী ১২ অথবা ১৯ নভেম্বর টানা সম্মেলন শুরু হবে। প্রতি শনিবার একটি করে সংগঠনের সম্মেলন হতে পারে। আর ২৩-২৪ অথবা ৩০-৩১ ডিসেম্বর দলের জাতীয় সম্মেলন হতে পারে। দলের ২১তম জাতীয় সম্মেলনের আগেও যুবলীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ, মৎস্যজীবী লীগ, ঢাকা মহানগরী উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এবারও মেয়াদোত্তীর্ণ ছাত্রলীগ, যুব মহিলা আওয়ামী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, তাঁতী লীগ, ঢাকা মহানগরী উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলন হতে যাচ্ছে। নেতৃত্বে নিষ্ক্রিয়তা ও দ্বন্দ্বের কারণে মৎস্যজীবী লীগের কমিটি ভেঙে নতুন সম্মেলন দেওয়া হতে পারে বলে দলের একাধিক সূত্র জানিয়েছেন।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর