শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা
গাইবান্ধার তদন্ত প্রতিবেদন জমা

সাক্ষীর অভাবে পার পেয়ে যাচ্ছেন অনেকেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে অর্ধশতাধিক কেন্দ্রে ‘অনিয়মের’ ঘটনা তদন্তের প্রতিবেদন গতকাল নির্বাচন কমিশন সচিবের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে অনিয়মে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার পাশাপাশি আগামী নির্বাচনের জন্য বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরেছে তদন্ত কমিটি।

সূত্র জানিয়েছেন, প্রায় ৬০০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ হচ্ছে ৩৩ পৃষ্ঠার। তবে প্রতিবেদনের সঙ্গে অডিও-ভিডিও জমা দেওয়া হয়েছে ইসির কাছে। জানা গেছে, তদন্ত কমিটি বেশকিছু দায়ী ব্যক্তিকে চিহ্নিত করেছে। তবে পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাবে তদন্ত কমিটি ৫১ ভোট কেন্দ্রে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত সবাইকে চিহ্নিত করতে পারেনি। এ ক্ষেত্রে ৫১ কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র ৯টি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য দুই প্রার্থীর এজেন্ট খুঁজে পেয়েছে কমিটি। বাকি ৪২ কেন্দ্রে অনিয়মের প্রত্যক্ষদর্শী ছিল না বললেই চলে। তবে সিসি ক্যামেরার ভিডিও দেখে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত বেশকিছু ব্যক্তিকে শনাক্ত করেছে কমিটি; তাদের অধিকাংশ বহিরাগত। এ ছাড়া যেসব কর্মকর্তা ভোট সুষ্ঠু হওয়ার বিষয়ে লিখিত দিয়েছিলেন তারাও তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হয়ে ভিন্ন কথা বলেছেন। কেউ কেউ বলছেন, তাদের থেকে জোর করে লিখিত নেওয়া হয়েছে। এদিকে নির্বাচন কমিশন তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন নিয়ে রবিবার বৈঠকে বসার কথা। প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শাস্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সাংবিধানিক এ সংস্থাটি। ইসি পরে বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানাতে পারে।

তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান বলেন, রিপোর্ট নিয়ে বিস্তারিত স্টাডি করা হবে। কমিশনে পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচন হবে। কেউ দোষী হলে আইন ও বিধান অনুযায়ী কমিশন ব্যবস্থা নেবে।

প্রতিবেদন জমার বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান ও ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ‘আমরা তদন্ত প্রতিবেদন সচিবের বাসায় পৌঁছে দিয়েছি।’ তবে প্রতিবেদনে কী আছে সে বিষয়ে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।

১২ অক্টোবর গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে ইভিএমে ভোট গ্রহণের মধ্যে সিসি ক্যামেরায় অনিয়মের দৃশ্য দেখে মাঝপথে ঢাকা থেকে নির্বাচন বন্ধের নির্দেশ দেয় ইসি। এরপর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল অনিয়মে সম্পৃক্তদের চিহ্নিত করতে তিন সদস্যের এ তদন্ত কমিটি করার ঘোষণা দেন। কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথকে আহ্বায়ক করে গঠিত এ কমিটিতে ইসির যুগ্মসচিব (প্রশাসন ও অর্থ) মো. কামাল উদ্দিন বিশ্বাস সদস্য ও যুগ্মসচিব (চলতি দায়িত্ব) মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী সদস্যসচিব হিসেবে আছেন। এ ছাড়া কারিগরি কাজে সহায়তার জন্য ইসি সচিবালয়ের আইডিইএ-২ প্রকল্পের স্কোয়াড্রন লিডার মো. শাহরিয়ার আলমও যুক্ত রয়েছেন কমিটিতে।

১৮-২০ অক্টোবর গাইবান্ধা গিয়ে তদন্তকাজ পরিচালনা করে কমিটি। তদন্তকাজ পরিচালনায় কমিটি ৬৮৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণের কথা থাকলেও কয়েকজন প্রার্থীর এজেন্ট কেন্দ্রে না থাকায় সব মিলিয়ে ৬২২ জনের সাক্ষ্য নিতে পেরেছে। সংশ্লিষ্ট সবাই তদন্ত কমিটির সামনে বক্তব্য দেওয়ার পাশাপাশি লিখিতভাবে স্বাক্ষরও করেছেন। এ-সংক্রান্ত নথিপত্র কমিটির কাছে রয়েছে। এ নির্বাচনে পাঁচজন প্রার্থী থাকলেও আওয়ামী লীগ প্রার্থী ছাড়া অন্য প্রার্থীরা বন্ধ ঘোষিত ৫১ কেন্দ্রের মধ্যে ভোটের দিন শুধু দুটি কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। এ ছাড়া এজেন্ট না দেওয়ার প্রবণতা, প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক অবস্থায় না থাকা এবং ভোট নিয়ে প্রচলিত ভীতি ও অতীতের নেতিবাচক অভিজ্ঞতাও উঠে এসেছে গাইবান্ধা উপনির্বাচনে। সিসি ক্যামেরায় চিহ্নিত করে ভোটে সংশ্লিষ্টদের পাশাপাশি বহিরাগত ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত এমন লোকদের বক্তব্য নিয়েছে কমিটি। সংশ্লিষ্টরা জানান, যাদের অনিয়মের সঙ্গে জড়িত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, তাদের কোনোভাবে সম্পৃক্ততা অস্বীকারের সুযোগও থাকবে না। সেই সঙ্গে যারা কোনোভাবে অনিয়মে জড়ায়নি, নিরপরাধ তারা যেন কোনোভাবে শাস্তি না পায় সে বিষয়টি দেখা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর