শনিবার, ৫ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
পাকিস্তানজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদ বিক্ষোভ

ইমরান খানকে হত্যাচেষ্টার নেপথ্যে তিনজনের নাম

প্রতিদিন ডেস্ক

ইমরান খানকে হত্যাচেষ্টার নেপথ্যে তিনজনের নাম

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও ক্রিকেট তারকা ইমরান খানের ওপর গুলি চালানোর প্রতিবাদে গতকাল পাকিস্তানজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। হামলার উদ্দেশ্য নিয়ে এরই মধ্যে নানা গুঞ্জন উঠেছে। বলা হচ্ছে, দেশটিতে আবারও সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলের ছক কষা হয়েছে। এদিকে হামলার সময় আটক ব্যক্তির নাম, পরিচয় এবং সে কাদের হয়ে এ হত্যাকান্ড ঘটাতে চেয়েছে, কে বা কারা এ জন্য অস্ত্র সরবরাহ করেছে- ইত্যাদি প্রশ্নেও গভীর রহস্য তৈরি হয়েছে। ওই ব্যক্তিকে নিয়ে প্রশাসনও রীতিমতো রাখঢাক করে চলেছে। যদিও ইমরান খান এ হত্যাচেষ্টার নেপথ্যে থাকা তিনজনের নাম বলেছেন। তারা হলেন পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ এবং সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল ফয়সাল। সূত্র : আল জাজিরা, ডন, জি নিউজ, এনডিটিভি, বিবিসি, রয়টার্সসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, ইমরান খানের ওপর গুলি চালানোর প্রতিবাদে গতকাল জুমার নামাজের পর গোটা পাকিস্তানে ইমরানের দল পিটিআইয়ের ডাকে ব্যাপক বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়। এর আগে থেকেই কোয়েটায় বিমানবন্দরগামী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন পিটিআইয়ের নেতা-কর্মীরা। এ সময় রাস্তায় অবরোধ করে রাখায় কোয়েটায় ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়। করাচি শহরের ফয়সাল, উত্তর নাজিমাবাদ, লাঁধি, কায়েদাবাদ, উত্তর করাচি, হাব রিভার মহাসড়ক ও মৌরিপুরেও আগের দিন সন্ধ্যা থেকে গতকাল দিনভর বিক্ষোভ চলেছে। এর আগে অবশ্য এক ভিডিওবার্তায় দেশবাসীর উদ্দেশে তেহরিক-ই ইনসাফের মহাসচিব আসাদ ওমর বলেন, ‘ইমরান খান আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন- জাতির উদ্দেশে তিনি যে বার্তা দিতে চান, আমরা যেন তা আপনাদের কাছে পৌঁছে দিই। আমাদের চেয়ারম্যান বলেছেন, হামলা যে হতে পারে এমন তথ্য তিনি আগেই পেয়েছিলেন এবং তার বিশ্বাস তিন ব্যক্তি এই হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এই তিন ব্যক্তি হলেন শাহবাজ শরিফ, রানা সানাউল্লাহ ও মেজর জেনারেল ফয়সাল।’ আসাদ ওমর জানান, ‘ইমরান খান আরও বলেছেন, পিটিআই অবিলম্বে এই তিনজনের পদত্যাগ চায়। যদি তা না হয়, সেক্ষেত্রে দেশজুড়ে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’

সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ : ইমরান খানের ওপর প্রাণঘাতী হামলায় ক্ষুব্ধ জনসাধারণ গতকাল পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই’র বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন। বিক্ষোভকারীরা আইএসআই প্রধান মেজর জেনারেল ফয়সালকে এই হামলার নেপথ্য নায়ক বলে অভিহিত করেন।

ফুল দেওয়ার নাম করে গুলি : প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার ইমরানকে হত্যা করার জন্য হামলাকারী ফুল দেওয়ার নাম করে একেবারে তার সামনে চলে গিয়েছিলেন। তারপরই গুলি চালাতে থাকেন। গুলিতে আহত হন সাতজন। পরে তাদের একজন মারা যান। যে ব্যক্তি গুলি চালিয়েছেন তার নাম মোহাম্মদ নাভিদ বলে জানা গেছে। তার লাল-সাদা-কালো স্ট্রাইপ দেওয়া টি-শার্ট পরা ছবি এরই মধ্যে ভাইরাল হয়েছে। বলা হচ্ছে, তার বাবার নাম মোহাম্মদ বশির। তারা ওয়াজিরাবাদের সোধরা জেলার বাসিন্দা। তবে গুলি চালানোর জন্য কে অস্ত্র ও গুলি দিয়েছে, হত্যাচেষ্টার মূল লক্ষ্য কী- ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর মিলছে না। পুলিশ ওই ব্যক্তিকে আটক রাখলেও এসব প্রশ্নের ব্যাপারে রাখঢাক করে চলেছে।

নেপথ্যে গভীর ষড়যন্ত্র : ঘটনার পর্যবেক্ষণে নানা তথ্য উঠে আসছে। রাজনৈতিকভাবে উত্তাল পাকিস্তানে আবারও সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের ছক তৈরি করে অগ্রসর হচ্ছে বলে কথা উঠেছে। হামলাকারী ইমরানকে হত্যা করতে সমর্থ হলে এ ছক বাস্তবায়ন সহজ হতো। পর্যবেক্ষকরা ইমরানকে হত্যার চেষ্টার নেপথ্যে বেনজির ভুট্টো হত্যাকান্ডের ছায়াও দেখতে পাচ্ছেন। প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, ইমরান খানের ওপর হামলার ঘটনায় একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য বের হতে শুরু করেছে।

 হত্যা করার জন্যই যে তার ওপর গুলি চালানো হয়েছিল- তা এখন স্পষ্ট হয়ে গেছে। আততায়ী নিজেও দাবি করেছেন, তিনি খুন করতে চেয়েছিলেন ইমরান খানকে। যদিও আগে থেকেই ইমরান খান এবং তার দলের নেতারা বলে আসছিলেন, ইমরান খানকে হত্যার ছক কষা হয়েছে। এর নেপথ্য রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। পরে তার সঙ্গে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সালাউল্লাহর নাম যুক্ত হয়। সব শেষে যুক্ত হয় মেজর জেনারেল ফয়জন নাসিরের নাম। এই তিন চক্র মিলেই ইমরান খানকে হত্যার পরিকল্পনা করছে বলে উল্লেখ করেছিলেন ইমরানের বিশেষ উপদেষ্টা। সব শেষে আবারও এই তিনজনকেই অভিযুক্ত করা হলো।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর