বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

বিএনপির সমাবেশ ঘিরে সিলেটেও ধর্মঘট

তাঁবু খাটিয়ে থাকার প্রস্তুতি নেতা-কর্মীদের

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

বিএনপির সমাবেশ ঘিরে সিলেটেও ধর্মঘট

বিএনপির সমাবেশ সামনে রেখে সিলেটে ব্যানার ফেস্টুন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

আগামী ১৯ নভেম্বর শনিবার বিএনপির সিলেট বিভাগীয় গণসমাবেশের দিন ডাক দেওয়া হয়েছে পরিবহন ধর্মঘটের। এর মাধ্যমে সব জল্পনার অবসান ঘটল। দুই দফা দাবিতে সিলেট জেলা পরিবহন মালিক সমিতি শনিবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধর্মঘট আহ্বান করেছে। ধর্মঘটের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও একই সংগঠনের সিলেট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জহিরুল কবীর পলাশ।  তবে ধর্মঘটকে সামনে রেখেই গণসমাবেশের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা। তারা বলেন, নেতা-কর্মীরা আগের দিন শহরে এসে থাকার জন্য কমিউনিটি সেন্টার বুকিং দিয়ে রাখা হয়েছে। ঢাকা থেকে আসা নেতৃবৃন্দের জন্য বুকিং দিয়ে রাখা হয়েছে হোটেল। ইতোমধ্যে দেশের যেসব বিভাগে বিএনপির গণসমাবেশ হয়েছে সেসব স্থানে ডাকা হয় পরিবহন ধর্মঘট। কিন্তু সিলেটে পরিবহন ধর্মঘট হবে কি না এ নিয়ে ছিল নানা আলোচনা। গণসমাবেশের আগের দুই দিন সিলেটে ‘আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ’ ইজতেমার আয়োজন করায় পরিবহন ধর্মঘট নিয়ে ছিল সংশয়। ধর্মঘট ডাকা হলে ইজতেমায় আসা লোকজন পড়বেন বিপাকে- এমনটা ছিল আলোচনায়। এর মধ্যে গতকাল বুধবার রাতে পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বিএনপির গণসমাবেশের দিন শনিবার পূর্ণদিবস ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। যদিও পরিবহন মালিকরা বলছেন, তাদের এই ধর্মঘট পূর্বনির্ধারিত। বিএনপির সমাবেশের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।

সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল কবীর পলাশ জানান, দুই দফা দাবিতে এ ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে নতুন করে সিএনজি অটোরিকশার রেজিস্ট্রেশন না দেওয়া এবং অটোরিকশায় তিনজনের বেশি যাত্রী পরিবহন না করা ও চালকের আসনের পাশে গ্রিল লাগানো। বিএনপির গণসমাবেশের সঙ্গে ধর্মঘটের কোনো সম্পর্ক নেই দাবি করে পলাশ বলেন, দাবিগুলো নিয়ে গত ৫ নভেম্বর সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৭ নভেম্বর বিভাগীয় কমিশনার বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়। ওইদিন স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয় দাবি বাস্তবায়ন না হলে ১২ দিন পর অর্থাৎ ১৯ নভেম্বর ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ধর্মঘট পালন করা হবে। তাই পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ১৯ নভেম্বর পূর্ণ দিবস ধর্মঘট পালন করবেন পরিবহন মালিকরা। পলাশ বলেন, বিএনপির সমাবেশের তারিখ ছিল ২০ নভেম্বর। পরে তারা তারিখ পরিবর্তন করেছে ১৯ নভেম্বর। কিন্তু পরিবহন মালিক সমিতি এর আগেই তাদের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। তাই বিএনপির সমাবেশের সঙ্গে এ ধর্মঘটের কোনো সম্পর্ক নেই। পরিবহন ধর্মঘট নিয়ে খুব বেশি শঙ্কিত নন বিএনপি নেতারা। ধর্মঘট ডাকা হলে করণীয় ঠিক করে রেখেছেন তারা। নেতা-কর্মীদের আগের দিন সিলেট শহরে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছে। শহরে থাকা ও খাওয়ারও ব্যবস্থা করেছেন তারা। সিলেট নগরীর প্রায় ২০টি কমিউনিটি সেন্টার বুকিং দিয়ে রাখা হয়েছে। সমাবেশের আগের দিন কমিউনিটি সেন্টারে এসে যেসব নেতা-কর্মী উঠবেন দলের পক্ষ থেকে সেখানে তাদের খাওয়ারও ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছে। সিলেটের প্রায় সবকটি হোটেলও বুকিং দিয়ে রেখেছেন বিএনপি নেতারা। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা নেতারা হোটেলে থাকবেন। ফলে আজ বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার যেসব পর্যটক সিলেট বেড়াতে আসতে চাইছেন, তারা হোটেল সংকটে পড়তে পারেন। এ প্রসঙ্গে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ূম চৌধুরী জানান, গণসমাবেশ ঘিরে সিলেট বিভাগজুড়ে দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে। পরিবহন ধর্মঘট এ উচ্ছ্বাসে ভাটা ফেলবে না। দেশের অন্যান্য বিভাগের মতো সিলেটের গণসমাবেশেও নেতা-কর্মীরা বিকল্প পন্থায় অংশ নেবেন। আগের দিনই বিভিন্ন স্থান থেকে নেতা-কর্মী সিলেট আসবেন। তারা রাতে সমাবেশস্থল আলিয়া মাদরাসা মাঠে থাকবেন। এজন্য বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার পক্ষ থেকে তাঁবু টানানো হয়েছে। সমাবেশের দিন ভোরে এসব তাঁবু সরিয়ে ফেলা হবে। কাইয়ূম চৌধুরী আরও জানান, সমাবেশের আগে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে জেলা-মহানগরের নেতারা একসঙ্গে মাঠে রাত্রিযাপন করবেন। তাদের খাওয়ার ব্যবস্থাও সমাবেশস্থলে করা হবে। এ ছাড়া ঢাকা থেকে আসা বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের জন্য হোটেল বুকিং দিয়ে রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর