সোমবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

জামিন সেই ঋণগ্রস্ত কৃষকদের, দায়িত্ব নিল বসুন্ধরা

পাবনা প্রতিনিধি

জামিন সেই ঋণগ্রস্ত কৃষকদের, দায়িত্ব নিল বসুন্ধরা

বসুন্ধরা গ্রুপের আইনি সহায়তায় জামিন পাওয়ার পর স্বস্তি প্রকাশ করেন কৃষকরা। গতকাল পাবনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। -বাংলাদেশ প্রতিদিন

পাবনায় ঋণ খেলাপের মামলায় গ্রেফতার ১২ জনসহ পরোয়ানা থাকা ৩৭ কৃষকেরই ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব নিল দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ। এর পরিপ্রেক্ষিতে কারাগারে যাওয়া ১২ জনসহ ৩৭ কৃষকই জামিন পেয়েছেন। জামিনের পর গতকাল বিকালে কারাগার থেকে মুক্তি পান গ্রেফতার হওয়া ১২ কৃষক। এর আগে গতকাল বেলা ১১টার দিকে পাবনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোহাম্মদ শামসুজ্জামান ৩৭ কৃষকেরই জামিন মঞ্জুর করেন। এক্ষেত্রে কৃষকদের আইনি সহায়তাও দিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ।  কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া ১২ কৃষক হলেন ঈশ্বরদী উপজেলার ছলিমপুর ইউনিয়নের ভাড়ইমারি গ্রামের আলম প্রামাণিক (৫০), মাহাতাব মন্ডল (৪৫), কিতাব আলী (৫০), হান্নান মিয়া (৪৩), মোহাম্মদ মজনু (৪০), মোহাম্মদ আতিয়ার রহমান (৫০), আবদুল গনি মন্ডল (৫০), শামীম হোসেন (৪৫), সামাদ প্রামাণিক (৪৩), নূর বক্স (৪৫), মোহাম্মদ আকরাম (৪৬) ও মোহাম্মদ রজব আলী (৪০)। জামিনে মুক্ত হওয়ার পর কৃষক আবদুস সামাদ প্রামাণিক (৬০) বলেন, ‘ম্যালা রাইত, সবাই শুয়ে ছিলাম। এ রহম সময় পুলিশ আইসে ডাইকে তোলে। কিছু বোঝার আগেই পুলিশ ধইরে থানায় নিয়ে যায়। পরে জেলে পাঠায়।’ আবেগাপ্লুত আবদুস সামাদ বলেন, ‘আইজ ছাড়া পাওয়ার পর শুইনলাম বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের সাহায্যে ছাড়া পালাম। বসুন্ধরা গ্রুপের জন্য আল্লাহর কাছে হাত তুইলে দোয়া করিচ্ছি।’  জামিনে মুক্ত হওয়া আরেক কৃষক মোহাম্মদ মজনু বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপ যে কাজ করিছে নিজের বাপও তা করে না। তাদের জইন্যি মন থেকে দোয়া করিচ্ছি।’ ওই কৃষকরা জামিন পাওয়ার পর তাদের স্বজনরা প্রধানমন্ত্রীসহ গণমাধ্যমকেও ধন্যবাদ জানান। সার্বিকভাবে সহায়তা দেওয়ার জন্য বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান বসুন্ধরা গ্রুপকে।  বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংকের দায়ের করা ঋণখেলাপের মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয় ৩৭ কৃষকের বিরুদ্ধে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার অভিযান চালিয়ে ১২ কৃষককে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়। এর পর থেকে বাকি কৃষকরা পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে ৩৭ জন প্রান্তিক কৃষক গ্রুপভিত্তিতে বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক থেকে জনপ্রতি ২৫ হাজার টাকা থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ নেন। ঋণ খেলাপের দায়ে ২০২১ সালে ব্যাংকের পক্ষে তখনকার ব্যবস্থাপক সৈয়দ মোজাম্মেল হক মাহমুদ বাদী হয়ে ৩৭ জনের নামে মামলা করেন। তবে ওই কৃষকদের অনেকে এবং তাদের স্বজনরা দাবি করেন, ঋণ নেওয়ার পর এক বছরের মাথায় অনেকেই তাদের ঋণের কিস্তি পরিশোধ করেছেন। এর পাস বই ও জমা স্লিপও রয়েছে। অথচ সেই কিস্তির টাকা ব্যাংকের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। এ কারণে তারা ব্যাংকের নথিতে খেলাপি হয়েছেন। আদালত চত্বরে বাংলাদেশ কৃষক উন্নয়ন সোসাইটির কেন্দ্রীয় সভাপতি, কৃষিতে বঙ্গবন্ধু জাতীয় পদকপ্রাপ্ত কৃষক সিদ্দিকুর রহমান ওরফে কুল ময়েজ বলেন, যে কৃষক সকালে ঘুম থেকে উঠে সারা দেশের মানুষের খাদ্যপণ্য উৎপাদনে নিজেকে সম্পৃক্ত করে, সেই কৃষককে হয়রানি মোটেও কাম্য নয়। অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা এই হয়রানি মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। কালের কণ্ঠ শুভসংঘের পাবনা জেলা শাখার উপদেষ্টা ইদ্রিস আলী বিশ্বাস বলেন, কৃষক হয়রানির খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছে। ৩৭ কৃষকেরই জামিনের জন্য অর্থনৈতিক সব সহায়তা দিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। জামিনে মুক্ত হওয়ার পর কৃষকদের ফুলের মালা দিয়ে বরণ ও মিষ্টিমুখ করান শুভসংঘ পাবনা জেলা শাখার বন্ধুরা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শুভসংঘ পাবনা জেলা শাখার সভাপতি মাহবুবুল আলম ফারুক, সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া, কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সদস্য আলী আকবর রাজু, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব আহমেদ রিটন, অ্যাডভোকেট মীর রাকিব আলম রিজন প্রমুখ। মামলার বাদী বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংকের তখনকার ব্যবস্থাপক সৈয়দ মোজাম্মেল হক মাহমুদ বলেন, ‘কৃষকরা ঋণের টাকা পরিশোধ না করায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মামলা করা হয়। খেলাপি ঋণ আদায়ে এটা চলমান প্রক্রিয়া। আমরা আমাদের অফিশিয়ালি ব্যবস্থা নিয়েছি। তারা তাদের আইনগত সহায়তা পেয়েছেন।’ পাবনার পুলিশ সুপার আকবর আলী মুনসী বলেন, ‘জামিন হওয়ার পর কৃষকদের নিয়ে আমি বসেছি। তাদের থেকে সব কিছু শুনেছি। তারা যাতে হয়রানির শিকার না হন সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে।’ পাবনার জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসায় ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে নির্দেশনা পেয়েছি। কৃষকদের বিরুদ্ধে কেন মামলা হয়েছে খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্তের কাজ শুরু করেছি। কোনো কৃষক যাতে হয়রানির শিকার না হন সেই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।’ আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান সুমন বলেন, গ্রেফতার হওয়া ১২ কৃষককে জামিনে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। বাকি ২৫ জনের জামিন দিয়েছেন। বসুন্ধরা গ্রুপের আইনি সহায়তায় ১২ কৃষকের পক্ষে আদালতে ছিলেন অ্যাডভোকেট কাজী সাজ্জাদ ইকবাল লিটন ও অ্যাডভোকেট মইনুল ইসলাম মোহন। পরে স্বেচ্ছায় হাজির হয়ে জামিনপ্রাপ্ত ২৫ কৃষকের পক্ষে প্রধান আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট তৌফিক ইমান খান। অন্যদের মধ্যে ছিলেন অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব আহমেদ রিটন, অ্যাডভোকেট মীর রাকিব আলম রিজন, অ্যাডভোকেট ফুলমতি, অ্যাডভোকেট করিম ও অ্যাডভোকেট পান্না।

সর্বশেষ খবর