শুক্রবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

আশ্চর্যজনক ওভার ইনভয়েসিং, ১০০ এলসি বন্ধ করেছি : গভর্নর

নিজস্ব প্রতিবেদক

আশ্চর্যজনক ওভার ইনভয়েসিং, ১০০ এলসি বন্ধ করেছি : গভর্নর

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার বলেছেন, আশ্চর্যজনক ওভার ইনভয়েসিং করে পণ্য আমদানি করা হয়েছে। এ রকম ১০০ এলসি বন্ধ করেছি। বৈদেশিক বাণিজ্যে পণ্যের দাম কম বা বেশি দেখিয়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে ‘ট্রেড বেজড মানি লন্ডারিং’ বন্ধ করা সম্ভব।

গতকাল গুলশানের হোটেল লেকশোরে সরকারের গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) উদ্যোগে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী বার্ষিক উন্নয়ন সম্মেলনে গেস্ট অব অনারের বক্তব্যে গভর্নর এসব কথা বলেন। বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেনের সভাপতিত্বে শুরু হওয়া সম্মেলনের প্রথম দিন প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার বলেন, আমরা কোনো এলসি বন্ধ করিনি। আমরা ‘প্রাইস কন্ট্রোল’ (মূল্য নিয়ন্ত্রণ) করছি। যাতে সঠিক দরে পণ্য আমদানি ও রপ্তানি হয়। বিলাসী পণ্য আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো ও নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে মাত্র। কারণ, আপাতত এসব বিলাসী পণ্য কম এলেও কোনো সমস্যা হবে না। গভর্নর বলেন, অতিরিক্ত ও কম মূল্য দেখিয়ে করতে চাওয়া এলসি বন্ধ করে দেওয়া হলেও পরে তা সংশোধন করে প্রকৃত দরে আমদানি করতে চাইলে ব্যবসায়ীরা এলসি করতে পারছেন। ওভার ইনভয়েসিং হচ্ছে কি না, তা দেখতে গত বছর এবং এ বছরের অনেক এলসির তথ্য নিয়ে গত জুলাই থেকে যাচাই-বাছাই শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তখনই ২০-২০০ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়িয়ে পণ্য আমদানির বিষয়টি তারা জানতে পারেন। গভর্নর বলেন, পণ্য বাণিজ্যে আন্ডার ইনভয়েসিং হচ্ছে কি না তা যাচাইয়েরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ১ লাখ ডলার মূল্যের গাড়ি আমদানি করা হয়েছে মাত্র ২০ হাজার ডলারে। এতে বোঝা যায়, বাকি অর্থ তারা হুন্ডির মাধ্যমে দিয়েছে। দেশে আপেল ফল বিক্রির উদাহরণ দিয়ে গভর্নর বলেন, বাজারে যে দরে আপেল বিক্রি হচ্ছে, আমদানি করা হচ্ছে তার চেয়ে কম দামে। দাম কম দেখানোয় সরকারের রাজস্ব আয়ও কমছে। এভাবে আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে পণ্য আমদানি হচ্ছে। যে দর কম দেখানো হচ্ছে, তা হুন্ডির মাধ্যমে পরিশোধ করা হচ্ছে। হুন্ডিতে ব্যবহার করা হচ্ছে প্রবাসীদের না পাঠানো রেমিট্যান্স। গভর্নর বলেন, কৃষি খাতে অনেক দেশই কম সুদে ঋণ দেয়। এটি সরকারের দিক থেকে করা হয়। ব্যাংকারদের পক্ষ থেকে সিএমএসএমই খাতে সুদহার বাড়িয়ে ৯ শতাংশের ‘ক্যাপ’ তুলে দেওয়ার দাবি করা হয়। তখন খরচ বৃদ্ধির বিষয়টিকে তারা যুক্তি হিসেবে দেখায়।

গভর্নর বলেন, এ খাতের খরচ কমিয়ে আনার কৌশল হিসেবে সিএমএসএমই খাতে ব্যাংকগুলোকে ২ শতাংশ সুদে পুনঃঅর্থায়ন তহবিল অর্থ দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন তারা কম সুদের তহবিল পাওয়ায় এ খাতে সুদহার তুলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। ব্যবসায়ীদের জন্য মেয়াদি ও চলতি মূলধন ঋণের সুদহারে ৯ শতাংশের সীমা তুলে দেওয়ার ‘সঠিক সময়’ এখন নয়। গভর্নর বলছেন, মহামারি পরবর্তী সময়ে যে দুটি সমস্যা অর্থনীতিতে দেখা যাচ্ছে, তার একটি হচ্ছে রিজার্ভ, অন্যটি মূল্যস্ফীতি। এই মূল্যস্ফীতির বৃদ্ধি মুদ্রা সরবরাহ থেকে আসেনি। এটি আমদানি দর বেড়ে যাওয়ার ঘটনা থেকে হয়েছে। আমদানিতে ডলারের খরচ ও বিনিময় মূল্য বৃদ্ধিতে ঋণ প্রবাহ বেড়েছে। উচ্চ বিনিময় হারকে সমন্বয় করলে ঋণ প্রবৃদ্ধি অনেক কম দেখাবে। রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি কমার জন্য হুন্ডিকে দায়ী করে গভর্নর বলেন, রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার বড় কারণ হচ্ছে হুন্ডি। এ জন্য রেমিট্যান্স আনা সহজ এবং আমদানিতে ওভার ও আন্ডার ইনভয়েসিং বন্ধ করা হচ্ছে। রেমিট্যান্স আনা সহজ করতে মোবাইলে আনার সুযোগ হচ্ছে। রেমিট্যান্স পাঠানোর খরচ বন্ধ করা হয়েছে। আগামী ৩-৬ মাস অপেক্ষা করতে হবে। প্রবাসীরা নিজেই রেমিট্যান্স পাঠাতে পারবেন। তখন রেমিট্যান্সে একটি বড় উল্লম্ফন দেখা যাবে।

সর্বশেষ খবর