শুক্রবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

পিছু হটতে শুরু করে পাকিস্তান বাহিনী

নিজস্ব প্রতিবেদক

পিছু হটতে শুরু করে পাকিস্তান বাহিনী

আজ ২ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিন মুক্তিসংগ্রামে উত্তাল ছিল বাংলার মাটি। মুক্তিবাহিনীর সাঁড়াশি আক্রমণে বিভিন্ন এলাকায় পিছু হটতে শুরু করে দখলদার পাকিস্তান বাহিনী। গেরিলা আক্রমণে বাড়ে সম্মুখযুদ্ধের গতি। অপ্রতিরোধ্য বাঙালির বিজয়রথে ভেস্তে যেতে থাকে হানাদার বাহিনীর সব পরিকল্পনা। পরাজয়ের আভাস পেয়ে কোণঠাসা পাকিস্তান দ্বিপক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ী ‘আক্রান্ত দেশ’ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সামরিক সহায়তা চেয়ে চিঠি পাঠায়। ততক্ষণে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমের খবরে বাংলাদেশের বিজয়রথের খবর পৌঁছে গেছে বিশ্ববাসীর কানে। এই দিনে আখাউড়া, পঞ্চগড়, ভুরুঙ্গামারী, কমলাপুর, বনতারা, শমশের নগর ও পার্বত্য চট্টগ্রামে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে প্রচ- সংঘর্ষে হানাদার বাহিনী পিছু হটে যায়। নরসিংদীর শিবপুর হানাদার মুক্ত হয় এই দিনে। যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী কোনো রকমে জান বাঁচিয়ে শিবপুরের পুটিয়া থেকে পালিয়ে যায়। প্রচ- গোলাগুলির পর মুক্তিযোদ্ধারা দখলে নেয় পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্প। এদিনে মুক্তিবাহিনী ঘোড়াশালে হানাদারদের অবস্থানের ওপর চারদিক থেকে আক্রমণ করে ২৭ পাকিস্তানি সেনাকে হত্যা করতে সক্ষম হয়। বেশ কিছু গোলাবারুদও উদ্ধার করে মুক্তিবাহিনী। চট্টগ্রামে মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা উত্তরে ফটিকছড়ি ও রাউজান থানা এবং দক্ষিণে আনোয়ারার অধিকাংশ স্থান দখলে নিয়ে আসে। পাকিস্তান কমান্ডার মোছলেহ উদ্দিন ভালুকা থেকে একদল রাজাকারকে সঙ্গে নিয়ে কাঁঠালি গ্রামে লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগ করতে এলে মুক্তিবাহিনীর অতর্কিত আক্রমণে তিন পাকিস্তানি হানাদার ও সাতজন রাজাকার নিহত হয়। আহত হয় সাতজন পাকিস্তানি সৈন্য। পরে হানাদাররা লাশগুলো নিয়ে পালিয়ে যায়।

ডিসেম্বর জুড়ে স্বাধীন বাংলা বেতার থেকে প্রতিদিন মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয়ের খবর প্রচারিত হতে থাকে। পরিস্থিতির বিবরণ দিয়ে ২ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে বিবিসিতে সবিস্তারে রিপোর্ট পাঠান সংবাদদাতা নিজামউদ্দিন আহমদ। সময়ের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় দৃশ্যমান হতে থাকে। পরাজয় সুনিশ্চিত জেনে রাজাকার-আলবদরদের সহায়তায় বর্বর হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। কড়া জবাব দেয় বীর মুক্তিযোদ্ধারাও। একের পর এক গেরিলা আক্রমণে অবরুদ্ধ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অসংখ্য মুক্তাঞ্চলের সৃষ্টি হয়। পাকিস্তানি বাহিনী পঞ্চগড়ে রিং আকারে প্রথম ও দ্বিতীয় ডিফেন্স লাইন তৈরি করেছিল। মিত্র বাহিনীর সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধারা গভীর রাতে আক্রমণ করলে তারা পঞ্চগড় ছেড়ে চলে যায়। মুক্তিবাহিনী বিরিসিরির বিজয়পুরে পাক অবস্থানের ওপর অ্যামবুশ করে পাঁচজন পাকিস্তানি হানাদারকে হত্যা করে। এখান থেকে মুক্তিবাহিনী রাইফেলসহ ২১ জন রাজাকারকে ধরতে সক্ষম হয়। একই দিন মশাখালী ও কাওরাইদ থেকে পাকিস্তানি বাহিনী রাজৈ গ্রামে লুট করতে এলে মুক্তিবাহিনী পাল্টা আক্রমণ করে। এই যুদ্ধে একজন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। মুক্তিবাহিনীর ছোড়া গ্রেনেড বিস্ফোরণে ঢাকার রামপুরা বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র, চট্টগ্রামের পাঁচটি বিদ্যুৎ সাব স্টেশন ও দুটি পেট্রোল পাম্প বিধ্বস্ত হয়। দিনাজপুর জেলার মুক্তিবাহিনী পচাগড়ের ১০ মাইল দক্ষিণে বোদা থানা হেডকোয়ার্টার শত্রুমুক্ত করে ঠাকুরগাঁওয়ের দিকে অগ্রসর হয়। রংপুর জেলার নাগেশ্বরী থানা শত্রুমুক্ত হয় এই দিনে। কুষ্টিয়ায় মুক্তিবাহিনী জীবননগরের উত্তর-পূর্বে আন্দুল্বেড়িয়া গ্রাম শত্রুমুক্ত করে। অন্যদিকে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী কংগ্রেসের কর্মিসভায় বলেন, সময় বদলে গেছে, তিন-চার হাজার মাইল দূর থেকে বর্ণের প্রাধান্য দিয়ে তাদের (পাকিস্তান) ইচ্ছামতো হুকুমনামা জানাবেন, তা মেনে নেওয়া যায় না। ভারত তার নেটিভ রাজ্য নয়। আজ আমরা আমাদের জাতীয় স্বার্থের জন্য দেশের সর্বোচ্চ প্রয়োজন অনুযায়ী কাজ করব, ওই সব বৃহৎ দেশের ইচ্ছানুযায়ী নয়। তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।

সর্বশেষ খবর