শনিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
বিএনপির সমাবেশ আজ

রাজশাহীতে দুর্ভোগ পরিবহন ধর্মঘটে

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহীতে দুর্ভোগ পরিবহন ধর্মঘটে

বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশে যোগ দিতে যাওয়া বগুড়া নেতা-কর্মীদের মোটরসাইকেল বহর বাধার মুখে পড়ে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজশাহীতে চলছে পরিবহন ধর্মঘট। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। গতকালও কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। রাজশাহীতেও ঢোকেনি কোনো বাস। ঢাকাগামী বাসগুলোও বন্ধ। বিকল্প হিসেবে অটোরিকশা বা ছোট বাহনে গন্তব্যে পৌঁছেছেন যাত্রীরা। বাড়তি ভাড়া গুনতে হয়েছে তাদের। ট্রেনেও চাপ বেড়েছে। গতকাল দুপুর থেকে হঠাৎ করে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও থ্রি-হুইলারেরও ধর্মঘট শুরু হয়। এদিকে পরিবহন ধর্মঘটের কারণে বিএনপি নেতা-কর্মীরা যে যেভাবে পেরেছেন সমাবেশস্থলে এসেছেন। পথে পথে তারা পুলিশি তল্লাশিরও মুখোমুখি হয়েছেন। বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেছেন- তল্লাশির নামে পুলিশ তাদের হয়রানি করেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, জয়পুরহাটসহ বিভাগের অন্য জেলাগুলোতেও পরিবহন ধর্মঘটে দুর্ভোগ ও পুলিশি তল্লাশির নামে হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- রাজশাহী : বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে ১০ দফা দাবি পূরণ না হওয়ায় রাজশাহীতে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট চলছে। গতকাল সকাল থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার উদ্দেশে মহানগরের শিরোইল, ভদ্রা ও রেলগেট বাস টার্মিনালে আসেন যাত্রীরা। বাস না পেয়ে কেউ বিকল্প যানবাহনে বাড়ি ফিরে গেছেন। অনেকে রাজশাহী রেলস্টেশনে ভিড় করেছেন। নওগাঁ থেকে আসা শিশির আলী বলেন, রাজশাহী আসতে সময় লেগেছে পাঁচ ঘণ্টা। খরচ হয়েছে ৫০০ টাকা। স্বাভাবিক দিন লাগে ২০০ টাকা। ঢাকা যেতে কত লাগবে বুঝতেছি না। তিনি বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। চাকরিতে যোগ দিতেই হবে।’ রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মতিউল হক টিটো বলেন, আমরা নির্ধারিত সময় বেঁধে দিয়েছিলাম। আশ্বাস না পাওয়ায় স্বেচ্ছায় কর্মবিরতিতে গেছি।’

এদিকে সব সড়কে অবাধ চলাচল ও হয়রানিমুক্ত রেজিস্ট্রেশনের দাবিতে গতকাল দুপুর থেকে রাজশাহীতে অনির্দিষ্টকালের জন্য সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও থ্রি-হুইলারের ধর্মঘট শুরু হয়েছে। গতকাল দুপুর ১২টা থেকে হঠাৎ করে এ ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। মালিক সমিতির সভাপতি আহসান হাবিব গণমাধ্যমকর্মীদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী ঈশা অভিযোগ করে বলেন, ‘শনিবার (আজ) সমাবেশে বিএনপি নেতা-কর্মীদের পথে পথে আসতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে একটার পর একটা যানবাহন ধর্মঘট ডাকা হচ্ছে।’ অপরদিকে পরিবহন ধর্মঘটের কারণে বিএনপি নেতা-কর্মীরা যে যেভাবে পেরেছেন এসেছেন সমাবেশস্থলে। তারা পুলিশি হয়রানিরও অভিযোগ করেছেন। বিভিন্ন প্রবেশদ্বার থেকে শুরু করে বৃহস্পতিবার রাতে রাজশাহী রেল স্টেশনেও তল্লাশি চালায় পুলিশ। বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, অনেককে রাজশাহী শহরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। বাড়ি ফেরত পাঠানো হচ্ছে। গত বুধবার থেকে এই অবস্থা চালাচ্ছে পুলিশ।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু জানান, পুলিশি বাধা ও হয়রানি উপেক্ষা করে কয়েক লাখ নেতা-কর্মী রাজশাহী শহরে ঢুকেছেন। অনেকে রাজশাহী ঐতিহাসিক মাদরাসা মাঠের পাশে ঈদগাহ মাঠে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁবু টানানোর ব্যবস্থা করা হলেও পুলিশ প্রথম দিকে তাতেও বাধা দেয়। ফলে অনেক নেতা-কর্মীকে রাতে খোলা আকাশের নিচে কাটাতে হচ্ছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, সরকার যেভাবে বাধা দিচ্ছে, তাতে বিএনপির উপকারই হচ্ছে। আগে থেকেই নেতা-কর্মীরা আসছেন। এক জেলার নেতা-কর্মীর সঙ্গে অন্য জেলার নেতা-কর্মীদের বোঝাপড়া গড়ে উঠছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ : ১০ দফা দাবিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে পরিবহন ধর্মঘট অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য এই পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাস টার্মিনাল বা ঢাকা বাসস্ট্যান্ড থেকে রাজশাহী, ঢাকাসহ দেশের সব রুটে কোনো বাস চলাচল করেনি। জরুরি প্রয়োজনে যাত্রীরা অটোরিকশা, মিশুকে করে বিভিন্ন গন্তব্যে গেছেন। আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মো. হামিদুর রহমান নান্নু মিয়া বলেন, দাবি আদায়ে সরকারের সঙ্গে বারবার আলোচনা হলেও ফলপ্রসূ সমাধান না হওয়ায় বাধ্য হয়ে বিভাগীয় পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকে সাড়া দিয়ে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম জাকারিয়া বলেছেন, কাল শনিবার (আজ) রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশে প্রচুর জনসমাগম ঠেকাতে সরকার কৌশল করে মালিক-শ্রমিকদের দিয়ে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। সোনামসজিদ স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইসমাইল হোসেন জানান, পরিবহন ধর্মঘট অব্যাহত থাকলেও সোনামসজিদ স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চালু রয়েছে।

বগুড়া : রাজশাহী বিভাগীয় মহাসমাবেশ সফল করতে যাওয়ার পথে পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হয়েছে বলে দাবি করছেন বগুড়ার বিএনপি নেতা-কর্মীরা।

বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি ও পৌর মেয়র রেজাউল করিম বাদশা জানান, কাল (আজ) বিএনপির রাজশাহী মহাসমাবেশ। সফল করতে আমরা মোটরসাইকেলযোগে সমাবেশের উদ্দেশে রওনা হয়েছি। কিন্তু পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে বিভিন্ন স্থানে ৪০০ থেকে ৫০০ মোটরসাইকেল আটকে রাখে। অনেক মোটরসাইকেল জব্দও করে। চেকপোস্টের নামে হয়রানি করে।

বগুড়া-৬ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ জানান- পথে পথে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ বাধা দিয়ে আমাদের হয়রানি করছে। অনেক মোটরসাইকেল জব্দ করেছে। বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আবদুর রশিদ জানান- আইনের বাইরে পুলিশ কিছু করছে না।

জয়পুরহাট : সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ সংশোধন, মহাসড়কে অবৈধ যান বন্ধ ও জ্বালানি তেল এবং যন্ত্রাংশের অস্বাভাবিক মূল্য  হ্রাসসহ ১০ দফা দাবিতে গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো জয়পুরহাটে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট চলছে। গতকাল জয়পুরহাট থেকে কোনো রুটে বাস ছেড়ে যায়নি। জয়পুরহাটেও ঢোকেনি কোনো বাস। ঢাকাগামী যাত্রীরা সকাল থেকে দুর্ভোগে পড়েন। আমিনুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ী জানান, ব্যবসার কাজে ঢাকা থেকে জয়পুরহাট এসেছিলেন। ধর্মঘটের কারণে ঢাকা যেতে পারছেন না। আবাসিক হোটেলে থাকতে হচ্ছে।  সজীব নামে আরেক যাত্রী বলেন, জয়পুরহাট শহরের বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখি বাস নেই। জরুরি কাজ বগুড়া যেতেই হবে। বাধ্য হয়ে ১২০ টাকার ভাড়া ৩০০ টাকা দিয়ে বগুড়া যেতে হবে। মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য হানিফ বলেন, প্রতিদিন কাজ করলে আমরা ৫০০-৬০০ টাকা মজুরি পাই। হঠাৎ করে সকাল থেকে বাস চলাচল বন্ধ। কয়দিন থাকবে জানি না। কাজ না থাকলে আমাদের মতো দিনমজুরদের পরিবার নিয়ে  ভোগান্তিতে পড়তে হয়। রাজশাহী বিভাগীয় সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক পরিষদ সাংগঠনিক কমিটির কার্যকরী সভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, মহাসড়কে নসিমন, করিমন, ভটভটির মতো অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধ করাসহ ১০ দফা দাবিতে আলটিমেটাম দিয়ে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। আজ রাজশাহীর মাদরাসা মাঠে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সর্বশেষ খবর