রবিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

আড়াই মাসেও গঠন হয়নি মানবাধিকার কমিশন

যাচাই-বাছাই কমিটির বৈঠক আজ

উবায়দুল্লাহ বাদল

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ২২ সেপ্টেম্বর। এরপর কমবেশি আড়াই মাস পার হলেও গঠিত হয়নি নতুন কমিশন। তবে এই সময়ের মধ্যে নতুন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে তিন দফা বৈঠক করেছে এ সংক্রান্ত ‘বাছাই কমিটি’। এর ধারাবাহিকতায় আজ (রবিবার) জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে আবার বৈঠকে বসছে বাছাই কমিটি। এ বৈঠকে কমিশন গঠনের লক্ষ্যে সম্ভাব্যদের  তালিকা চূড়ান্ত হতে পারে।

দ্রুত নতুন কমিশন গঠনের তাগিদ দিয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের উচিত ছিল মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নতুন কমিশন গঠন করা। যারা মানবাধিকার নিয়ে কাজ করেন, স্বাধীনচেতা ও মানুষের অধিকার রক্ষায় নিবেদিত, তাদের সমন্বয়ে নতুন কমিশন গঠন করা প্রয়োজন। যারা সরকারের নয়, রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলে কাজ করবেন। সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী মানবাধিকার কমিশনের নতুন চেয়ারম্যান ও সার্বক্ষণিক সদস্য পুনর্গঠনের জন্য একটি কমিটি করার বিধান রয়েছে। জাতীয় সংসদের স্পিকার এই কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং লেজিসলেটিভ বিভাগের সচিবসহ বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এই কমিটির সদস্য। এবারও নিয়ম অনুযায়ী স্পিকারের নেতৃত্বে সাত সদস্যের নতুন বাছাই কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- আইন কমিশনের চেয়ারম্যান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং জাতীয় সংসদের স্পিকারের মনোনীত দুজন সংসদ সদস্য। এ কোটায় কমিটির সরকারদলীয় সদস্য অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক এবং বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী। কমিটি গঠনের পর জাতীয় সংসদ ভবনে স্পিকারের ব্রিফিং কক্ষে কমিটির প্রথম বৈঠক করে গত ১৫ নভেম্বর। এরপর আরও দুটি বৈঠক করে বাছাই কমিটি। এসব বৈঠকে কমিটির সদস্যরা একমত পোষণ করে বলেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের একজন চেয়ারম্যান, একজন সার্বক্ষণিক সদস্য ও পাঁচজন অবৈতনিক সদস্য দ্রুত নিয়োগ দিতে হবে। এ সময় আইন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, মানবাধিকার কমিশনের বিভিন্ন পদে সমাজের বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধিদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেওয়া হলে কমিশনের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হবে। কমিটির কেউ কেউ আমলানির্ভর কমিশন না করে পেশাজীবীদের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত বলে মনে করেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দুই/তিন মাস আগে কমিশনের মেয়াদ শেষ হলেও এখনো নতুন কমিশন গঠন করা হয়নি। এতেই বোঝা যায়, সরকার মানবাধিকারকে কেমন গুরুত্ব দিয়ে থাকে। প্রায় প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠছে, অথচ আড়াই মাস ধরে দেশে মানবাধিকার কমিশনই নাই। সরকারের উচিত ছিল মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নতুন কমিশন গঠন করা। যারা মানবাধিকার নিয়ে কাজ করেন, স্বাধীনচেতা ও মানুষের অধিকার রক্ষায় নিবেদিত তাদের সমন্বয়ে নতুন কমিশন গঠন করা প্রয়োজন। যারা সরকারের নয়, রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলে কাজ করবেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে দেশের মানবাধিকার নিয়ে সরকার আন্তর্জাতিক চাপে রয়েছে। ইতোমধ্যে মানবাধিকার প্রশ্নে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র র?্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশে ৭৬ জনের একটি তালিকা বাংলাদেশ সরকারকে দিয়ে তারা গুম হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে। মার্কিন ক্রমবর্ধমান চাপের ফলে মানবাধিকার এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে গেছে। অন্যদিকে বিদায়ী জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার বাংলাদেশ সফর করেছেন এবং সেখানে তিনি গুমের তদন্তের জন্য একটি স্বতন্ত্র কমিশন গঠন করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সেই প্রস্তাবও এখন পর্যন্ত সরকার বাস্তবায়ন করেনি। শুধু জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে এখন বেশ সোচ্চার হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক চক্রান্ত চলছে। স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী অপশক্তি বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে নানা রকম অসত্য, মিথ্যা, ভিত্তিহীন বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এ রকম বাস্তবতায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান। এসব সমালোচনা এবং বিষয়গুলো দেখার ক্ষেত্রে এ রকম কমিশনই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

সর্বশেষ খবর