রবিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

শত্রুর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় বড় ফাটল

নিজস্ব প্রতিবেদক

শত্রুর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় বড় ফাটল

আজ ৪ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর যৌথ হামলায় পাকিস্তানি বাহিনীর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় বড় ফাটল ধরে। আগের রাতের হামলায়ই পাকিস্তানি বিমান বহরের অর্ধেক বিমান ধ্বংস হয়ে যায়। জামালপুরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্তিশালী ঘাঁটি কামালপুর দুর্গের পতনের মধ্য দিয়ে খুলে যায় ঢাকা বিজয়ের পথ। মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে মিত্রবাহিনী সীমান্ত অতিক্রম করে চারদিক দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসতে থাকে বিজয়ের খবর। সেই খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম হয়ে ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। ডিসেম্বরের শুরুতেই  পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পতনের ঘণ্টা বাজতে শুরু করে। বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত পেরিয়ে গ্রাম-গঞ্জে জেঁকে বসেছে শীত। তবে টগবগ করে ফুটছিল মুক্তিকামী বীর বাঙালির রক্ত। জল, স্থল ও আকাশপথে একযোগে শুরু হয় হামলা। শেষ ঘণ্টা বাজতে শুরু করে পাকিস্তানি সেনা, রাজাকার ও আলবদরদের। প্রতিদিন বাড়তে থাকে মুক্তাঞ্চলের সংখ্যা। ডিসেম্বরের এদিন দখলদার মুক্ত হয়-দিনাজপুরের ফুলবাড়ী, গাইবান্ধার ফুলছড়ি, চাঁদপুরের মতলব, চুয়াডাঙ্গার জীবননগর, দামুড়হুদা, জামালপুরের ধানুয়াকামালপুর, কুমিল্লার দেবিদ্বার, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর, সিলেটের কানাইঘাটসহ আরও অনেক এলাকা। ৪ ডিসেম্বর জামালপুর জেলায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্তিশালী ঘাঁটি কামালপুর দুর্গের পতন ঘটায় ১১ নম্বর সেক্টরের বীর মুক্তিযোদ্ধারা। ১০ দিনব্যাপী প্রচ- যুদ্ধের পর এদিন সন্ধ্যায় দুর্গে অবরুদ্ধ ৩১ বালুচ রেজিমেন্টের গ্যারিসন কমান্ডার ক্যাপ্টেন আহসান মালিক খানসহ ১৬২ পাকিস্তানি সৈন্য মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। মুক্ত হয় কামালপুর। আর কামালপুর মুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়েই সূচিত হয় শেরপুর, ময়মনসিংহ, জামালপুরসহ ঢাকা বিজয়ের পথ। তবে এ যুদ্ধে ক্যাপ্টেন সালাহ উদ্দিন মমতাজ, মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান তসলিমসহ শহীদ হন ১৯৭ জন মুক্তিযোদ্ধা। অন্যদিকে, একজন ক্যাপ্টেনসহ পাকিস্তানি বাহিনীর ২২০ জন সৈন্য এই যুদ্ধে নিহত হন।

এদিকে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর লক্ষ্য তখন ঢাকাকে মুক্ত করা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল মুক্ত করার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকার দিকে আসতে থাকেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। ভারতীয় বিমানবাহিনীর জঙ্গি বিমানগুলো বারবার ঢাকা, চট্টগ্রাম, চালনা প্রভৃতি এলাকার সামরিক ঘাঁটিগুলোর ওপর আক্রমণ চালায়। ঢাকার বিমান যুদ্ধ মারাত্মক আকার ধারণ করে। ভারত ও বাংলাদেশ বাহিনীর মিলিত প্রত্যাঘাত, ভারতীয় বিমানবাহিনীর আক্রমণ ও নৌবাহিনীর অবরোধের মাধ্যমে পূর্বাঞ্চলে যুদ্ধের চিত্র আমূল বদলে যায়। ভারতীয় বাহিনী ফাইটার দিয়ে ঢাকায় সর্বাত্মক আক্রমণ শুরু করে। সঙ্গে সক্রিয় ছিল মুক্তিবাহিনীর ৮ হাজার গেরিলা। গুল টেক্সটাইল মিলসে মুক্তিফৌজের গেরিলারা শত্রুদের বাঙ্কারে হামলা চালিয়ে ২৭ সৈন্যকে হত্যা করলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সেই এলাকা থেকে পিছু হটে।

এদিন বাংলাদেশের সব রণক্ষেত্রে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকায় হানাদার বাহিনী সর্বত্র পিছু হটছিল। পাকিস্তানি বিমানবাহিনী ক্রমশ পঙ্গু হয়ে পড়ছিল। সীমান্ত শহর দর্শনা সম্মিলিত বাহিনীর দখলে চলে আসে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, করাচি-শত্রু ঘাঁটিতে চলে বোমাবর্ষণ। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করতে থাকে। দেশের বিভিন্ন স্থানে পর্যুদস্ত হতে থাকে উর্দুভাষী হানাদাররা। সেই খবর ছড়িয়ে পড়ে আকাশে, বাতাসে-সর্বত্র। সেই বিজয়ের বার্তা যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধাদের করে তোলে আরও দুর্বার, অপ্রতিরোধ্য।

সর্বশেষ খবর