রবিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
মেসির জাদুকরি গোল

কোয়ার্টারে আর্জেন্টিনা

কোয়ার্টারে আর্জেন্টিনা

‘মেসি, মেসি, মেসি’ রব উঠেছে গ্যালারিতে। প্রায় ৪৫ হাজার দর্শক কুর্নিশ করছেন ফুটবলের রাজাধিরাজকে। তালিকায় আর্জেন্টাইনদের সঙ্গে যোগ হয়েছে হলুদ জার্সি গায়ের অস্ট্রেলিয়ান সমর্থকরাও। রাজার প্রাপ্য সম্মান দিতে কার্পণ্য করল না কেউই। লিওনেল মেসির জাদুতে মুগ্ধ একটা ম্যাচ দেখল কাতারের আহমদ বিন আলি স্টেডিয়ামের দর্শকরা। তার জাদুর বাকসো থেকে বের হলো শৈল্পিক এক গোল। বের হলো জাদুকরী নানা মুহূর্ত। সেই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করল আর্জেন্টিনা। লড়াইয়ের মঞ্চ প্রস্তুত। একাদশের ছবি তোলাও শেষ। কাউন্টডাউন শুরু হবে। রেফারি বাঁশি বাজিয়ে ইঙ্গিত দেবেন ম্যাচ শুরুর করার। এই ফাঁকে লিওনেল মেসি একে একে   আর্জেন্টিনার প্রথম একাদশে থাকা সবার সঙ্গে বুক মিলিয়ে নিলেন। যেন সাহস দিয়ে বলতে চাইলেন, অস্ট্রেলিয়া কঠিন প্রতিপক্ষ। তারা ফিজিক্যাল গেম খেলে। ডিফেন্সে বেশ ভালো। তবে ভয় পেয়ো না। নিজের সেরা খেলাটা খেলে দাও। প্রতিপক্ষকে নিয়ে ভাবতে হবে না। সতীর্থদের ভাবনাহীন করে দিয়ে নিজের কাজে মন দিলেন লিওনেল মেসি। আর্জেন্টিনার অধিনায়ক। তাদের স্বপ্নসারথি। লিওনেল মেসি ম্যাচের প্রথমার্ধের ৩০ মিনিট যেন জাদুর বাকসো লুকিয়ে রাখলেন। দু-একবার বল নিয়ে ছোটাছুটি করলেও সে যেন ওয়ার্মআপই ছিল। মাঝমাঠে তিনি ধীরগতিতে হাঁটাহাঁটিও করেছেন ফাঁকে ফাঁকে। মাঝেমধ্যে সতীর্থদের কানে কানে কথা বলেছেন। যেন প্রতিপক্ষকে আতশ কাচের নিচে ধরে পাঠোদ্ধার করছিলেন! সেই পাঠ শিখিয়ে দিচ্ছিলেন সতীর্থদেরও। প্রতিপক্ষকে মেপে নেওয়ার পরই সাঁড়াশি আক্রমণ চালান লিওনেল মেসি। ম্যাচের ৩৫তম মিনিটে বাকসো খুলে প্রথম জাদুটা দেখিয়ে দেন। ডি-বক্সের ভিতরে অস্ট্রেলিয়ার তিনজন ডিফেন্ডার আর গোলরক্ষক রায়ানকে সাক্ষী রেখে মাটি কামড়ানো শটে বল জালে জড়ান। মুহূর্তেই নীল সমুদ্রের গর্জনে হারিয়ে যায় সবকিছু। সেই গর্জন যেন থামবার নয়। থামবেই বা কেন? এরপর যে মেসির বাকসো থেকে একের পর এক জাদু বের হতেই থাকে! কখনো অস্ট্রেলিয়ার ডিফেন্স লাইন ধ্বংস করে ছুটে গিয়েছেন গোলমুখে। কখনো দৃষ্টিনন্দন ড্রিবলিং করেছেন মাঝমাঠে। সতীর্থদের বাড়িয়ে দিয়েছেন কৌশলী পাস। মেসির জাদু দেখে মুগ্ধ দর্শকের উত্তেজনা কেবল বাড়তেই থাকে। আর্জেন্টিনার হয়ে দ্বিতীয় গোলটা করেন জুলিয়ান আলভারেজ (৫৭)। এরপর এনজো ফার্নান্দেজের আত্মঘাতী গোলে অস্ট্রেলিয়া ব্যবধান কমালেও আর্জেন্টিনার জয় রুখতে পারেনি। লিওনেল মেসি গতকাল ক্যারিয়ারের হাজারতম ম্যাচ খেলতে নামেন। মাইলফলকের ম্যাচে ক্যারিয়ারের ৭৮৯তম গোল করলেন তিনি। আর্জেন্টিনার জার্সিতে ৯৪টি। মেসির গোল করা ম্যাচে আর্জেন্টিনা কেবল চারবার হেরেছে। ড্র করেছে ছয়বার। এর বাইরে মেসির গোল করা প্রতিটি ম্যাচেই জয় পেয়েছে আর্জেন্টিনা। গতকালও তা-ই হয়েছে। লিওনেল মেসির জাদুকরী ম্যাচে আর্জেন্টিনার সমর্থকরাও দারুণ সমর্থন জুগিয়েছেন। ‘ম্যারাডোনা আমাদের। মেসি আমাদের। এগিয়ে চলো আর্জেন্টিনা।’ স্প্যানিশ ভাষায় সুর করে এ শব্দযুগলের কোরাস গাইতে থাকে আর্জেন্টাইন সমর্থকরা। আর্জেন্টিনা থেকে আসা ফার্নান্দেজ স্প্যানিশ থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করে দিলেন। গতকাল স্টেডিয়ামের গ্যালারিজুড়ে ছিল অসংখ্য আকাশি রঙের পতাকা। সেই পতাকায় মেসি আর ম্যারাডোনার ছবি। পাশে স্প্যানিশ ভাষায় নানান উক্তি লেখা। ফার্নান্দেজ বলে দিলেন, এগুলো ছিল আর্জেন্টিনা দলকে অনুপ্রাণিত করার জন্য লেখা নানা বাক্য। কোথাও লেখা, এগিয়ে চলো আর্জেন্টিনা। কোথাও লেখা, গোল উপহার দাও মেসি। ম্যাচের আগের দিন আর্জেন্টাইন কোচ লিওনেল স্কালোনি মজা করেই বলেছিলেন, বিশ্বকাপে মনে হচ্ছে আমাদের রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সে খেলছি। সত্যিই দর্শকরা মিলে কাতারকে আর্জেন্টিনার হোম গ্রাউন্ড বানিয়ে দিয়েছে! ম্যাচ শেষ হয়েছে। আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা দর্শকদের সঙ্গে ম্যাচ জয়ের আনন্দ ভাগাভাগি করেছেন। লিওনেল মেসি ম্যাচসেরার পুরস্কার নিয়ে চলে গেছেন। সবুজ মাঠ পুরোই ফাঁকা। কিন্তু দর্শকদের যাওয়ার নাম নেই। নিরাপত্তারক্ষীদের বারবার নির্দেশনাও কাজে এলো না। তারা গ্যালারিতে সুর করে গাইতে লাগলেন। যেন এ মাঠই তাদের বাড়ি! আর্জেন্টিনা এগিয়ে চলো, মেসি এগিয়ে চলো। ভামোস আর্জেন্টিনা! ভামোস মেসি!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর