রবিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

প্রথম জনসভায় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রথম জনসভায় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত

আজ ১১ ডিসেম্বর। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি ঘটনাবহুল ও স্মরণীয় দিন। একদিকে চূড়ান্ত বিজয়ের পথে মুক্তিযোদ্ধারা, অন্যদিকে স্বাধীন বাংলাদেশের কোনো মুক্তাঞ্চলে প্রথমবারের মতো জনসভার আয়োজন করে আওয়ামী লীগ। যশোর শহরের টাউন হল মাঠে ওই জনসভায় প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের কথা জানান। এগুলো হলো- যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, ২৫ মার্চের আগের মালিককে সম্পত্তি ফেরত দান, সব নাগরিকের সম-অধিকার ও চারটি রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধকরণ। ওয়াশিংটন পোস্ট, ডেইলি টেলিগ্রাফ, নিউইয়র্ক টাইমসসহ বহু বিদেশি গণমাধ্যমের সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন জনসভায়। জনসভায় ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে গণহত্যাকারীদের বিচারের মুখোমুখি করবে। যারা শরণার্থী হিসেবে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন, তারা নিজ নিজ ঘরবাড়ি ফিরে পাবেন। আমরা চারটি রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দলগুলো হলো- জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ, পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টি ও নেজামে ইসলাম।’

জনসভায় প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ উপস্থিত জনতার উদ্দেশে হাত নেড়ে বলেন, ‘আর ধ্বংস নয়, যুদ্ধ নয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তোলাই এখন আমাদের মূল কাজ। আপনারা আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। অপরাধী যে-ই হোক তাকে আইনের হাতে তুলে দেবেন।’

আইনশৃঙ্খলার যেন কোনো অবনতি না হয় সে বিষয়ে যশোরের তৎকালীন ডিসি ওয়ালি উল ইসলাম ও কোতোয়ালি থানার ওসি কাঞ্চন ঘোষালকে নির্দেশনা দেন তাজউদ্দীন আহমদ। জনসভায় যোগ দিতে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে সাধারণ মানুষ টাউন হল মাঠে ভিড় করেন। ভারতে আশ্রয় নেওয়া বহু শরণার্থী সাইকেল চালিয়ে এসেছিলেন সেই জনসভায়। এদিন যশোর সার্কিট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও তাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘পাকিস্তান ২৪ বছরে সংবিধান রচনা করতে পারেনি। আমরা শিগগিরই সংবিধান রচনা করব।’

১১ ডিসেম্বর বেলা ৩টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়। এদিন প্রভাবশালী সংবাদপত্র সানডে টেলিগ্রাফে গভর্নর মালিকের আত্মসমর্পণের একটি প্রস্তাব প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়- প্রাদেশিক সরকারের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ডা. মালিক একটি প্রস্তাব ঢাকায় নিয়োজিত জাতিসংঘের প্রতিনিধির কাছে পেশ করেছেন। রাও ফরমান আলী গভর্নরের পক্ষে পাঁচটি শর্তে আত্মসমর্পণের কথা জানিয়েছেন। শর্তগুলো হলো- ১. পাকিস্তানি বাহিনী কেবল ভারতীয় বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করবে। ২. মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে কোনো লিখিত চুক্তি থাকবে না। ৩. যুদ্ধবন্দি ও ১ লাখ পাকিস্তানি নাগরিককে পাকিস্তানে ফিরে যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে। ৪. সব পাকিস্তানি সেনা যেন পাকিস্তানে ফিরে যেতে পারে সে বিষয়ে নিরাপত্তা দিতে হবে। ৫. ’৭০-এর নির্বাচনে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। কিন্তু ইয়াহিয়া খান জানামাত্র এ প্রস্তাব নাকচ করে দেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি পাকিস্তানকে সামরিক সহায়তা দেওয়ার অনুরোধ জানান।

মুক্তিযুদ্ধের এই দিনে জামালপুর, ময়মনসিংহ, গাইবান্ধা, চ-ীপুর, টাঙ্গাইল, কুষ্টিয়া, ফুলছড়িহাট, বাহাদুরাবাদ ঘাটসহ মুক্ত হয় অবরুদ্ধ বাংলাদেশের ১২টি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এদিন ভোর ৪টার দিকে আলবদরের অপারেশন ইনচার্জ চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ও চিফ এক্সিকিউটর আশরাফুজ্জামান খানের নির্দেশে পিপিআইর প্রধান প্রতিবেদক ও কলম্বিয়া ব্রডকাস্টিং সার্ভিসের প্রতিবেদক সৈয়দ নাজমুল হককে পুরানা পল্টনের বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় আলবদর বাহিনী। একই দিন ভোর ৬টার দিকে দৈনিক পূর্বদেশের প্রধান প্রতিবেদক এ এন এম গোলাম মুস্তাফাকে গোপীবাগের বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায় আলবদর বাহিনীর সশস্ত্র সদস্যরা।

সর্বশেষ খবর